দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চীনের পূর্বাঞ্চলের এক শহরে প্রেম করার জন্য ছুটি দেওয়া হচ্ছে বলে খবর বেরিয়েছে! বেশ কয়েকটি সংস্থা এই কাজটি করছে বলে জানা যায়।
প্রেম করার জন্য ছুটি পাওয়া যাবে এমন কথা শুনলে যে কেও অবাক হবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে বাস্তবে ঘটছে এমন ঘটনা। চীনের বেশ কয়েকটি সংস্থা তাদের কর্মীদের প্রেম করার জন্যেও দিচ্ছে ছুটি! বলা হয়েছে, কোনও বিশেষ একটি সংস্থা নয়। এই ধরনের ছুটির রেওয়াজ চালু করেছে দেশটির একাধিক সংস্থা।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট সংবাদপত্রে এই সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে অতি সম্প্রতি। খবরে বলা হয়, চীনের পূর্বাঞ্চলের হাংঝুর দুটি কোম্পানি তাদের কর্মচারীদের এই অতিরিক্ত ‘ডেটিং লিভ’ বা প্রেম করার জন্য ছুটি দিচ্ছে!
খবরে জানা যায়, নতুন চন্দ্র বছর উৎযাপন করার জন্য চীনের কোটি কোটি মানুষ কাজ হতে ছুটি নিয়ে পরিবারের কাছে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই ক্ষেত্রে আবার কিছু সৌভাগ্যবান চাকুরীজীবী কর্মক্ষেত্র থেকে তাদের ৭ দিনের নিয়মিত ছুটির সঙ্গে বাড়তি আরও ৮ দিনের ছুটি পাচ্ছেন। সেটি দেওয়া হচ্ছে মাত্র তিরিশের কোঠার অবিবাহিত নারীদের। কারণ তারা যেনো প্রেম করে তাদের জীবন সঙ্গী খুঁজে নিতে পারেন।
অবশ্য এর আগেও খবর হয়েছিল, ওই শহরেই অবিবাহিত স্কুল শিক্ষিকাদেরও একই ধরনের ‘লাভ লিভ’ দেওয়া হচ্ছে। চীনে কোনও নারীর বয়স তিরিশের কাছাকাছি চলে আসার পরও যদি তিনি অবিবাহিতই থাকেন, তাহলে তাদের তাচ্ছিল্য করে ডাকা হয় ‘শেং নু’ অর্থাৎ ‘বাতিল’ বা ‘বাদপড়া মেয়ে’ বলে!
তাই চীনে এখন অনেক মেয়েই যেহেতু তাদের কেরিয়ারের দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন, তাই এমন অনেক পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন অনেকেই। সমাজে তাদের এখনও মেয়েদের ওপর চাপ থাকে বিয়ে করার জন্য। অপরদিকে চীনে যেভাবে কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা কমছে এবং বয়োবৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, তা নিয়ে সরকার ইদানিং খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
কোনো এক সময় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পথে যেতে হয়েছিল চীনকে। তবে আবার বহু বছর তেমন পথে হেঁটে ২০১৫ সালে চীন তার এক সন্তান নীতি পরিত্যাগ করেছে। কারণ একটাই আর তা হলো সেখানে জন্মহার দিনকে দিন কমছে। এদিকে ২০১৩ সালের পর হতে প্রতিবছর বিয়ের হারও কমছে চীনে। দেখা গেছে যে, ২০১৮ সালে চীনে দেড় কোটির বেশি শিশু জন্ম নিয়েছে। যা পূর্বের বছরের তুলনায় ২০ লাখ কম।
চীনের জনসংখ্যায় নারী-পুরুষের অনুপাতেও বড় ধরনের ভারসাম্যহীনতা রয়েছে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়। কারণ হলো সেখানে সরকারি নীতির জন্য পরিবারে ছেলে শিশু নেওয়ার প্রবণতা বেশি ছিল। তাই চীনে নারীর স্বল্পতা রয়েছে। সরকারি হিসেব অনুসারে দেখা যায় এখন নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা ৩ কোটি বেশি চীনে।
সেক্ষেত্রে চীনের আকাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্স-এর অভিমত হলো, দেশের জনসংখ্যা বর্তমানে যেখানে ১৪০ কোটি, তা আগামী ৫০ বছরের মধ্যে তা কমে দাঁড়াবে ১২০ কোটিতে। এভাবে জনসংখ্যা কমায় চিন্তা বেড়েছে চীন সরকারের।
শুধু জনসংখ্যা কমেছে তা নয়, প্রবীণ মানুষের অনুপাতও বাড়ছে, যে কারণে চীনের সরকারী কোষাগার ও সামাজিক কল্যাণ ব্যবস্থার উপর চাপও বাড়ছে। যে কারণে জীবন সঙ্গী খুঁজে নেওয়াটা এখন চীনের সামাজিক তথা রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও সেকথা ভেবেই অবিবাহিত নারীদের অতিরিক্ত ছুটি দেওয়া হচ্ছে প্রেম করা কিংবা জীবনসঙ্গী খোঁজার জন্য!
এই বিষয়ে হাংঝু সংচেন পারফর্মেন্স কোম্পানির মানবসম্পদ ম্যানেজার হুয়াং লেই-এর বক্তব্য হলো, অনেক নারী কর্মীরই বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ খুব কম থাকে। সে কারণে নারী কর্মীদের বাড়তি ছুটি দেওয়ার হচ্ছে, যাতে তারা ছেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ ও মেলামেশার জন্য আরও বেশি করে সময় দিতে পারে। সেইসঙ্গে হুয়াং লেই দাবি করেছেন, এই ‘ডেটিং লিভ’ পেয়ে কর্মীরাও খুব খুশি। যদিও এমন পরীক্ষা নিরীক্ষা বা নীতির কারণে কতোটা কাজের কাজ করবে তা নিয়ে তাঁর মনেও যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। তবে চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কী?