দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ছোট টুর্নামেন্টে যেমন হয় তেমনি এই টুর্নামেন্টের ক্ষেত্রেও ফাইনালে পৌঁছা দুই দলের খেলোয়াড়ই টুর্নামেন্ট সেরা একাদশ বাছাইয়ে বেশিরভাগ জায়গা দখল করেছে। তিন ক্রিকেটার শিখর ধাওয়ান, রবীন্দ্র জাদেজা আর জেমস এন্ডারসন প্রত্যেক দল নির্বাচকের দ্বারা সর্বসম্মতভাবে দলে জায়গা পেয়েছে। সবচাইতে বেশি অনিশ্চয়তা খেলা করেছে দ্বিতীয় ওপেনার আর ছয় ও আট নম্বর পজিশনের খেলোয়াড় বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। এখানে টুর্নামেন্টের সেরা একাদশ নিয়ে কিছু ছোটো রিভিউ দেয়া হলো।
শিখর ধাওয়ানঃ ৩৬৩ রান, গড় ৯০.৭৫ , স্ট্রাইকরেট ১০১.৩৯
পুরো টুর্নামেন্টে কখনোই বাজে খেলতে দেখা যায়নি তাঁকে। দক্ষিণ আফ্রিকা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে টানা দুই সেঞ্চুরিতে শুরু, এরপর ফাইনালে ২০ ওভারের লো স্কোরিং ম্যাচে ৩১ রান। অন্য ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের তুলনাই ক্যারিয়ারে দেরিতে ঔজ্জল্য ছড়ানো এই ব্যাটসম্যান এখন টপ অর্ডারে দীর্ঘদিনের জন্য জায়গা করে নেবেন বলেই মনে হচ্ছে। তার এই ফর্ম ভারতকে শেবাগের অভাবও অনুভব করতে দিচ্ছে না। অফ সাইডে খেলায় দুর্দান্ত এই ব্যাটসম্যানের এখনো অবশ্য শর্ট বলে খেলায় উন্নতি করতে হবে। কিন্তু এই মূহূর্তে গোল্ডেন ব্যাটের জন্য তাঁর কোন কাছাকাছি প্রতিদ্বন্দ্বীও নেই, টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
এলিস্টার কুকঃ ১৬১ রান , গড় ৩২.২০ , স্ট্রাইকরেট ৭৮.৯২
রোহিত শর্মাকে কোনমতে হটিয়ে তিনিই ধাওয়ানের ওপেনিং পার্টনার। ব্যাট হাতে নিজের সেরাটা দেখাতে না পারলেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর ৪৭ বলে ৬৪ রানের ইনিং টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডের আশা বাঁচিয়ে রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছিল। অধিনায়ক হিসেবেও টুর্নামেন্ট চলাকালে নানা পরীক্ষা দিতে হয়েছে তাকে, যেমন ওয়ার্নারের জো রুটকে ঘুষি মারা কিংবা বল ট্যাম্পারিং এর অভিযোগ এসব থেকে মনোযোগ সরিয়ে খেলায় আনতে হয়েছে। তাঁর জন্য এর পরের চ্যালেঞ্জ হল ফাইনালের ব্যর্থতা ভূলে সামনে এগিয়ে যাওয়া।
জোনাথন ট্রটঃ ২২৯ রান, গড় ৫৭.২৫, স্ট্রাইকরেট ৯১.৬০
তার ব্যাটিং এর ধরন নিয়ে সময়ে সময়ে পত্রিকায়, টিভিতে বিতর্ক উঠলেও তাকে যে কাজের জন্য দলে নেওয়া হয় তা সাফল্যের সঙ্গেই করেছেন তিনি। তার যে স্ট্রাইকরেট নিয়ে এত কথা উঠে সেটাতেও এবার ছাই ঢেলে দিয়েছেন তিনি। সেমিফাইনাল আর ফাইনাল দুই ম্যাচেই চমৎকার খেলছিলেন, কিন্তু ফাইনালে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আউট হয়ে যান।
কুমার সাঙ্গাকারাঃ ২২২ রান, গড় ৭৪, স্ট্রাইকরেট ৮০.১৪
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার খেলা ১৩৪ রানের ইনিংসটা টুর্নামেন্টের সেরা ইনিংসগুলোর একটি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওপেনিং ম্যাচে শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র তিনিই রুখে দাঁড়াতে পেরেছিলেন কিউইদের বোলিং এর মুখে। সবসময়ের মতই তার অফসাইডে কিংবা ডাউন দ্যা গ্রাউন্ড এ খেলা শট গুলো ছিল চোখজুড়ানো। ওয়ানডে দলে ব্যাটিং এর পাশাপাশি উইকেটকিপিং আর সাথে এঞ্জেলো ম্যাথিউসের পাশে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে দাঁড়ানো সব মিলিয়ে বেশ বড় বোঝা দারুণভাবে সামাল দিচ্ছেন তিনি।
মিসবাহ উল হক (অধিনায়ক)ঃ ১৭৩ রান , গড় ৮৬.৫০ , স্ট্রাইকরেট ৭৩.৬১
