Categories: general

Fugu is a poisonous fish that is delicious to eat

The Dhaka Times Desk খেতে আসলেও সুস্বাদু অথচ এক বিষাক্ত প্রাণঘাতি মাছের নাম ফুগু। যদিও আমাদের দেশে এই মাছকে বলা হয় পটকা মাছ।

আমাদের দেশেও বহু মানুষ মারা গেছে এই পটকা বা ফুগু মাছ খেয়ে। আমরা মাঝে মধ্যেই পত্রিকায় সে সংবাদ দেখে থাকি। গ্রাম-গঞ্জের মানুষ না বুঝে এই কর্মটি করে ফেলে। তবে এই ফুগু মাছ নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত মাছ। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে সে তথ্যই দিয়েছেন।

এই ফুগু মাছ আসলে কি ধরনের

ফুগুর আন্তর্জাতিক নাম Puffer Fish. সামুদ্রিক মাছ ফুগু বা Puffer Fish হচ্ছে আমাদের দেশীয় পটকা মাছের একই বংশীয় আত্মীয়! ফুগুর যকৃত, চোখ আর নাড়ীভুঁড়িতে রয়েছে ভয়ঙ্কর বিষ টেট্রোডোটক্সিন (C11H17N3O8) বা TTX; যা পটাশিয়াম সায়ানাইডের চেয়েও এক হাজার গুণ বেশী বিষাক্ত। এখন পর্যন্ত এর কোন প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয় নি। আগুনে ঝলসালে বা সিদ্ধ করলেও এই বিষের প্রভাব সামান্যতম কমে না। মানুষকে মেরে ফেলার ভয়াবহ ক্ষমতার জন্য জাপানের ‘কানসাই’ এলাকার মানুষজন ফুগুকে ডাকে ‘টেপ্পো’ নামে। যার অর্থ-‘পিস্তল!’ একটি ফুগু মাছে যে পরিমান বিষ আছে তা দিয়ে ত্রিশ জন সুস্থ-সবল মানুষকে অনায়াসেই মেরে ফেলা সম্ভব! এমনই ভয়ংকর এই মাছ।

কোথায় বেশি পাওয়া যায় এই মাছ

এই মাছ জাপানে বেশি পাওয়া যায়। জাপানের নাম করা হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোতে এই মাছ পাওয়া যায়। জাপানিরা ফুগুর শরীর থেকে বিষ আলাদা করে বিষমুক্ত ফুগু খাওয়ার কায়দা শিখেছে। জাপানে সবচেয়ে দামী আর অভিজাত খাবার হচ্ছে ফুগু মাছের নানান পদ! প্রতি বছর জাপানিরা প্রায় ১০,০০০ টন ফুগু মাছ খায়। রেস্টুরেন্টে একজনের জন্য একটি ফুগু পদের দাম পড়বে ২,০০০ থেকে ৫,০০০ ইয়ান! অর্থাৎ প্রায় ২০ থেকে ৫০ ডলার। প্যাকেট করা ফুগু মাংসের দাম পড়বে কেজি প্রতি ১৩০-২৫০ ডলার! আর যদি ফুগু দিয়ে ৩ কোর্সের একটি ডিনার সারতে চান তো খরচ পড়বে জন প্রতি ১০০০ ডলারেরও বেশি।

