Ishwardi representative ধানের অভাবে ঈশ্বরদীতে ৫ শতাধিক চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে রাজধানী ঢাকায় গত কয়েকদিনে চালের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৭ টাকা প্রতিকেজিতে।
উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম চালের মোকাম ঈশ্বরদীতে ১০-১৫ দিন যাবত চালের দাম বাড়ছে। ধানের হাটগুলোতে দাম বৃদ্ধি এবং হাটে ধান না পাওয়ার কারণে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে চাতাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। ধানের অভাবে ঈশ্বরদীর ৬শ চাতালের ৫ শতাধিক চাতাল ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। জয়নগর, রূপপুর, দাশুড়িয়া এলাকার বহু চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার চাতাল শ্রমিক। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে চাল ব্যবসায়ীরা অটোরাইস মিল মালিকদের বিপুল পরিমাণে মজুতকে দায়ী করেছেন। এরই প্রভাবে স্থানীয় পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও চাতাল মালিকরা।
জয়নগর চাতাল ও মোকাম এলাকা ঘুরে জানা যায়, ১৫ দিনে চালের দাম ৮৪ কেজি ওজনের প্রতি বস্তায় তিনশ’ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ পাইকারি বাজারেই কেজিতে ৩-৪ টাকা বেড়েছে। প্রতিদিনই দাম বাড়ছে।
নিয়ন্ত্রণহীন বাজার প্রসংগে ঈশ্বরদীর জয়নগরের চাতাল ব্যবসায়ীরা জানান, উত্তরাঞ্চলে হাটগুলোতে একদিকে যেমন ধানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে পাশাপাশি হাটে ধানের আমদানিও হঠাৎ করে কমে গেছে। ঈদের আগে চাতালগুলোতে ৮৪ কেজির প্রতি বস্তা মিনিকেট বিক্রি হয়েছে তিন হাজার টাকা। এই চালের দাম এখন ৩,৩০০ টাকা। এছাড়া বি আর-২৮ চাল ২,৬০০ টাকা থেকে বেড়ে ২,৯০০টাকা, বি আর-২৯ ২,৫০০ থেকে বেড়ে ২,৮০০টাকা, পারি ২,৪০০ থেকে ২,৬৫০ টাকা হয়েছে।
জয়নগরের ব্যবসায়ী রিংকু জানান, ধান সংকটের কয়েকটি কারণ রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের কারণে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ঈশ্বরদীর দু’টিসহ দেশের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের অটোরাইস মিলের মালিকরা মৌসুমের শুরু থেকেই বিপুল পরিমাণ ধান মজুদ করেছে। টাঙ্গাইল ও মুন্সিগঞ্জের কিছু জোতদার ও মহাজনেরা নতুন ধান ওঠার সাথে সাথে বিপুল ধান গুদামজাত করেছেন বলে তারা জানান। অটোরাইস মিলের মালিকরা প্রত্যেক হাট হতে বেশি দাম দিয়ে ধান কিনেই চলেছে বলে চাতাল মালিকরা জানান। জোতদার ও মহাজনেরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় অল্প অল্প করে চাল বাজারে ছাড়ছেন। আর একারণেই বাজারে চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। কয়েকেদিনের টানা বৃষ্টিও লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা মনে করেন। আগামীতে আরও চালের দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান ওই ব্যবসায়ী।
ঈশ্বরদী মোকাম থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১৮ টি জেলার চাল ব্যবসায়ীরা চাল কিনে থাকেন। ঈশ্বরদীর ৬ শতাধিক চাতালে প্রায় ২০ হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ করে। ধানের সংকটের পাশাপাশি দাম বৃদ্ধি, অবিরাম বৃষ্টি এবং ক্রেতা না থাকায় চাতালগুলোতে ধান সিদ্ধ ও ভাঙ্গানো বন্ধ রয়েছে। ফলে শ্রমিকরাও হয়ে পড়েছে বেকার। অতিরিক্ত দামে ধান কিনে চাল বানিয়ে যে দাম হচ্ছে সে দামে চাল বিক্রি করতে পারছে না চাতাল মালিকরা। আর তাই বাধ্য হয়ে চাতাল বন্ধ করে দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এ মতাবস্থায় সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, অতি মুনাফাখোর ধান আড়তদারদের কারসাজির কারণেই এহেন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ধানের এই কৃত্রিম সংকট দূর করতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীর মনে করছেন।