বৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে পুরো ম্যাচের অর্ধেকটা সময়। একসময়তো মনে হচ্ছিলো খেলা বোধহয় বাতিলই হয়ে যাবে, অথবা আইসিসি পরের দিন আবার খেলা দিবে। তবে একটা সময় বৃষ্টি থামলো, হিসাব নিকাশ করে দেখা গেলো দু-দলই ২০ ওভার করে খেলতে পারবে, আইসিসি তাতেই সায় দিয়ে দিলো খেলার জন্য। ফলে ৫০ ওভারের ম্যাচ পরিণত হলো মারদাঙ্গা ২০ ওভারের টি২০ ম্যাচে। তবে মাঠে ব্যাট হাতে মারদাঙ্গা হয়ে উঠতে পারেনি কোনো পক্ষ, বরং বৃষ্টিভেজা মাঠে বল হাতে নিয়ে ব্যাটসম্যান বধে মেতে ওঠেন দুদলের বোলাররা। তাতে বিজয়ী ভারতের বোলাররা। ভারতের ১২৯ রান তাড়া করতে নেমে ইংল্যাণ্ড থেমে যায় ১২৪ রানে। ৫ রানের ব্যবধানে চ্যাম্পিয়ন হয়ে মাঠ ছাড়লো ভারত!
ব্যাট করতে নেমে ভেজা মাঠে তেমন সুবিধা করতে পারেনি ভারতীয় ব্যাটসম্যানেরা। ইংলিশ বোলারদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে পুরোটা সময় জুড়েই, তবে এর মাঝে ধাওয়ান-কোহলি’র ৩১ রানের জুটি এবং কোহলি-জাদেজা’র ৪৭ রানের জুটি’র ওপর ভর করে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১২৯ রান তোলে ভারত। ১৯ রানের মাথায় রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে দিয়ে প্রথম আঘাতটা হানেন স্টুয়ার্ট ব্রড। এরপর ধাওয়ান-কোহলি জুটি ভাঙেন রবি বোপারা, টূর্ণামেন্টে সবচেয়ে বেশী রান করা ধাওয়ানকে আউট করে। ২৪ বলে ৩১ রান করেন ধাওয়ান।
রোহিত শর্মা আউট হবার পর ধাওয়ানের আউটের আগ পর্যন্ত ভারত ছিলো ১ উইকেটে ৫০, সেখান থেকে দেখতে না দেখতেই ৫ উইকেটে ৬৬! কার্তিককে ক্যাচ আউট করেন ট্রেডওয়েল। ধাওয়ান-কোহলি জুটি ভেঙে দেয়া বোপারা আবারও জোড়া আঘাত হানেন ১৩ তম ওভারে রায়না এবং ধোনিকে আউট করে। রায়না ১ রান এবং ধোনি ২০১০ সালের অক্টোবরের পর এই প্রথম শূন্য রানে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান।
সপ্তম উইকেটে ৪৭ রানের জুটি গড়ে ৩৪ বলে ৪৩ রান করে জেমস এন্ডারসনের বলে ক্যাচ আউট হয়ে যান কোহলি। এর একটু পর অশ্বিনকে রান আউট করেন ইয়ান বেল। এসময় ভারতের স্কোর ১১৯ রানে ৭ উইকেট। সেখান থেকে ১২৯ রানে টেনে নিয়ে যান জাদেজা। ব্যক্তিগতভাবে ২৫ বলে ৩৩ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। রবি বোপারা ৩ উইকেট এবং এন্ডারসন, ব্রড, ট্রেডওয়েল ১টি করে উইকেট লাভ করেন।
রান তাড়া করতে নেমে বিপর্যয়েই পড়ে ইংল্যাণ্ড। ৪৬ রানের ভেতর ফিরে যান কুক, ট্রট, রুট এবং বেল। এরপর বেল ১৩ এবং ট্রট ২০ রান করে সামাল দেয়ার চেষ্টা চালান। এরপর পরপর দুই ওভারে প্রথমে ট্রট এবং পড়ে রুটকে তুলে নেন অশ্বিন। ৪৬ রানের মাথায় বেলকে ফিরিয়ে দেন জাদেজা। কুক এবং রুট করেন যথাক্রমে ২ এবং ৭ রান। এরপর ইয়ন মর্গান এবং রবি বোপারা মিলে পঞ্চম উইকেটে ৬৪ রান তুলে ইংল্যাণ্ডকে জয়ই পাইয়ে দিতে যাচ্ছিলেন বলে মনে হচ্ছিলো।
তখনই দৃশ্যপটে চলে আসেন ইশান্ত শর্মা। ১৮ তম ওভারে এই পেসার টানা দু বলে ফিরিয়ে দেন ৩৩ রান করা ইয়ন মর্গান এবং ৩০ রান করা বোপারাকে। ইংল্যাণ্ড তখন ৬ উইকেটে ১১০ রান। এরপর ১৯তম ওভারে আবারও জোড়া আঘাত ইংলিশ শিবিরে। ১৮.২ ওভারে বাটলারকে বোল্ড করেন জাদেজা, ১৮.৪ ওভারে ব্রেসনানকে রান আউট করেন রোহিত শর্মা-ধোনি। শেষ ওভারে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে দলীয় ৮ উইকেটের বিনিময়ে ১২৪ রান তোলে ইংল্যাণ্ড। ব্রড এবং ট্রেডওয়েল যথাক্রমে ৭ ও ৫ রানে অপরাজিত থাকেন। ৫ রানে বিজয়ী ভারত।
যাদব ১টি উইকেট এবং অশ্বিন, জাদেজা, ইশান্ত শর্মা ২টি করে উইকেট লাভ করেন। ব্যাট হাতে ৩৩ রানের পর বল হাতে ২ উইকেট পাওয়ায় রবীন্দ্র জাদেজা পেয়ে যান ম্যান অব দ্য ম্যাচের স্বীকৃতি। এদিকে পুরো টূর্নামেন্ট জুড়ে রান বন্যা বইয়ে দেয়া ভারতীয় ওপেনার ধাওয়ান পান ম্যান অব দ্য সিরিজের স্বীকৃতি। দুটি সেঞ্চুরি এবং একটি অর্ধ-শতক সহ ধাওয়ান করেন ৩৬৩ রান।
এদিকে আইসিসি’র সবগুলো টূর্ণামেন্টে অধিনায়ক হিসেবে ট্রফি জেতার অনন্য এক রেকর্ডের অধিকারী হন মাহেন্দ্র সিং ধোনি। ২০০৭ সালে তাঁর নেতৃত্বে ভারত বিশ্বকাপ টি২০ চ্যাম্পিয়ন হয়, ২০১১ সালে স্বপ্নের বিশ্বকাপ ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন এবং সর্বশেষ সদ্য শেষ হওয়া আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি’র চ্যাম্পিয়নও ভারত!