দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আধুনিক যুগে এখন নতুন নতুন কত প্রযুক্তিই না আসছে। এক সময় ছিল যখন মানুষ ক্যামেরায় ছবি উঠতো শুধুই স্টুডিওতে গিয়ে। স্টুডিওতে একটি চেয়ার বা টুলে বসিয়ে একজন ক্যামেরাম্যান ছবি তুলতেন নানাভাবে দর্শনীয় করে। তারপর ছবি ডেলিভারির তারিখ দেওয়া হতো অন্তত সাত দিন পর। কারণ তখন ফিল্ম দিয়ে ছবি তোলা হতো। তা থেকে ডেভেলপ করা এবং তারপর ছবি প্রিন্ট। কিন্তু এখন আর সেই যুগ নেই। এখন ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছে সবাই। এখন ঘরে ঘরে ডিজিটাল ক্যামেরা। কোন ফিল্মের প্রয়োজন হয় না। হাজার হাজার ছবি তুলে কম্পিউটারে রাখা যায় বা পেন ড্রাইভে করে সহজে প্রিন্টও করা যায়।
গোপন ক্যামেরা প্রযুক্তি
এবার এসেছে আরও আধুনিক প্রযুক্তির ক্যামেরা। মাত্র দু’দশক আগেও এ ক্যামেরার আকার ছিল বড়সড়। কিন্তু চলতি দশকের শুরু থেকেই ক্যামেরার আকার ছোট হতে শুরু করেছে। আর বর্তমানে এটি এতই ক্ষুদ্রাকৃতির হয়েছে যে, কোথাও লুকিয়ে রাখলে তা খুঁজে বের করা রীতিমত একটা কঠিন ব্যাপার। গত পাঁচ বছরে গোপন ক্যামেরার ব্যবহার এত বেড়ে গেছে, তা নিঃসন্দেহে একটি আতংকের বিষয়।
ডিজিটাল ক্যামেরাতে সনাতন ফিল্ম ব্যবহার করতে হয় না। এর বদলে মেমোরি চিপের মধ্যে ছবি ধারণ করে রাখার ব্যবস্থা থাকে। ডিজিটাল ক্যামেরার ক্ষমতা যত মেগাপিক্সেলের, তাতে তত বড় ছবি ধারণ করা সম্ভব যায়। এ ডিজিটাল ক্যামেরার দাম শুরুর দিকে বেশি থাকলেও এখন তা অনেকটাই সাশ্রয়ী। বাজারে আসা বিভিন্ন ব্র্যান্ডেও মোবাইল বা স্মার্টফোনই এখন ডিজিটাল ক্যামেরার মত কাজ করছে। বেশি ক্ষমতার মোবাইল ক্যামেরা ব্যবহার করে ছবি তোলা বা ভিডিও করা এখন অনেকটাই হাতের মুঠোয়। এনালগ, ডিজিটাল এবং মোবাইল ক্যামেরার পাশাপাশি আরেকটি গোপন ক্যামেরার নাম বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। এটি হচ্ছে সিসিটিভি অর্থাৎ ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন।
সিসি ক্যামেরা কিভাবে ব্যবহার হয়
এ প্রযুক্তিতে একটি কম্পিউটারের সঙ্গে সিসি ক্যামেরা জুড়তে ডিভিআর কার্ড প্রয়োজন পড়ে। ক্যামেরার সঙ্গে কোএক্সিয়াল কেবল দিয়ে সংযোগ দিয়েই এ ধরনের ক্যামেরা বসানো সম্ভব। আর কম্পিউটার থেকে ক্যামেরার সামনে কি ঘটছে তা সহজেই পর্যবেক্ষণ ও ধারণ করা সম্ভব। শুধু শব্দ ধারণ বা ভিডিও এবং শব্দ ধারণ করার মত ক্যামেরাও রয়েছে। কিছু ক্যামেরা আবার আলো ছাড়াও বস্তু শনাক্ত করতে পারে। দ্য প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল সিসিটিভি পেজে দেয়া তথ্য অনুসারে জানা যায়, বর্তমানে সারা বিশ্বে আড়াই কোটিরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা চালু রয়েছে। আর শুধু যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর সিসিটিভি ক্যামেরায় খরচ হয় ৪৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশেও অনেক অফিস আদালতে এই ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে।
শুধুই কি নিরাপত্তার লক্ষ্যে ব্যবহূত হয় গোপন ক্যামেরা ?