বিষাক্ত মাছ কেনো জাপানে বৈধ

বিষাক্ত হওয়া সত্বেও কেনো এই মাছ জাপানের হোটেলগুলোতে বিক্রি হচ্ছে বা কিভাবে বিক্রি হচ্ছে তা অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে। জাপানে খোলা বাজারে আস্ত ফুগু বিক্রি নিষিদ্ধ। লাইসেন্সধারী বাবুর্চিরাই কেবল ফুগু কাটাকুটি আর রেস্টুরেন্টে রান্না করতে পারেন। সেই লাইসেন্স পেতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে দিতে হয় কঠিন সব পরীক্ষা। পরীক্ষা হয় দুই দিনব্যাপী। প্রথম দিনের লিখিত পরীক্ষায় যারা পাস করে তারা পরের দিন ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পায়। ব্যবহারিক পরীক্ষায় প্রত্যককে দেয়া হয় একটি ফুগু মাছ, একটি ছুরি আর দুটি ট্রে। সময় বিশ মিনিট। এ সময়ের মধ্যে ফুগু কেটেকুটে বিষাক্ত আর বিষমুক্ত অংশ আলাদা আলাদা ট্রেতে রাখতে হবে। সামান্য ভুল হলেই নিশ্চিত ফেল। এ ব্যাপারে নূন্যতম ছাড় দেয়া হয় না। যারা টিকে যাবে তাদেরকে ফুগুর একটি পদ তৈরি করে সুন্দর করে পরিবেশন করতে হবে। পরীক্ষার পরের অংশটা হলো– পরীক্ষার্থী যা রান্না করেছে তাকে তা খেতে হবে। সার্টিফিকেট প্রাপ্ত প্রত্যেককে দুই থেকে তিন বছর আরেকজন অভিজ্ঞ শেফের অধীনে শিক্ষানবীশ হয়ে থাকতে হয়। তারপর তাদেরকে মূল কাটাকুটি আর রান্নার দায়িত্ব দেয়া হয়। জাপানে ফুগু-শেফদের অনেক কদর। প্রতি বছর ৮০০-৯০০ জাপানি এ পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাস করে মাত্র ৩৫% থেকে ৬০% পরীক্ষার্থী। এই কঠোর ব্যবস্থা এবং নজরদারির ফলে ক্রেতারা আশ্বস্ত হওয়ায় ফুগু বিক্রি বেড়ে গেছে। জাপানের প্রতিটি শহরে শুধু ফুগুর রেসেপি করে এমন একাধিক সরকার অনুমোদিত রেস্টুরেন্ট রয়েছে। শুধু টোকিও শহরেই এরকম রেস্টুরেন্ট রয়েছে ৮০০ টি। এসব রেস্টুরেন্ট এবং বাণিজ্যিকভাবে ফুগো প্রক্রিয়াজাত করা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হাজার হাজার সার্টিফিকেটধারী ফুগু-শেফ কাজ করেন। শুধু ওসাকা শহরেই কাজ করেন ৮০,০০০ ফুগু-শেফ!

Related Posts

ফুগুকে বিষমুক্ত প্রক্রিয়া হয় যেভাবে

বিশেষ এক পদ্ধতিতে এই বিষাক্ত মাছ ফুগুকে বিষমুক্ত করে এর বর্জ্য প্রক্রিয়া করে জাপানীরা। রেস্টুরেন্ট আর ফুগু প্রক্রিয়াজাত করা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফুগুর বিষাক্ত অংশগুলো বিশেষ একটি পলিথিন ব্যাগে ভরে বেঁধে লকারে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। সারদিনে জমা হওয়া বিষাক্ত বর্জ্যগুলো একত্র করে পাঠানো হয় চুল্লিতে। সেখানে বর্জ্যগুলোকে তেজষ্ক্রিয় বর্জ্যের মত করে উচ্চ তাপমাত্রায় পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়ে থাকে।

