দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সমুদ্রের নিচেই রয়েছে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের গুদাম! এমন কথা শুনে যে কেও আশ্চর্য হতেই পারেন। তবে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মোকাবিলায় কার্বন নির্গমন কমানোর নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে৷ এবার সমুদ্রের তলদেশেও কার্বন-ডাই-অক্সাইড মজুত রাখার সম্ভাবনার কথা ভাবছেন এবার বিজ্ঞানীরা৷ তার নানা ঝুঁকি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষাও চালানো হচ্ছে৷
সমুদ্রের তলদেশের গভীরে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস মজুত করা কতোটা বিপজ্জনক হতে পারে? ইউরোপীয় গবেষকরা সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরেই৷ ইতালির এয়োলিয়ান দ্বীপপুঞ্জের উপকূলের নিকটে তারা ‘কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ’ বা যাকে বলা হয় সিসিএস-এর সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন বিজ্ঞানীরা৷
মূলত বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখাই এই প্রয়াসের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ এই বিষয়ে সামুদ্রিক ভূতত্ত্ববিজ্ঞানী ক্লাউস ভালমান বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও অন্যান্য উৎস হতে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নির্গমন প্রতিরোধ করাই এর মূল লক্ষ্য৷ কারণ এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তন তরান্বিত আরও হয়৷ তাই সেটি পৃথক করে মাটির নিচে মজুত করতে হবে৷ মাটির নিচে কিংবা সমুদ্রের তলদেশে সেটি রাখা যেতে পারে৷ ইউরোপের ক্ষেত্রে এমন অফশোর স্টোরেজ বেশি উপযুক্ত বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা৷
সমুদ্রের তলদেশে মজুত করা ওইসব কার্বন-ডাই-অক্সাইড লিক করে সমুদ্রে প্রবেশ করলে ঠিক কী ঘটে যেতে পারে, এয়োলিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কাছে কর্মরত বিজ্ঞানীরা সেটি জানতে চাইছেন৷ অগ্নুৎপাতের কারণে সৃষ্ট এই দ্বীপমালার নিচে বিশাল পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড জমা রাখা হয়েছে৷ যে কারণে গবেষণার জন্য এই জায়গাটিকেই আদর্শ বলা যায়৷
সমুদ্রবিজ্ঞানী সিনসিয়া দে ভিটর বলেছেন, এখানকার জীবজগৎ দীর্ঘকাল ধরে এই পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে৷ এখানে কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রাকৃতিক কারণে বেরিয়ে যায়৷ যে কারণে অন্যান্য এলাকার তুলনায় এখানে পিএইচ-এর মাত্রা অনেক কম কম৷
গবেষকরা জানিয়েছেন যে, মূলত বুদবুদ শিকার এই গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ৷ গবেষকদের সমুদ্রের তলদেশ হতে নির্গত বুদবুদের অবিরাম স্রোতের আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে হচ্ছে৷ দক্ষ ডুবুরি হওয়ার পাশাপাশি তাদের এই কাজের জন্য বিশেষ সরঞ্জামও তৈরির কাজও করতে হয়েছে৷
সমুদ্রবিজ্ঞানী লিসা ফিলস্টেটে বলেন, বুদবুদের আকার মাপতে আমরা এক বাবলবক্স তৈরি করেছি৷ আমরা পেছন থেকে আলো ফেলে বুদবুদ উজ্জ্বল করে তুলি৷ এর মাধ্যমে পরে কম্পিউটারে মাপজোক করতে সুবিধা হয়৷ আমাদের নিউমারিক মডেলগুলোর জন্য এই কাজ গুরুত্বপূর্ণ৷
কার্বন-ডাই-অক্সাইড দৃশ্যমান করে তোলার আরেকটি উপায় সামুদ্রিক পরিবেশে পিএইচ-এর মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা৷ তার নির্গমন পর্যবেক্ষণ করতে পারলে গবেষকরা এমন একটি মডেল তৈরি করতে পারবেন, যার সাহায্যে গ্যাসের নির্গমন এবং তা ছড়িয়ে পড়ার হারের পূর্বাভাষ দেওয়া সম্ভব হবে৷
এই বিষয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মারিউস ডেওয়ার বলেন, দ্রবীভূত সিওটু পিএইচ-এর মধ্যে পরিবর্তন আসে৷ বিভিন্ন ঋতুতে সেই পরিবর্তন এবং সেটি শনাক্ত করার সেরা জায়গাগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখছি আমরা৷
এই গবেষণা শেষ হতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা৷ তবে বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস যে, সেই ফলাফল মানুষের কাজে লাগবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