Categories: traveling

Nan Madal - The Mysterious Rock Island

The Dhaka Times Desk নান মাদল বিশ্বের বহু প্রাচীন এক শহর। তবে এই প্রাচীন শহরটি অন্য সব প্রাচীন শহরগুলোর চেয়ে কিছুটা আলাদা। প্রশান্ত মহাসাগরের একটি প্রবাল প্রাচীরের উপর দিব্যি ভেসে আছে শহরটি। তাই শহরটি ‘প্যাসিফিকের ভেনিস’ বা ‘ভেনিস অব মাইক্রোনেশিয়া’ হিসেবেও বেশ পরিচিত। মাইক্রেনেশিয়ানদের পূর্ব পুরুষ একে ‘স্বর্গের প্রবাল’ নামেও অভিহিত করতেন।

প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে হাজারেরও বেশি দ্বীপ জড়ো হয়ে তৈরি হয়েছে বিশাল আকারের এক দ্বীপপুঞ্জ, যার নাম মাইক্রোশিয়া। সেই মাইক্রোশিয়া দ্বীপপুঞ্জের পনপেই নামের দ্বীপটির পূর্ব দিকে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে এক রহস্যময় দ্বীপ ‘নান মাদল’।


মানচিত্রে নান মাদলের অবস্থান;

নান মাদল নামের অর্থ মাঝখানের জায়গা। এই জায়গাটির চারদিকে এত খাল পরস্পরের সাথে যুক্ত রয়েছে যেন মনে হয় একটি খাল আরেকটির সাথে কাটাকুটি খেলেছে। সেজন্যই দ্বীপটির নাম নান মাদল রাখা হয়েছে বলে অনেক গবেষকই মনে করেন। দ্বীপগুলোর দৈর্ঘ্য এক মাইল এবং প্রস্থে আধ মাইলের মতো। লেগুনের মধ্যে অবস্থিত নান মাদলকে ঘিরে রয়েছে প্রায় একশোর মতো ছোট-বড় দ্বীপ। আবার এসব দ্বীপের বেশ কয়েকটি খালের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যুক্ত। তবে পুরো শহরটা কিন্তু চীনের প্রাচীর বা মিশরের পিরামিডের চেয়েও কয়েকগুন বড়। শহরটির চারদিকে রয়েছে দেড় কিলোমিটার লম্বা ও আধ কিলোমিটার চওড়া পাথরের প্রাচীর। এই পাথরগুলোই শহরটিকে রহস্যময় করে তুলেছে। নান মাদল শহরের একেকটি পাথরের ওজন পঞ্চাশ টনের কাছাকাছি, যেখানে পিরামিডের একটি পাথরের ওজন তিন টনের মতো। শহরে পাথরের তৈরি বেশ কয়েকটি নান্দনিক শিল্পকর্ম এখনও পর্যটকদের অভিভূত করে। এই বিস্ময়কর পাথরগুলো কীভাবে তৈরি হয়েছে, তা আজও রহস্যে ঘেরা। দ্বীপটির চতুর্দিক সমুদ্রবেষ্টিত। তাই সমুদ্রের মধ্যে ওরকম পাথরগাঁথা শহর বেশ অভাবনীয় এবং অকল্পনীয়ও বটে।

দ্বীপটির কাছাকাছি কোনো ধরনের খনিও নেই, যার থেকে ধারণা করা যেতে পারে যে, পাথরগুলো খনি থেকে এসেছে। তাই কেউ কেউ বলছেন, এই বিস্ময়কর পাথরগুলো হয়তো জলে ভেসে আসতে পারে। কিন্তু এত বড় আর ভারী পাথরগুলো জলে কীভাবে ভেসে আসতে পারে, তা-ও বিশ্বসযোগ্য নয়। স্থানীয় লোকজন ভাবেন, কোনো অলৌকিক শক্তি বা কালো জাদুর প্রভাবে কেউ পাথরগুলোকে এখানে নিয়ে এসেছে, আর তা না হলে মানুষের কোনো পূর্বসূরিরই কাজ এটি। পাথরের তৈরি এক বিশালকার স্তম্ভ দ্বীপটিকে করে তুলেছে আরও রহস্যময়। দেখতে মনে হবে যেন কোনো দৈত্য শহরটিকে পাহারা দিচ্ছে। এই পাথরের স্তম্ভটি দ্বীপের ১৬ মিটার উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিকের শত শত বছরের নিরলস চেষ্টায় এই অসাধারণ নির্মাণ কাজ পরিচালিত হয়েছে বলে পুরাতত্ত্ববিদগণ ধারণা করেন।