সাধারণত বিভিন্ন অফিস বা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার লক্ষ্যে ব্যবহূত হয় গোপন ক্যামেরা। কিন্তু সাধারণ নাগরিক হিসেবে আপনার নিরাপত্তাই সিসিটিভির কারণে বিপদের মুখে পড়ে। তখনই জরুরি হয়ে পড়ে গোপন ক্যামেরার খোঁজ। তবে গোপন ক্যামেরা কি ধরনের গোপন স্থানে লুকিয়ে থাকতে পারে এবং কোন পদ্ধতিতে সেটি কাজ করে সে ব্যাপারে জ্ঞান থাকাটা অবশ্যই দরকার। আবার গোপন ক্যামেরা ভালো কাজে না মন্দ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বা হবে তা পুরোপুরি নির্ভর করে ব্যবহারকারীর ইচ্ছার ওপর। একটি ছোট ক্যামেরা সাধারণত ২৫ ডলার অর্থাৎ প্রায় ২ হাজার টাকার মধ্যেই কিনতে পাওয়া যায়। আর এ ধরনের ছোট ক্যামেরার ব্যবহার বৈধ নাকি অবৈধ এ বিষয়েও কারও তেমন পরিষ্কার ধারণা নেই। আমাদের দেশে বড় বড় প্রতিষ্ঠান এবং শপিং মলের নিরাপত্তার নামে এ ধরনের ক্যামেরার যথেচ্ছ ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া ক্যামেরার কম দাম এবং ব্যবহারের সুবিধা একে একটি সহজলভ্য পণ্যে পরিণত করেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও তাই এখন গোপন ক্যামেরার সহজ ব্যবহার দেখা যায়। আর এ কাজটি অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছে মোবাইল ক্যামেরা। এ গোপন ক্যামেরার যথেচ্ছ ব্যবহার এখন প্রায়ই আইন ভঙ্গের নানা কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রায়ই ক্যামেরায় ছবি তোলার মাধ্যমে ইভটিজিং অথবা ব্লাকমেইল করার মত ঘটনা ঘটছে। যেহেতু এসব ক্যামেরা সহজেই চালানো যায়, তাই পাবলিক প্রেস কিংবা হোটেলের একান্ত কক্ষেও ঢুকে যাচ্ছে এ ক্ষুদ্র বা গোপন ক্যামেরা। বাথরুমের শাওয়ারের মধ্যে ক্যামেরা লুকিয়ে রাখা, বেডরুম বা কাপড় পরিবর্তন করার রুমে ক্যামেরা লুকিয়ে রাখার ঘটনাও ঘটেছে। পারসোনাকে গোপন ক্যামেরার বিষয়টি নিশ্চয় কেও ভুলে যায়নি।
একটি পরিসংখ্যান বলছে, বৈধভাবে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরাতে নারীদের ছবিগুলোকে অসৎ উদ্দেশ্যে কাজে লাগান কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে শতকরা ১৫ ভাগ ক্ষেত্রে বৈধভাবে স্থাপন করা গোপন ক্যামেরার ছবি ক্যামেরা অপারেটর নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহার করে। ফেস রিকগনিশন সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে গোপন ক্যামেরায় তোলা ছবিটি কার তা সহজেই বোঝা যায়। আর তাই এ সফটওয়্যারটির ব্যবহার এখন বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছে।
নানা নামে ক্ষুদে ক্যামেরা
