দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ক্ষুধার জ্বালা বড় জ্বালা। তাই ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে মানুষকে অনেক কিছুই করতে হয়। যেমন করতে হয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তানের এক নারীকে। পেটের দায়ে মেয়েকে বিক্রি করলেন!
সারা বিশ্বেই যুদ্ধের ভয়াবহতায় প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন বহু মানুষ।ঠিক তেমনি ঘটছে আফগানিস্তানেও। তার ওপর আবার দেশটিতে শুরু হয়েছে তীব্র খরা। সব মিলিয়ে দুবেলা খাবার জোটানো যেনো এক অসাধ্য ব্যাপার হয়ে পড়েছে সেখানকার অধিবাসীদের জন্য। অনেকেই একটু খাবার ও আশ্রয়ের জন্য ভীড় জমাচ্ছেন শরণার্থী শিবিরে। তবে সেখানেও পাওয়া যাচ্ছে না খাবার। সন্তানদের খাবার দিতে না পেয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া মামারিন নামের এক মহিলা বাধ্য হয়েই বিক্রি করেছেন তার ৬ বছরের কন্যাসন্তানকে!
মার্কিন সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানী এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের ওই নারীর মর্মান্তিক জীবনের গল্প। আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের একটি শহরে অপ্রত্যাশিত তীব্র খরার কারণে পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণে শেষ পর্যন্ত সন্তান বিক্রি করতে বাধ্য হওয়া বাবা-মায়ের করুণ কাহিনী উঠে এসেছে।
সিএনএনের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মামারিনের মতো অসংখ্য বাবা-মায়ের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন। ইতিমধ্যেই উঠে এসেছে দেশটির চরম দারিদ্র্যতার কথা। একমুঠো খাবারের জন্য শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের সঙ্গে কথা বলে এমন নানা তথ্য পেয়েছেন তারা।
নিজের ৬ বছরের কন্যাসন্তানকে খুব সহজেই বিক্রি করেননি মামারিন। যুদ্ধে স্বামী-সংসার হারিয়েছেন মামারিন। এরপর দু’মুঠো খাবারের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন মামারিন। তারপরও কোথাও ঠাঁই মেলেনি তার। শেষ পর্যন্ত আশ্রয় নেন একটি শরণার্থী শিবিরে। সেখানে গিয়ে হাহাকার করেও ক্ষুধার্ত সন্তানদের জন্য জোটাতে পারেননি একটু আহার।
শেষ পর্যন্ত নিজের ৬ বছরের ফুটফুটে কন্যা আকিলাকে ৩ হাজার ডলারে বিক্রি করেছেন সেখানকার শরণার্থী শিবিরের নাজমুদ্দিনের কাছে। নাজমুদ্দিন নিজের ১০ বছরের ছেলের সঙ্গে আকিলার বিয়ে দেবেন বলেও মামারিনকে আশ্বস্ত করেছেন।
কেনো নিজের সন্তানকে বিক্রি করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে মামারিন বলেন, ‘আমার কাছে কোনও টাকা-পয়সা নেই। খাবার তো নেইই, আমার স্বামীও যুদ্ধে মারা গেছে। এদিকে শুরু হয়েছে খরা। তাই আমি ৩ সন্তানকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে এখানে চলে আসি। এখানে এসেছিলাম সহযোগিতা পাওয়ার জন্য। তবে কিছুই পাইনি। তাই সন্তানসহ না খেয়ে খেয়ে মরার চেয়ে আকিলাকে এক ব্যক্তির কাছে ৩ হাজার ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে দেই।’
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের হিসাব মতে, তীব্র খরার কারণে আফগানিস্তানে ২০১৮ সালে ঘর-বাড়ি ছেড়েছেন কমপক্ষে ২ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ। এদের মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাত হতে ৮৪ হাজার ও বাদগিছ হতে ১ লাখ ৮২ হাজার। দেশটিতে চলমান সহিংসতাতেও এতো মানুষ গৃহহারা হয়নি বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।