দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নদী শুকিয়ে গেছে সেখানে শুধুই বালি মাটির কাদা। কিন্তু তারমধ্যে স্বর্ণ বা রুপার মুদ্রা থাকতে পারে তা কী কেও কখনও চিন্তা করেছে? কিন্তু সতিই এবার তাই ঘটেছে। শুকিয়ে যাওয়া নদী হতে পাওয়া যাচ্ছে স্বর্ণ মুদ্রা!
এই নদীটি হলো হাঙ্গেরির দানিউব নদী। ওই নদীতে পানি প্রায় নেই বললেই চলে। ওই শুকিয়ে যাওয়া নদী থেকেই পাওয়া যাচ্ছে রাশি রাশি সোনা এবং রুপার মুদ্রা! এই মুদ্রাগুলো প্রাচীন আমলের। প্রায় শুকনো খটখটে নদী হতে প্রত্নতত্ত্ববিদরা পেয়েছেন দু’হাজারেরও উপরে মুদ্রা।
এ ব্যাপারে ফেরেঞ্জি মিউজিয়ামের সঙ্গে যুক্ত প্রত্নতত্ত্ববিদ কাতালিন কোভাস জানিয়েছেন, ওই নদীতে মুদ্রা ছাড়াও আরও পাওয়া গেছে প্রাচীন আমলের লোহার অস্ত্র, কামানের গোলা, বর্শা, তরবারি ইত্যাদি।
ইউরোপের অন্যান্য নদীগুলোর মতোই দানিউবেরও বেশ কিছু স্থান একেবারে শুকিয়ে গেছে। মাত্র ১৫ ইঞ্চি পানিস্তর রয়েছে এই নদীতে। বুদাপেস্টের দক্ষিণে এর্দ শহর ঘেষে নদীটি যেখানে বইছে, সেখানেই পাওয়া গেছে এসব মুদ্রা ও লোহার অস্ত্রসহ প্রাচীন সামগ্রি। নদীতে পানিস্তর বেড়ে যাওয়ার পূর্বেই কাজ সেরে ফেলতে হবে বলে মনে করছেন ইতিহাসবিদরা।
গবেষকরা উচ্ছ্বসিত প্রাচীন আমলের এতো মুদ্রা এক সঙ্গে পেয়ে। প্রত্নতত্ত্ববিদ বালজ ন্যাগি বলেছেন, ৯০ শতাংশ মুদ্রাই প্রায় ১৬৩০-১৭৪৩ খৃস্টাব্দের। এইসব মুদ্রাগুলো তৈরি হয়েছিল নেদারল্যান্ডসে। ফ্রান্স, জুরিখ ও ভ্যাটিকানের মুদ্রাও রয়েছে এরমধ্যে।
জানা গেছে, দানিউবের সঙ্গেই বুদাপেস্টের প্রাচীন সেতুর ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের হামলায় এটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তার পাশেই পাওয়া গেছে এইসব গুপ্তধনের সন্ধান।
২২ ক্যারটের হাঙ্গেরিয়ান মুদ্রা ছাড়াও ফ্রান্সের মুদ্রাগুলো ১৬০০ শতকের ষোড়শ লুইয়ের আমলের সেটি নিশ্চিত করেছেন গবেষকরা। ১৭০০ হতে ১৮০০ শতকের ইউরোপের অন্যান্য দেশের মুদ্রাও পাওয়া গেছে।
এই বিষয়ে ফেরেঞ্জি মিউজিয়ামের অধিকর্তা গাবর গুলিয়াস এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রথম বলেছেন এই প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী উদ্ধারের ঘটনাটি। প্রথমে একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমেই গুপ্তধনের হদিশ পান। তিনি প্রথম সেখানে সেন্ট জর্জের ছবি দেওয়া একটি ঘণ্টা খুঁজে পান।
পরে তিনিই বিষয়টি মিউজিয়ামকে জানান। তারপর শুরু হয় উদ্ধার কাজ। ১৭৪৩ সালে অস্ট্রিয়ার সম্রাজ্ঞী মারিয়া থেরেসার আমলের মুদ্রাও উদ্ধার করা হয়েছে। মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের অনুমান হলো, এখানে জাহাজের ধ্বংসাবশেষও পাওয়া যেতে পারে।
মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী উদ্ধারের কাজ অব্যাহত রয়েছে। আপাতত ২০২০ সালে একটি প্রদর্শনীতে এই উদ্ধারকৃত গুপ্তধনগুলো প্রদর্শন করার কথা ভাবা হচ্ছে হাঙ্গেরির অন্য অংশেও প্রদর্শনীটি করার কথা ভাবছেন তাঁরা।
জানা গেছে, এই দানিউব নদীটি জার্মানি, অস্ট্রিয়া, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, মলদোভা ও ইউক্রেন মোট ১০টি দেশের মধ্যদিয়ে বহমান।
সম্প্রতি স্বর্ণমুদ্রাগুলো যেখানে উদ্ধার করা হয়, সেখানে নদীটি প্রায়ই শুঙ্ক। এই স্থানটি বুদাপেস্ট হতে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে।