দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মেহেরপুর জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের খুলনা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। মুক্তিযুদ্ধের সময় মেহেরপুরে পাকিস্তান বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সংঘটিত বেশ কিছু প্রাথমিক যুদ্ধের সাক্ষী। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের সর্বপ্রথম কমান্ড, দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ড গঠিত হয়েছিল। পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর আম্রকাননে শপথ গ্রহণ করে অস্থায়ী সরকার গঠন করে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনীর মধ্যে মেহেরপুরে সম্মুখ যুদ্ধের কথা নথিভুক্ত আছে। ।
২৬শে ফেব্রুয়ারী,১৯৮৪ সালে কুষ্টিয়া থেকে পৃথক করে মেহেরপুরকে স্বতন্ত্র জেলার মর্যাদা দেয়া হয়।
মেহেরপুর বাংলাদেশের ছোট একটি জেলা। এই জেলাটি অত্যান্ত গোছালো ও সুন্দর। মেহেরপুর পৌরসভাটি কয়েকবার বাংলাদেশ এর আদর্শ পৌরসভা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। তাছাড়া মেহেরপুর শরহটির খুবই ভালো লাগার একটি দিক হলো রাস্তাঘাট অনেক পরিষ্কার, এখানে মেইন শহরটি প্রতিদিন সকালে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। তাছাড়াও মেহেরপুরে রয়েছে অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থান,খাবার ইত্যাদি।
মেহেরপুরের চিত্তাকর্ষক স্থানঃ
- মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ
- আমঝুপি নীলকুঠি
- মেহেরপুর শহীদ স্মৃতিসৌধ
- আমদহ গ্রামের স্থাপত্য নিদর্শন
- সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির
- ভাটপাড়া নীলকুঠি
- ভবানন্দপুর মন্দির
- কালাচাঁদপুর শাাহ ভালাই এর দরগা
- বল্লভপুর চার্চ
- ভবরপাড়া রোমান ক্যাথলিক চার্চ
- নায়েব বাড়ি মন্দির
- স্বামী নিগমানন্দ সারস্বত আশ্রম
– মুজিবনগর (ইংরেজি: Mujibnagar) মেহেরপুর জেলায় অবস্থিত এটি একটি ঐতিহাসিত স্থান । বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের রাজধানী ছিল এখানে। এখানেই তৎকালীন বৈদ্যনাথতলা বর্তমান মুজিবনগরের আম্রকাননে ১৭ এপ্রিল সরকারের মন্ত্রী পরিষদ শপথ নিয়েছিল। বাংলাদেশের প্রথম রাজধানীর ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স।
– মেহেরপুর জেলায় অবস্থিত তৎকালীন ইংরেজ নীলকুঠি ও বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।[১] এটি মেহেরপুর জেলা থেকে ৬ কিলোমিটার পূর্বে আমঝুপি নামক গ্রামে অবস্থিত। এর পাশেই রয়েছে কাজলা নদী। উপমহাদেশে নীলচাষের অবসানের পর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯৭২ সালে এটি প্রথম সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এই প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনটি তৈরির শুরুর দিকে নীলকুঠি হিসেবে ব্যবহার করলেও ক্রমেই এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। ইতিহাসবিদদের মতে, এই নীলকুঠিটি খুব সম্ভবত ১৮০০-এর দশকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
আরও কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছেঃ
মেহেরপুরের দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী বাসুদেবের মিষ্টিঃ
