দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আজ আপনাদের জন্য এমন একজন ব্যক্তির জীবনী তুলে ধরেছি যার জীবনী পড়লে আপনি শিখতে পারবেন হাজারো ব্যর্থতার মাঝেও কিভাবে সফলতা অর্জন করতে হয়।
১৯৬৪ সালে চীনের হাংজুতে এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জ্যাক মা। তার বাবা-মা গান গেয়ে মানুষকে আনন্দ দিয়ে জীবন ধারণ করতেন। জ্যাক মা শৈশব থেকেই ইংরেজী শেখার জন্য সবসময়ই চীনে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সাথে সাথে থাকার চেষ্টা করতেন। এছাড়া, নিজের একটি রেডিও কেনেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল রেডিওতে নিয়মিত ইংরেজী শোনা।
ইংরেজী ভালো শিখতে পারলেও গণিতে বারবার ফেল করতেন তিনি। গণিতে জ্যাকের বাজে দশার কারণে কলেজ ভর্তি পরীক্ষায়ও দুইবার ফেল করেছেন। তবে তৃতীয়বারের মতো ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে টিকে যান জ্যাক মা। এবার তিনি হাংজু টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভর্তি হন।
পড়াশুনা শেষে চাকরি পাচ্ছিলেন না জ্যাক মা। এমনকি তিনি একটি রেস্টুরেন্টে ম্যানাজারের চাকরির জন্যও আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাও হয়নি। শেষ পর্যন্ত তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী পড়ানোর চাকরী পান। মাসে ১২ ডলার বেতন পেতেন জ্যাক। তিনি বলেন, “ শৈশবে আমি কৌতুহলী ছিলাম, কিন্তু কখনই ভীত ছিলাম না। আমার প্রতিদ্বন্দ্বিরা সব সময়ই আমার চাইতে শক্তিশালী ছিল। কিন্তু আমি ভেবেছি আর লড়াই করেছি।”
জ্যাক মান্দারিন ভাষাভাষি চীনা ব্যবসায়ীদের সহায়তা করার জন্য একটি অনুবাদ কেন্দ্র খুলেছিলেন। ১৯৯৫ সালে একটি চীনা প্রতিষ্ঠানের অনুবাদক হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করার সুযোগ পান। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে পরিচিত হন ইন্টারনেট প্রযুক্তির সাথে। জ্যাক মা জানতে পারেন, সবকিছুই জানা যায় ইন্টারনেট থেকে। জ্যাক নেটে বিয়ার সম্পর্কে তথ্য জানতে সার্চ করলেন। তিনি দেখলেন, ইন্টারনেটে কোন তথ্যই চাইনিজ ভাষাভাষিদের জন্য নাই। এমনকি চীন নিয়ে কোন তথ্যই নাই!