টুর্নামেন্টে ডুবন্ত জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন তিনি। তিনি না থাকলে পাকিস্তানের তিন অঙ্কের ঘরের রান তুলতেই কষ্ট হত। ওয়েস্টইন্ডিজের বিপক্ষে তার অপরাজিত ৯৬ ছিল দুর্দান্ত এক ইনিংস যাতে ভর করে পাকিস্তান লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সংগ্রহ দাড় করায়। অধিনায়ক হিসেবে তার নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে পাকিস্তানে বিতর্ক উঠলেও তার জায়গা নেওয়ার মত কেউ এখনো নেই।
রবি বোপারাঃ ১১৮ রান, গড় ৫৯, স্ট্রাইকরেট ১৩৭.২০। ৬ উইকেট , গড় ২২, ইকনোমি রেট ৫.৫০
পাঁচ মূল বোলার নিয়ে না খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ইংল্যান্ড দলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন তিনি। মিডল অর্ডারে তার মারকুটে ব্যাটিং ইংল্যান্ডকে মরগান আর বাটলারের দুরবস্থায় ধুকতে দেয়নি। আরেকটু হলেই ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় হয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলকে তীরে ভেড়াতে পারেননি। অবশ্য তারপরও পুনর্জন্মই ঘটেছে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের।
রবীন্দ্র জাদেজাঃ ৫০ রান, স্ট্রাইকরেট ১৪৮.১৪। ১২ উইকেট , গড় ১২.৮৩, ইকনোমি রেট ৩.৭৫
গতি পরিবর্তন, কখনো স্লাইডার, কখনো টার্ণ এইসবের মিশেলে টুর্নামেন্টে বল হাতে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছেন তিনি, যদিও টুর্নামেন্টের আগে তার থেকে এসব আশা করাই হয়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ৩৬ রানে রানে ৫ উইকেট নিয়ে তাদের ধ্বসিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। লো অর্ডারে তার মারকুটে ব্যাটিং প্রয়োজনের সময় দলকে সাহায্য করেছে বিশেষত দক্ষিণ আফ্রিকা ও ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। টুর্নামেন্ট শেষ করেছেন সর্ব্বোচ্চ উইকেট শিকারী হয়ে।
রবিচন্দ্রন অশ্বিনঃ ৮ উইকেট, গড় ২২.৬২, ইকনোমি রেট ৪.৪১
টুর্নামেন্টে পিচ যত স্পিন সহায়ক হয়ে উঠেছে ততই কার্যকরী হয়ে উঠেছেন তিনি। ফাইনালে জোনাথন ট্রটের উইকেট সহ ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান দেওয়ার পাশাপাশি ফিল্ডিং এ তিনটি ক্যাচ নিয়ে ভারতের ট্রফি জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তিনি।
ভুবনেশ্বর কুমারঃ ৬ উইকেট , গড় ২২.৮৩ , ইকনোমি রেট ৩.৯১
তার লাইন লেংথে কন্ট্রোল রেখে করা বোলিং ভারতকে ম্যাচগুলোর প্রথমে নিয়ন্ত্রণ নিতে সাহায্য করেছে। টুর্নামেন্টে কমপক্ষে ২০ ওভার বোলিং করেছে এমন পেসারদের মধ্যে তার ইকনোমি রেটই সবচাইতে কম।
জেমস এন্ডারসনঃ ১১ উইকেট, গড় ১৩.৭২, ইকনোমি রেট ৪.০৮
টুর্নামেন্টের সবচাইতে নজরকাড়া পেসার ছিলেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেমিফাইনালে তার ওপেনিং স্পেলটা ছিল এক কথায় অসাধারণ, একটি ম্যাচেও খারাপ খেলেননি তিনি। কোনরকম কন্ট্রোল না হারিয়ে ইচ্ছেমতো আউটসুইঙ্গার থেকে ইনসুইঙ্গারে তার সুইচ করার সামর্থ্যের প্রদর্শন ছিল দুর্দান্ত। এই টুর্নামেন্টে কোকাবুরা বলকে সুইং করাতে পারা অল্প কয়েকজন বোলারের একজন ছিলেন তিনি।
মিশেল ম্যাকক্লেনঘানঃ ১১ উইকেট, গড় ১৩.০৯, ইকনোমি রেট ৬.০৪
ব্রেন্ডন ম্যাককালাম স্ট্রাইক বোলার হিসেবে চমৎকার ভাবে ব্যবহার করেছেন তাকে। ছোট ছোট স্পেলে বোলিং করেছেন যাতে বেশিরভাগ সময়ই উইকেট তুলে নিতে পেরেছেন তিনি, মনে করিয়ে দিয়েছেন ৯৯ বিশ্বকাপের জিওফ এলটকে। ইকনোমি রেট তেমন ভাল না হলেও তার বোলিং ব্যাটসম্যানকে বিপদে ফেলার মত পেস আর বাউন্সের কমতি ছিলনা।
আইসিসিও তাদের টুর্নামেন্ট সেরা একাদশ জানিয়ে দিয়েছে, তাতে আছেনঃ ধাওয়ান, ট্রট, সাঙ্গাকারা, কোহলি, মিসবাহ, ধোনী, জাদেজা, ম্যাকলারেন, কুমার, এন্ডারসন, ম্যাকক্লেনঘান।