The Dhaka Times Desk হাজার হাজার মুসলমান মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের রাজধানী বাঙ্গুই থেকে পালিয়ে গেছে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা খ্রিষ্টানদের দল তাদেরকে বিদ্রূপ করতে থাকে।
এমন কি এক লোক ট্রাক থেকে পড়ে গেলে নির্যাতন করে তাকে মেরে ফেলা হয়। তার লাশ বিকৃত করে পলায়নরত মুসলমানদের দেখান হয়।
গত শুক্রবার ৫০০’র কাছাকাছি সংখ্যক কার, ট্রাক এবং মোটর সাইকেলে মুসলমানেরা বাঙ্গুই ছাড়ে। এই সময় পাশের মুসলিম দেশ শাদের সৈন্যরা ভারি ভারি অস্ত্রসজ্জিত হয়ে তাদের পাহারায় ছিল।
গত দুই মাস ধরে মুসলমানদের ওপর হত্যাকাণ্ড চলছিল। এর প্রেক্ষিতে তারা নগরীর বাড়িঘর ফেলে জান বাঁচাতে একযোগে পালিয়ে গেল। দেশী-বিদেশী সাংবাদিকেরা এ পলায়নের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছে। মুসলমানদের নেওয়ার জন্য আসা ট্রাকগুলোও ভাংচুর করা হয়। যাত্রীরা লাফিয়ে পড়লে খ্রিষ্টান হামলাকারীরা বিদ্রুপ করতে থাকে। অনেকে আবার পাথর ছুড়ে মারে।
ওসমান বেনুই নামের এক মহিলা বলেন, খ্রিষ্টানরা বলছে, মুসলমানরা যেখান থেকে এসেছিল তাদের সেখানেই চলে যেতে হবে। তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি। কোনোভাবেই এখানে থাকা সম্ভব নয়। কারণ এখানে আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই।
মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ খ্রিষ্টান হলেও দেশটিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মুসলমান রয়েছে। যাদের বেশির ভাগই দেশটির শাদ ও সুদান সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলগুলোতে বসবাস করে। বাঙ্গুইয়ে মুসলিমেরা শত শত বছর ধরে বসবাস করছিল।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিনিধি পিটার বুকায়ের্ট বাঙ্গুই’র পরিস্থিতি বর্ননা করতে গিয়ে বলেন, এটি সত্যিই ভয়াবহ।
মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলো একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। সেখানকার সব অধিবাসী পালিয়ে গেছে কিংবা গণহত্যার শিকার হয়েছে। তাদের বাসাগুলো এমন ভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে যেন এর অস্তিত্ব কখনও ছিলই না। এছাড়া মসজিদেও আগুন দেয়া হয়।
আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্টের একজন কৌঁসুলি মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বা সম্ভাব্য অপরাধের প্রাথমিক তদন্ত শুরুর ঘোষণার পর মুসলমানদের এ পলায়নের ঘটনা ঘটল।
সেলেকা নামে পরিচিত দেশটির উত্তরাঞ্চলের মুসলিম বিদ্রোহীদের একটি জোট গত বছর মার্চে এক দশক ধরে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কোয়িজ বোজিজকে উৎখাত করে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষোভ এর কারণ। তবে ধর্মীয় কোনো কারণ ছিল না। তারা শাদ ও সুদানের ভাড়াটিয়াদের সহায়তা গ্রহণ করে। রাজধানীতে লুটপাট-হত্যা ও ধর্ষণের মতো কর্মকাণ্ড চালালে খ্রিষ্টানরা তাদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়।
কয়েক মাস পর এর প্রতিশোধ গ্রহণ শুরু করে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের অনুগত অ্যান্টি-বালাকা নামের খ্রিষ্টান বিদ্রোহীরা। গত ডিসেম্বরে তারা মুসলিম বিদ্রোহীদের সমর্থিত সরকারকে উৎখাত করতে নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ড চালায়। কয়েক দিনের মধ্যে এক হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়। প্রধানত মুসলমানদের লক্ষ্য করেই এসব হামলা ও হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।
গত মার্চে ক্ষমতাগ্রহণকারী মুসলিম বিদ্রোহীদের নেতা ক্ষমতা ছেড়ে দেন। এরপর অন্তরবর্তী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন বাঙ্গুইর সাবেক মেয়র ক্যাথেরিন সাম্বা-পাঞ্জা । কিন্তু এরপরও দেশটিতে মুসলমানদের ওপর হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।
Source: cbsnews