দেশে ফিরে জ্যাক নতুন একটি কোম্পানি খুলে বসলেন। তিনি চায়না পেইজ নামের একটি ওয়েবসাইট চালু করেন এবং সেখানে রপ্তানিমুখী চীনা কোম্পানিগুলোর তথ্য প্রকাশ করতে শুরু করলেন। জ্যাক মার ওই ওয়েবসাইটটিকে বলা হয় চীনের প্রথম ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন সমস্যার কারণে ওই ওয়েবসাইটটি ব্যবসায় করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। এর চার বছর পর জ্যাক তাঁর বন্ধুদের কাছ থেকে ৬০ হাজার ডলার ধার নিয়ে আলিবাবা ডটকম নামে একটি বি-টু-বি প্ল্যাটফর্ম চালু করেন। এই ওয়েবসাইটে চীনের রপ্তানিকারকরা তাদের পণ্যের তালিকা দিতে পারবে যেখান থেকে বিদেশী ক্রেতারা এসব রপ্তানিকারকদের কাছে থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারবে। জ্যাক মা আলিবাবা নামের নতুন একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানিটিই বর্তমান বিশ্বে ই-কর্মাসের সফলতার দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এক বছরের মধ্যেই জ্যাক মা-এর এই উদ্যোগে গোল্ডম্যান সেকস ও সফটব্যাংক মোট ২৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে। আলিবাবার মোট সম্পদের পরিমাণ ১৬০ বিলিয়ন ডলারে দাড়িয়েছে। এই বাণিজ্যের ওপর ভিত্তি করেই জ্যাক চীনের সবচেয়ে বড় ধনী হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
আলিবাব্র ১২ ভাগ শেয়ার বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। এই শেয়ারের মোট মূল্যমান ২০ বিলিয়ন ডলার।
কিভাবে বর্তমান ই-কমার্স বাণিজ্যে সফল হতে হবে তার বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত জ্যাক মা। এত সফলতার পরও জ্যাক মা এখনও কোডিং বা ওয়েব সাইট ডিজাইনের ভাষা জানেন না। জ্যাকের এই পরিস্থিতি বদলে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে। চীন রপ্তানী বাণিজ্যে খুব ভালো করতে শুরু করে। ইন্টারনেট ও তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কে খুব বেশি কিছু না জানলেও কিভাবে ই-কমার্স বাণিজ্যের গুরু হয়ে উঠলেন জ্যাক মা? এই প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছেন তার শুরুর দিকের এক সহকর্মী পোর্টার এরিস ম্যান। এরিস ম্যান বলেন, জ্যাক খুব ভালো বক্তা। ও নিজের স্বপ্নগুলো সকলের মধ্যে খুব সহজেই ছড়িয়ে দিতে পারে। জ্যাক আমাদেরকে সবসময় বলতো, “আমরা সবাই তরুণ এবং কখনই নিজেরা লড়াই থেকে সটকে পড়ব না।”
জ্যাক মা, নিজের সংগঠনের সহকর্মীদেরকে আনন্দেও রাখতেও পটু। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, তিনি সুযোগ পেলেই নিজের সহকর্মীদের মুখে হাসি ফুটাতে তৎপর থাকেন। আলিবাবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জ্যাক মা প্রতিবছর স্থানীয় একটি স্টেডিয়ামে ট্যালেন্ট শো নামের জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ওই অনুষ্ঠানে আলিবাবা-এর কর্মীরা সর্বোচ্চ আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন। প্রতিষ্ঠানের কাজকে সহজতর করার জন্য ২০০০ সালে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন জ্যাক মা। এরপর তিনি আলিবাবার চেয়ারম্যান হন। এ প্রসঙ্গে জ্যাক বলেন, “একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হওয়ার চেয়ে একজন ভালো চেয়ারম্যান হওয়াতে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ আছে।”
তবে জ্যাক মা-এর সফলতার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ অরা হচ্ছে, মানুষের সমস্যা সমাধানের প্রতি তার আগ্রহকে। তিনি চীনের ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছিলেন। আর এই উদ্দেশ্য সফল করার মাধ্যম হয়েছে তথ্য প্রযুক্তি। এছাড়া, জ্যাক মা-এর মতো সফল উদ্যোক্তা হতে কি যোগ্যতা প্রয়োজন তা অনুধাবন করা যায়, তার লেখা একটি চিঠি থেকে। চিঠিটি জ্যাম মা লিখেছিলেন তার কর্মীদেরকে উদ্দেশ্য করে। তিনি চিঠিটিতে উল্লেখ করেন-
“কঠোর পরিশ্রম কিংবা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হওয়ার কারণে আমরা সফল হইনি। আমরা পেরেছি গ্রাহকদেরকে সবচেয়ে বেশ গুরুত্ব দেওয়ার কারণে। আর আমরা নিজেদের শক্তি-সামর্থ্যকে সম্মান জানাতে পেরেছি। আমরা বিশ্বাস করেছি যে, সাধারণ মানুষই অসাধারণ নানান কাজ করতে পারে।”