কখন খাওয়া হয় এই ফুগু মাছ

বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় এই ফুগু মাছ খাওয়া হয় বেশি। তবে ফুগু সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয় শীতকালে – ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে। ফুগু বসন্তে ধরা হয়, শীতকাল পর্যন্ত রেস্টুরেন্টগুলোতে বড় ট্যাংকে জিইয়ে রাখা হয়। আর তাজা মাছ কেটেকুটে সারা বছরই পরিবেশন করা হয়। ফুগু সবচেয়ে বেশী খাওয়া হয় কাঁচা অবস্থায়। ফুগুর মাংস অনেক পাতলা প্রায় স্বচ্ছ করে ছোট ছোট পিস করে কাটা হয়। এমন পাতলা ভাবে কাটতে হবে যেন প্লেটের নকশা পর্যন্ত দেখা যায়। তারপর নানান রকম ফিশ সস, সয়াসস, চিলি সস, বিশেষ সবজির সালাদ ও জাপানী ঐতিহ্যবাহী মদ সহযোগে কাঁচা খাওয়া হয়। এই পদের নাম sashimi. এটিই ফুগুর সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ। কাঁটা তোলা চামড়া সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়। এই পদের নাম Yubiki. ফুগুর পাখনা ও লেজ ভালো করে শুকিয়ে ছাতু করে তৈরি করা হয় Hire-Zake নামের আরেক পদ। এছারাও স্যুপ করে, কাবাব বানিয়ে বা সবজির সাথে রান্না করেও ফুগু খাওয়া হয়ে থাকে।

ফুগুর স্বাদ কেমন

এতো বিষাক্ত একটি মাছ, তারপরও কেনো এতো যত্ন-আত্মি করে খাওয়া হয় সেটি চিন্তা করলে মাথা ঘুরে যায়। এই ফুগু মাছ আসলে এতো বিষাক্ত একটা মাছ হলেও এটি অত্যন্ত সুস্বাদু। আর তাই এতো কষ্ট করে এর বিষমুক্ত করে খাওয়ার যোগ্য করা হয়। ‘আহামরি কিছু না! আঁশ নেই, আঠালো জেলির মত। স্বাদে হালকা। স্বাদটা অনেকটা মুরগীর বাচ্চার মত, সামুদ্রিক নোনতা স্বাদযুক্ত।’ কিন্তু, এই ফুগুর মাংশ খেয়েই তৃপ্তিতে জাপানিরা প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার কষ্ট পর্যন্ত ভুলে যেতে পারে। এই মাছ যারা খেয়েছেন অন্তত তারা এমন মন্তব্যই করেছেন। তার অর্থ দাঁড়ায় ফুগু অত্যন্ত সুস্বাদু একটি মাছ। তবে সাবধান! বাংলাদেশের নাগরিকরা তাই বলে বিষমুক্ত না করে এই মাছ খাওয়ার সাহস দেখাবেন না। কারণ চরমতম স্বাদ নিতে গিয়ে নিজের জীবনটা বিষাক্ত করে তোলার কোন যুক্তি নাই। তথ্যসূত্র: http://www.priyo.com

This post was last modified on অক্টোবর ১৩, ২০১৩ 10:47 am

Staff reporter

Recent Posts

কোমল ত্বকের রহস্য লুকিয়ে রয়েছে যে ফেসপ্যাকে

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শীতকালে চামড়ায় টান ধরা নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে সমস্যা…

% days ago

পড়ে গেলেও ভাঙবে না এমন এক স্মার্টফোন!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অসতর্কতাবশত: হাত থেকে পড়ে গেলেও ফোনের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার…

% days ago

ওজন কমাতে তাড়াহুড়ো করলেই ঘটতে পারে বিপদ

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ওজন কমাতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করা যাবে না, কারণ তাড়াহুড়া করলেই…

% days ago

এবার আইস্ক্রিনে আসছে শাকিবের ‘দরদ’

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দেশের অন্যতম ওটিটি প্লাটফর্ম আইস্ক্রিনে স্ট্রিমিং হতে চলেছে সুপারস্টার শাকিব…

% days ago

পদত্যাগপত্রে যা লিখেছেন টিউলিপ সিদ্দিক

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠের কাছ থেকে ফ্ল্যাট উপহার নেওয়া, সাংবাদিককে হুমকি…

% days ago

কিছুতেই ঘুম ভাঙছে না ‘অলস’ সন্তান! ছানাকে জাগিয়ে তুলতে অভিনব পন্থা নিলো মা-হাতি!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ হাতিশালের মধ্যে ঘুমোচ্ছে পুচকে একটি বাচ্চা হাতি। শাবকের ঘুম ভাঙাতে…

% days ago