এই ক্যামেরার আকার এতটাই ছোট হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এর ট্রান্সমিটার এবং ব্যাটারিসহ পুরো সিস্টেমটি একটি দিয়াশলাই বা সিগারেটের বাক্সে ভরে রাখা যাবে। সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব নিউচাটেলের দ্য ইনস্টিটিউট অব মাইক্রো টেকনোলজি সিএমএস প্রযুক্তির এমন একটি ক্ষুদে ক্যামেরা তৈরি কমরছে, যা একটি কলমের মধ্যে আটকে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ‘গিভেন’ এক ধরনের ক্যামেরা তৈরি করেছে, যার নাম ‘ইনজেস্টিগেবল ইমাজিং ক্যাপসুল’। এ ডিভাইসটি চিকিৎসা কাজের জন্য তৈরি হলেও এটি এতই ক্ষুদ্র যে, হজমও হয়ে যেতে পারে। নানারকম গোপন ক্যামেরা তৈরির ব্যাপারে বিভিন্ন কোম্পানিই এখন প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আর এ ক্যামেরাগুলো এমনভাবে তৈরি হচ্ছে, যাতে সহজে চোখে না পড়ে। ক্ষুদে এ গোপন ক্যামেরায় মোশন অ্যাক্টিভেটেড রেকর্ডিং করা যায়। এসব ক্যামেরায় আবার থাকে ফিচার ভর্তি। এরকম কয়েকটি ক্যামেরা হচ্ছে টিস্যু বক্স স্পাই ক্যাম, লাইট সুইচ স্পাই ক্যাম, শাওয়ার রেডিও স্পাই ক্যাম, এয়ার পিউরিফাইয়ার স্পাই ক্যাম, পেন স্পাই ক্যাম, অ্যালার্ম ক্লক হিডেন ক্যামেরা, সিডি প্লেয়ার হিডেন ক্যামেরা, ডিজিটাল ডেস্ক ক্লক, বাইনোকুলার, ফুলদানী এবং শোপিস আকারের ক্যাম, কম্পিউটার স্পিকার, বোতাম ক্যামেরা, মিরর হিডেন ক্যাম, ছোট ম্যাচ বক্স, ক্লিপ ক্যামেরা, হ্যান্ডব্যাগ ক্যামেরা ইত্যাদি। আর এসব বিভিন্ন আকারের ক্ষুদে ক্যামেরা এখন হাতের নাগালেই। এ ক্যামেরাগুলো অপারেট করা অত্যন্ত সহজ। এর মধ্যে ফিল্ম পরিবর্তন করারও কোন ঝামেলা নেই। আগে ক্যামেরার কাজ ছিল পিকচার টিউবভিত্তিক। এ ধরনের ক্যামেরার অসুবিধা হচ্ছে এগুলো গোপন ক্যামেরা হিসেবে ততটা কার্যকর নয়। গোপন ক্যামেরার লেন্স সহজেই যে কোন আড়ালে লুকানো যায়। ছোট বোতাম থেকে শুরু করে যে কোন স্থানেই এটি জুড়ে দেয়া সম্ভব। এ লেন্সের গায়ে নন-কনডাক্টিভ মেটাল জুড়ে দিলে মেটাল ডিটেক্টরেও তা ধরা পড়ে না।
ক্যামেরা লুকানোর স্থান সমূহ
ক্যামেরা লুকানোর কিছু জনপ্রিয় স্থান রয়েছে। এসব স্থান ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে ক্যামেরা লুকানোর স্থানটি খুঁজে বের করা সম্ভব। ক্যামেরা সাধারণত লুকানো হয় মাথার ওপরে বা ফেস লেভেল বরাবর। সাধারণ ডেস্ক বা নিচের দিকেও ক্যামেরা লুকানো হতে পারে। তবে প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কার্যক্রম অনুসারেই গোপন ক্যামেরার ব্যবহার হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে মোবাইল ক্যামেরা এবং ডিজিটাল ক্যামেরার ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। এখন অজান্তেই যে কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে ছবি তুলতে পারে। আর এসব গোপন ক্যামেরা থেকে রক্ষা পাওয়ার সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে সচেতনতা এবং সর্বোপরি প্রযুক্তি সম্পর্কে আমাদের সম্যক জ্ঞান থাকা। তাহলে গোপন এসব ক্যামেরার ছলচাতুরি থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি।
-অনলাইন অবলম্বনে