The Dhaka Times Desk হরতালের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে হু হু করে। চাল মাছ ও সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় জনমনে নাভিশ্বাস বাড়ছে।
বর্তমান চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা বিশেষ করে হরতালের বিরূপ প্রভাব পড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বাজারে। লাগামহীনভাবে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম। ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষের।
পণ্য সামগ্রী দাম বাড়ার কারণ হিসেবে জানা যায়, হরতালের কারণে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হয়। বন্দর থেকে ঠিকমত পণ্য খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না। চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক পণ্য আটকে আছে হরতালের কারণে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পণ্য সরবরাহে বিপর্যয় নেমে আসবে।
রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সবজি ও মাছসহ বিভিন্ন কাঁচাপণ্যের দাম বেড়েছে অত্যধিক। চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক তথ্য মতে, হরতালের কারণে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। অক্টোবর মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। পরিসংসখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক গোলাম মোস্তফা কামাল গতকাল এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মূলত হরতালের প্রভাবেই সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে খাদ্যমূল্য বেড়েছে। যদি রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি না হয় তাহলে চাল-ডালসহ অন্যান্য খাদ্য পণ্যের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে।
বর্তমানে বাজারে ৩০ টাকা কেজির নিচে কোন সবজি নেই। বাজারভেদে ঢেঁড়স ও বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। করলা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, মূলা ৩০ থেকে ৩২ টাকা। এছাড়া অন্যান্য সবজির মধ্যে পটল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা। শিম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি আকারভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে ফুল কপি কোন রকম ফুল ফুটা অবস্থায় বাজারে চলে এসেছে। এক সপ্তাহ আগে যে আলু প্রতিকেজির দাম ছিল ১৫ থেকে ১৬ টাকা। সেই আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে। এ অবস্থা বাজারের প্রায় পণ্যের ক্ষেত্রেই।
রাজধানীর ভাষাণটেক এলাকার ব্যবসায়ী কবির হোসেন জানান, সোয়াবিন তেলসহ অনেক পণ্যের দাম হরতালের পর থেকে বাড়া শুরু করেছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অনেক পণ্যবাহী গাড়ি এখন হরতালের কারণে আসতে পারছে না। আর সরবরাহ না থাকলে জিনিসের দাম এমনিতেই বেড়ে যায়। তাছাড়া অনেক কোম্পানি পণ্য সরবরাহ নেই বলেও দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমন অবস্থায় দেশের সাধারণ মানুষ দিশেহারা। সামনের দিনগুলোতে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কি অবস্থা দাঁড়াবে তা নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত।
এমনিতেই পেঁয়াজের দাম আকাশ ছোঁয়া। তারপর হরতালের কারণে পেঁয়াজের দাম আরও বেড়েছে। পাশাপাশি দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচের। গতকাল বাজারে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। এছাড়া প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ১১০ টাকা ও আমদানিকৃত বিদেশি পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। সবজির দাম বেড়েছে গত কয়েকদিনে। আবার হরতালের কারণে সবজির পাশাপাশি মাছের দামও বেড়েছে।
চালের দামও বেড়েছে হরতালের কারণে। গতকাল খুচরা বাজারে নাজিরশাইল/মিনিকেট ৩৮ থেকে ৫৬ টাকা, পাইজাম/লতা ৩৮ থেকে ৪২ টাকা ও মোটা চাল স্বর্ণা ৩৪ থেকে ৩৬ বা ৩৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। যা সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি। হরতালে পরিবহন সংকটে চালের দাম কিছুটা বাড়তি এমনটা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজারে মাছের দাম
# কাতল ও রুই ২২০ থেকে ৩০০ টাকা
# কৈ ১৪০ থেকে ১৯০ টাকা
# শিং ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা
# পাঙ্গাস ১২০ থেকে ১৬০ টাকা
# তেলাপিয়া ১২০ থেকে ১৫০ টাকা
# বড় আকারের মাগুর ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা
# ৭শ’ থেকে ৮শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭শ’ থেকে ৭শ’ ৫০ টাকা
# ব্রয়লা মুরগি ১১৫ থেকে ১৩০ টাকা কেজি
# ডিমের হালি ২৮ টাকা
এমনিভাবে হরতালের কারণে দেশের প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে। স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য আজ বড় কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি। কবে এ পরিস্থিতির হাত থেকে জনগণ রেহাই পাবে তার কোন কূল-কিনারা নেই।