নান মাদল শহরের বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যবহৃত একেকটি পাথরের ওজন প্রায় পঞ্চাশ টন; Image Source: smithsonianmag.com
কীভাবেই বা এই সুবিশাল পাথরগুলোকে দ্বীপের এত উঁচু স্থানে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে তা নিয়েও রয়েছে গাঢ় রহস্য। কোনো কোনো পাথর প্রায় ২৫ ফুটের মতো উঁচু আর ১৭ ফুট চওড়া। ধারণা করা হয়, গাছের গুড়ির সাহায্যে এই ভারী পাথর দ্বীপের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

অনেক বিশেষজ্ঞই ধারণা করেন, নান মাদলে একসময়ে হাজার লোকের বাস ছিল। কিন্তু অনেকে এই বিষয়ে একমত নন। তাদের মতে, বেশি লোক এখানে কখনই ছিল না। বড় জোর শ’পাচেক লোক থাকতে পারে। তারাও পরবর্তীতে এই জায়গা ছেড়ে চলে যায়। এই সময় আশেপাশের ছোট ছোট দ্বীপগুলোতে তাদের আবাসস্থল গড়ে উঠেছিল। কিছু দ্বীপ ফসল উৎপাদনের জন্য কিংবা মৃত মানুষের কবর দেয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো। রাজপরিবারের কবরস্থান দ্বীপের মাঝখানে ২৬ ফুট উচু পাথরের দেয়াল দিয়ে ঘিরে রাখার ব্যবস্থাও ছিল।

কীভাবে এই দ্বীপ জনশূন্য হয়ে পড়লো তা নিয়েও গবেষকদের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। তবে বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং খাদ্যের অভাবই এই দ্বীপ ছেড়ে অধিবাসীদের অন্যত্র চলে যাওয়ার মূল কারণ বলে মনে করা হয়। কিন্তু সমুদ্রের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে কী করেই বা এখানে একটা সময় পর্যন্ত বেঁচে ছিল মানুষ, সেটা আরও বড় রহস্য। বেশ কিছুদিন পূর্বে পুরাতত্ত্ববিদগণ কিছু হাড়ের সন্ধান পেয়েছিলেন। কিন্তু এখানকার স্থানীয় মাইক্রোনেশীয়দের চেয়ে এই হাড়গুলো তুলনায় বেশ বড়। তাই এই হাড়গুলোই যে নান মাদলের প্রাচীন অধিবাসীদের সে ব্যাপারে গবেষকগণ একমত নন।

Related Posts

ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বাস করা হয়, ‘লেলুহ’ শহরটি যেসব মানুষের দ্বারা তৈরি হয়েছিল, তারাই পরবর্তীতে নান মাদল শহরটি নির্মাণ করেন। কিন্তু ধারণাটি সত্য নয়। কারণ, কার্বন টেস্টের মাধ্যমে পরবর্তীকালে জানা যায়, নানা মাদল লেলুহ শহরের চেয়েও অনেক পুরনো।
তবে কেউ কেউ বলেন, লোককথার হারিয়ে যাওয়া মহাদেশ ‘মু’ নাকি এখানেই ছিল। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যেটি হারিয়ে গিয়েছিল পৃথিবীর মানচিত্র থেকে। তবে নান মাদলই মু কি না, বিশেষজ্ঞগণ তা আজও প্রমাণ করতে পারেননি। তবে অনেক পুরাতাত্ত্বিক শহরটিকে পৌরাণিক শহর আটলান্টিস হিসেবেও উল্লেখ করে থাকেন।

