দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সত্যিই এই জানামাতেও মোবাইল ফোন না থাকা এবং গাড়ি না থাকার কথা শুনলে আশ্চর্য হতে হয়। জার্মানির ‘সিবেন লিন্ডেন` নামে একটি গ্রাম রয়েছে যেখানে মোবাইল নেই এবং কোনো গাড়িও নেই!
বার্লিন হতে প্রায় তিন ঘণ্টা পথ দূরে ‘সিবেন লিন্ডেন` নামে একটি গ্রাম রয়েছে। ডয়চে ভেলের একজন সাংবাদিক কিয়ো ড্যোরার সেই গ্রামটি ঘুরেও দেখেছেন। সেখানে মানুষ যতোটা সম্ভব পরিবেশবান্ধব উপায়ে প্রকৃতির মধ্যে বাঁচার চেষ্টা করছে। তবে এমন আদর্শের নিশ্চয় একটা সীমাও রয়েছে।
নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ি রাখতে হবে, কারণ গোটা গ্রামে গাড়ির প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সেখানে যে আদৌ কিছু গাড়ি রয়েছে, সেটাই বিস্ময়ের একমাত্র কারণ। কিয়ো ড্যোরার নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গ্রামের এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। তবে তা কখনও সম্ভব নয়। বেশিরভাগ গ্রামবাসীর কাছে মোবাইল ফোন নেই। আমাকেও নাকি এটা বন্ধ করতে হবে।“
জানা গেছে, এই ইকো-ভিলেজের জনসংখ্যা প্রায় ১৫০ এর মতো। ২০ বছর আগে গ্রামের পত্তন ঘটেছিলো। মিশায়েল ভ্যুর্ফেল প্রায় ১১ বছর পূর্বে হানোফার শহর হতে এখানে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘শহরের পরিবহণ ব্যবস্থা ও বিজ্ঞাপন আমার সবচেয়ে বড় বিরক্তির কারণ হয়েছিলো। নিজেকে বড় অসহায় মনে হতো আমার। জার্মানির মধ্যে থেকে, সব আইনকানুন মেনেও যে টেকসই পদ্ধতিতে বাঁচা সম্ভব এবং জীবনটা উপভোগ করা সম্ভব, সেটাই আমরা দেখানোর চেষ্টা করেছি। অন্য জায়গার তুলনায় অনেক কম জ্বালানি ব্যবহার করেও আমরা খুব ভালোভাবে বেঁচে আছি।“
প্রতিটি বাড়ির দেওয়াল খড়ের গোলা দিয়ে ঢাকা, যে কারণে জ্বালানির সাশ্রয় হয়। বিদ্যুতের চাহিদার সিংহভাগ গ্রামেই উৎপাদন করা হয়ে থাকে। এমনকি সেই বিদ্যুৎ কাজে লাগিয়ে পানি গরম করা হয়। এই ইকো-ভিলেজ শুধু বিদ্যুৎ সাশ্রয়ই করে না, গ্রামবাসীরা প্রয়োজনীয় খাদ্যও নিজেরা উৎপাদন করার চেষ্টা করে। অরগ্যানিক বীজ নিয়ে, কীটনাশক ছাড়াই চাষবাস করা হয় এই গ্রামে। খেত ও বাগানের কাজও মূলত হাত চালিয়েই করা হয়।
পশুপালনের কোনো চিহ্নই চোখে পড়েনি।৷ কিছু গৃহপালিত আলপাকা দেখা গেছে। দৈনিক খাদ্যতালিকায় মাংসও থাকে না। কারণ তা পরিবেশের জন্য বড্ড ক্ষতিকর হবে তাই। তাছাড়া গ্রামে ভিজান বা খাঁটি নিরামিষাশীদেরই আধিপত্য। প্রায় ৭০ শতাংশ শাকসবজি বাগানেই চাষ করা হয়ে তাকে। সেই অনুপাত বাড়ানোর উদ্যোগও চলছে। কিয়ো ড্যোরার মনে করেন, তিনি সত্যি, বহুকাল এমন স্বাস্থ্যকর তিনি খাবার খাননি।
শহরের সুপারমার্কেট সম্পর্কে আন্দ্রেয়াস শুবার্ট কোনো রকম বিরূপ মন্তব্য করেন না। তিনি বলেন, ‘‘এতো রকম পণ্য রাখার মানেই হয় না। আমি যখন বাইরে কেনাকাটা করতে গিয়ে থাকি, তখন বিশাল বৈচিত্র্য ও বিপুল পরিমাণ পণ্য আমার চোখে পড়ে। তখন সামনে দাঁড়ালে বুঝতে পারি না, কোনটা কেনা উচিত কিংবা সেই পণ্য আসলে কেমনই বা হবে৷“