The Dhaka Times Desk কল্পনাকে আমরা মানব জাতির একটি উচ্চাকাঙ্খা হিসেবে দেখে থাকি। কল্পনাপ্রসূত স্বপ্ন আমাদের অনেকেরই রয়েছে। কিন্তু শুধু কল্পনা নয়, কল্পবিজ্ঞানের বাস্তব এক শহরের কাহিনী রয়েছে আজকের চিত্র-বিচিত্র বিভাগে।
কল্পিত বিজ্ঞান নগরীর স্বপ্ন আমাদের অনেকের মধ্যেই বিদ্যমান। ধরা যাক, আপনি বাড়িতে ঢোকার সময় আপনার মোবাইল ফোন থেকে একটা বাটন টিপে দিলেন। আর অমনি আপনার বাড়ির দরজা খুলে গেল। কোনো ঝামেলা ছাড়া, ডোরবেল বাজানোর প্রয়োজন পড়লো না। কিংবা দরজায় কড়া-নাড়া ছাড়াই আপনি ঢুকে পড়লেন নিজের বাড়িতে। আবার এমন হলো, সোফার ওপর গা এলিয়ে দিয়ে টিভির রিমোর্ট খুঁজতে হল না। আপনি মনে মনে চাইলেন আর অমনি টিভিটা চালু হয়ে গেলো। টিভিটা আবার শুধু যে ঘরের পাশ দেয়ালে সেট করা, তা নয়। আবার ঘাড় না ঘুরিয়ে ঘরের সিলিঙে তাকিয়েও আপনি টিভি দেখতে পারছেন। এরপর আবার খানিকবাদে আপনার আরো একটা ইচ্ছে এমনিতেই পূর্ণ হল। ট্রে ভর্তি নাস্তা আর বিকেলের চা চলে এলো আপনার সামনে না চাইতেই! চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবছেন, আহ! জীবনটা এতো সহজ ও এতো মধুর হতে পারে!
এমন সহজ আর মধুর জীবন যাপন করা কি খুব কঠিন কাজ? আর আমরাও এমন মধুর জীবন সকলেই কম-বেশি চেয়ে থাকি। বিশ্ব যেভাবে বিজ্ঞান আর উদ্ভাবনে উন্নত হচ্ছে, তাতে এমন জীবন ভোগ করতে বেশি দেরি নেই। ইতিমধ্যেই দুনিয়ার কিছু কিছু শহরে শুরুও হয়ে গেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার শহর সংডোর কথাই রয়েছে আজকের কাহিনীতে। প্রযুক্তির দিক দিয়ে দুনিয়ার অনেক নামি দামি শহরই হয়ে উঠেছে কল্পবিজ্ঞানের শহরের মতোই। এদের সবাইকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে আছে সংডো শহরটি। কিন্তু এই শহর খুব একটা বিখ্যাত নয়। বলতে গেলে এখনও অখ্যাত। এই অখ্যাত শহরই প্রযুক্তির কল্যাণে দুনিয়াজুড়ে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। পৃথিবীর অন্যতম হাইটেক ক্যাপিটালও বলা হচ্ছে শহরটিকে।
এমনিতে কোরিয়ার অন্যান্য শহরগুলোও বেশ উন্নত। সিউলের মাটির তলার রেলওয়েতেও রয়েছে দ্রুতগতির ওয়াই-ফাই ব্যবহারের সুবিধা যেখানে সবাই অনায়াসে ব্যবহার করতে পারেন ইন্টারনেট। রাস্তায় হাঁটার সময়েও দ্রুত ইমেইল পাঠানোর সুবিধা রয়েছে। এমনকি ভিডিও দেখার সুযোগও রয়েছে। রেলস্টেশন থেকে বের হবার সময় আশপাশের বাসের সব সময়সূচিও দেখে নেয়া যায় ইলেকট্রনিক প্যানেলের মাধ্যমে। আর স্যামসাং এর মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের জীবনযাত্রাকে আরো সহজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নিরন্ত্রর। বাড়ি কিংবা অফিস-আদালতের যন্ত্রপাতিগুলোকে মোবাইলের সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়তই। প্রশ্ন আসতে পারে, সিউলের মতো এমন উন্নত শহর থাকতে আবার সংডোর মতো আলাদা শহরের দরকারটা কী? প্রযুক্তিগত উন্নত একটা শহর মানেই হচ্ছে কল্পবিজ্ঞান জাতীয় যন্ত্র তৈরির সুযোগ ছাড়া আর কিছু নয়।
কি কি আছে এখানে
সংডো শহরটিতে আছে তাপমাত্রা, শক্তির ব্যবহার এবং রাস্তাঘাটের ট্র্যাফিক মাপার সেন্সর। এগুলো নাগরিকদের নিমিষেই সতর্ক করে দিবে বিভিন্ন বিষয়ে। যেমন: বাস আসতে দেরি করছে কিনা। আর দেরি করলে কেন দেরি করছে ইত্যাদি। অথবা স্থানীয় প্রশাসনকেও এটি যে কোনো সমস্যা সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে দিতে পারবে অতি সহজে।
এসব প্রযুক্তির অনেকগুলোই রাখা হয়েছে পরিবেশের কথা মাথায় রেখেই। যেমন ইলেকট্রিক গাড়ির রিচার্জ স্টেশন এবং পানি শোধনাগার সবই রয়েছে। শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও ব্যতিক্রম। অনেক খুঁজেও শহরের রাস্তাঘাটে ময়লার গাড়ি আপনি পাবেন না। প্রতিটি বাড়ির রান্নাঘর থেকে আলাদাভাবে ময়লা টেনে নেয়া হয় মাটির তলার টানেল দিয়ে। অটোমটিকলি সেগুলো গিয়ে জমা হয় একটি প্রোসেসিং সেন্টারে।
আবার এইসব বর্জ্য দিয়েও শক্তি উৎপাদন করার ব্যবস্থা করা হবে শহরের উন্নয়নে। তবে সংডোর অনেক প্রযুক্তি এখনও রয়েছে পরিকল্পনা হিসেবেই-বাস্তবে শুরু হয়নি। কারণ হিসেবে জানা যায়, শহরটি এখনও নাগরিকদের ততটা টানতে পারেনি। এর কারণ সম্ভবত খরচ। এমন একটি পরিচ্ছন্ন শহরে বাস করতে গেলে খরচটা তুলনামূলকভাবে একটু বেশি পড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবুও অনেকেই যাচ্ছেন সংডো শহরে বসবাসের জন্য। এই শহরটি গড়েও উঠছে একটি পার্ককে কেন্দ্র করে। শহরের নকশা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, প্রতিটি নাগরিক পার্কের ভেতর দিয়ে হেঁটেই অফিসে আসা-যাওয়া করতে পারবেন। আবার দুপুরের খাবারের সময়ও তারা পার্কে চলে আসেন- সুন্দর পরিবেশের কারণে। কল্পবিজ্ঞানের মতো এমন শহর কল্পনাবিলাসী মানুষকে বিমোহিত করবে এটাই স্বাভাবিক। আপনিও ইচ্ছে করলে এমন একটি শহরে বসবাস করতে যেতে পারেন বা আপনার শহরও এমনভাবে গড়ে তোলার পরিকল্পতা করতে পারেন। তাতে নিজে যদি বসবাস নাও করতে পারেন- তাও আপনার ভবিষ্যত প্রজন্ম হয়তো এমন সুন্দর শহরে শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন। সূত্র: দৈনিক যুগান্তর