অনেক গবেষক দ্বীপটিকে সাওদেলু রাজবংশের নিবাস হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল বলে ধারণা করেন। শহরটির রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতো সাওদেলু রাজ পরিবার। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, নানা মাদল ১২০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তৈরি হয়। পরে রেডিও কার্বন টেস্ট থেকে জানা যায়, আনুমানিক ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ শহরটির জন্ম। নান মাদলকে ঘিরে নানা কাহিনী ও কিংবদন্তী প্রচলিত রয়েছে। শহরের সুউচ্চ পাথরের তৈরি নানা নির্দশন নানা রকম কিংবদন্তীর জন্ম দিয়েছে। ডেভিড হাচার চাইল্ড্রেস এবং এরিচ ভন দানিকেনের মতো লেখকরাও এ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রচনা করেছেন অনবদ্য সব সাহিত্য। এরিচ ভন দানিকেন তার কল্পকাহিনী ‘এভিডেন্স অফ দ্য গডস’ এ নান মাদলের দ্বীপে প্লাটিনাম পাওয়া যায় বলে তথ্য দেন।

নান মাদল বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত এক নগরী। শহরটির ধ্বংসস্তুপ পরীক্ষা দেখা যায়, তা প্রায় ৯০০ বছরের পুরনো। ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরটিকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য মন্দিরের ভগ্নস্তুপ, প্রাচীন সমাধি এবং স্নানঘর, যেখানে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা ছিল। এখানকার পাথরের তৈরি বিভিন্ন স্থাপনার সাথে মায়া ও অ্যাজটেকদের তৈরি উপাসনা কেন্দ্রের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। উপাসনা কেন্দ্রটি দ্বীপ থেকে বেশ উঁচুতে নির্মাণ করা হয়েছে, যা বেশ অবাক করার মতো। এই উপাসনালয়ের মাঝের উঁচু পাথরের বেদি থেকে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করা হতো বলে ধারণা করা হয়। তখনকার নান মাদলের অধিবাসীরা ভালো ফসলের জন্য দেবতা ননিশন শাহপোর নিকট তাদের অপার ভক্তি ও সম্মান জানাতেন। এ স্থানে ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে ব্যবহৃত পবিত্র পানি ‘শকুও’ প্রস্তুতেরও ব্যবস্থা ছিল বলে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়।

নান মাদলের উপাসনা কেন্দ্র এবং রাজাদের নিবাসস্থল উনিশ শতকের দিকে পরিত্যক্ত হয় বলে অনুমান করা হয়। শহরটি পঞ্চদশ শতকের দিকে ঐশ্বর্যহীন হতে থাকে এবং উনিশ শতকের দিকে পুরোপুরি পরিত্যক্ত হয়। ১৯৮৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নান মাদলকে জাতীয় ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে। আর ইউনেস্কো নান মাদলকে বিশ্ব ঐতিহ্যের এক অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ঐতিহাসিক নান মাদল দেখতে তাই পর্যটকদের আগমন সারা বছরই লেগে থাকে।

This post was last modified on সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৮ 12:17 pm

Shahriar Siam

Recent Posts

আইফোনের বিক্রি ১০ শতাংশ কমে গিয়ে আয়ে বড় পতন অ্যাপলের

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিশ্বের খ্যাতিমান প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের স্মার্টফোন আইফোনের বিক্রি চলতি বছরের…

% days ago

Parimani is the mother of a daughter!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পরীমণি প্রথমবারের মতো তিনি পুত্র সন্তানের মা হন ২০২২ সালের…

% days ago

Israel will fight alone if US stops arms supply: Netanyahu

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ইসরায়েল রাফায় হামলা চালালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ…

% days ago

There are 3 differences hidden between the two pictures: can you find them?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বলা হয়েছে থাকে এই ধরনের ধাঁধার সমাধান করার অভ্যাস আমাদের…

% days ago

An incredibly beautiful natural scene

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শনিবার, ১১ মে ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১…

% days ago

Regular 8 hours of sleep and ink under the eyes! What is the reason?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নিয়মিত ৮ ঘণ্টা ঘুমিয়েও চোখের তলায় কালি পড়ছে! এর কারণ…

% days ago