একসময় মেহেরপুরের ব্রিটিশ কর্মচারী ও জমিদারদের রসনাকে তৃপ্ত করত ‘সাবিত্রী’ ও ‘রসকদম্ব’ নামের দুই মিষ্টি। এর পর অতিক্রান্ত হয়েছে দেড়শ বছরেরও বেশি সময়। কিন্তু এর স্বাদে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এখনো একইভাবে সমান জনপ্রিয় মেহেরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাসুদেবের এ মিষ্টি।
জানা যায়, ১৮৬১ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে মেহেরপুরের বাসিন্দা বাসুদেব সাহা এ মিষ্টি উদ্ভাবন করেন। অবিভক্ত ভারতের নদীয়া জেলার পাঁচ মহকুমার মধ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক নগরী ছিল মেহেরপুর। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো নদীয়া জেলায় ভিন্নধর্মী ও ব্যতিক্রমী এ মিষ্টির পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। এ মিষ্টির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এতে অন্যান্য মিষ্টির মতো রস নেই। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এগুলো প্রায় ছয় মাস সংরক্ষণ করা যায়। মজার ব্যাপার হলো, এগুলো যত পুরনো হয়, তত এর স্বাদ বাড়ে। ফলে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যায়।
তাছাড়াও মেহেরপুরের আর কিছু প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকান রয়েছে,
গিয়াস মিষ্টান্ন ভান্ডারঃ এখানে নানা রকমের মিষ্টি পাওয়া যায়। মিষ্টিএর জন্য গিয়াস মিষ্টান্ন ভান্ডার অনেক খ্যাতিসম্পন্ন।
সায়েম মিষ্টান্ন ভান্ডারঃ ভালো জিলাপি এর জন্য পরিচিত দোকানটি । তাছাড়াও এখানে সন্ধ্যাআর পর গরম মিষ্টি পাওয়া যায়।
শ্যামপুরের রসগোল্লাঃ শ্যামপুরের রসগোল্লা অনেক পরিচিত এবং ঐতিহ্যবাহী। এখানকার রসগোল্লা গুলো হয় একেকটা আধাকেজি থেকে এক কেজি ওজনের। এবং শুধু এজনে বড় নয় এর স্বাদও অতুলনীয়.
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বঃ
- এম. এ. হান্নান – মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপত
- শাহ আলম – ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদানের জন্য মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপত
- ইমরুল কায়েস- ক্রিকেটার, বাংলাদেশ জাতীয় দল
- ভবানন্দ মজুমদার – নদিয়া রাজপরিবার এর প্রতিষ্ঠাতা
- দীনেন্দ্রকুমার রায় – লেখক
- রাখী গুলজার – অভিনেত্রী
- বলরাম হাড়ি – সমাজসংস্কারক, সাধক
- জগদীশ্বর গুপ্ত – বৈষ্ণব পদকর্তা
- কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী – কবি
- আব্দুল হামিদ কাব্যবিনোদ – সাহিত্যিক
- মুন্সি শেখ জমিরউদ্দীন – ধর্মসংস্কারক
- রমণীমোহন মল্লিক – বৈষ্ণব পদকর্তা
- কিরণ কুমার বোস – লেখক
- ড. মোঃ মোজাম্মেল হক – পদার্থবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ
- নুরুল হক – শিক্ষাবিদ
- প্রসেনজিৎ বোস বাবুয়া – সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
- স্বামী নিগমানন্দ – ধর্মসংস্কারক
- আবদুল মোমিন – বাংলায় শ্রমিক আন্দোলনের নেতা
- ওয়ালিল হোসেন – বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা
- রফিকুর রশীদ – লেখক
- আবদুল্লাহ আল আমিন ধূমকেতু – লেখক
- তোজাম্মেল আজম – সাংবাদিক, লেখক
- মোজাফফর হোসেন – লেখক
- শাশ্বত নিপ্পন – লেখক
- আসিফ আজিম – মডেল,অভিনেতা
- প্রফেসর আবদুল মান্নান – বিষিষ্ট রাজনীতিবিদ, সাবেক সংসদ সদস্য
যাতায়াত ব্যবস্থাঃ ঢাকা থেকে মেহেরপুর স্থল পথে সরাসরি নন স্টপ বাসে করে যায়। বাসের মধ্যে এসি/নন এসি উভয় ধরণের বাসের সুব্যবস্থা রয়েছে। ভাড়া, বাস এর নাম এবং টিকেট বুকিং দিতে এখানে ক্লিক করুন