দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রযুক্তি মানুষকে ঠিক কোন জায়গাতে নিয়ে ঠেকাবে তা বলা কঠিন। প্রযুক্তির বদৌলতে মানুষ নানা রকম কৌশল নিচ্ছেন। যেমন নিজের শরীর নিজেই ‘হ্যাক’ করছেন! কিন্তু কেনো করছেন এটি?
বিবিসি বাংলাতে এমন এক খবর সম্প্রতি এমন একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। যে খবর সত্যিই অবাক করে দেওয়ার মতো খবর। হ্যাক করার কথা আমরা শুনে আসছি। আর সেটি করা হয় কম্পিউটার কিংবা ব্যাংকের একাউন্ট ইত্যাদি। কিন্তু তাই বলে শরীর হ্যাক। তাও আবার নিজের শরীর নিজেই হ্যাক! মূলত প্রযুক্তিকে যারা আক্ষরিক অর্থেই নিজের শরীরের সঙ্গে আত্মস্থ করে নিতে চান, তাদেরই একদলকে বর্তমানে বলা হচ্ছে ‘বায়োহ্যাকার্স’। এরকম নামকরণের কারণ হলো, তারা নিজেদের শরীরের ‘বায়োলজি’ বা জীববিদ্যাকে ‘হ্যাক’ করে নিজেদের শরীরকে বা মস্তিষ্ক যাতে আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারে, সেই চেষ্টাই চালাচ্ছে তারা। তাদের কেও হয়তো নিজেদের ত্বকের নিচে কোনও চিপও ঢুকিয়ে দিচ্ছেন, কেও আবার মারাত্মক চরম কোনও ডায়েট কিংবা খাদ্যতালিকা অনুসরণ করে নিজেদের ডিএনএ পরিবর্তনের চেষ্টাও চালাচ্ছেন!
এমনই এক কাণ্ড ঘটিয়েছেন এক ব্রিটিশ তরুণী র্যাভেন ব্রুকার্স। এই প্রথমবারের মতো একজন বায়োহ্যাকার হতে চলেছেন তিনি। তিনি নাকি নিজের হাতে চামড়ার নিচে একটি বিশেষ চিপ বসিয়ে নিচ্ছেন, যাতে শুধু হাত দিয়েই তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজের গাড়ির লক খুলে ফেলতে পারেন! সফল অপারেশনের পর চিকিৎসক যখন তাকে বলছিলেন “এখন তুমি একজন সাইবর্গ কিংবা বায়োহ্যাকার” – তখন র্যাবেনের খুশি যেনো আর বাঁধ মানছিলো না। এই ধরনের অস্ত্রোপচারে ঝুঁকি হয়তো রয়েছে, তার পরেও বায়োহ্যাকিং ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
এই ব্রিটিশ তরুণী র্যাভেনের সার্জেন বলছিলেন এই বায়োহ্যাকিংয়ের যে একটা আলাদা আকর্ষণ রয়েছে তার টানে মূলত আরও বেশি বেশি মানুষ এখন এটা করাতে চাইছেন। তারা চাইছেন যে, নিজেদের জীবনকে সাইবর্গের পর্যায়ে ‘আপগ্রেড’ করে নিতেও। র্যাভেন নিজেও বলছিলেন যে, তিনি সম্ভব হলে নিজের জীবনের সব প্রক্রিয়াকেই স্বয়ংক্রিয় করে নিতে চান! এই বায়োহ্যাকিং সেই চেষ্টারই একটি অংশমাত্র। র্যাভেনের শরীরে যে চিপটি ঢোকানো হয়েছে সেটি আসলে এমনভাবে প্রোগ্রাম করা সম্ভব যাতে করে যে কোনও ওয়েবসাইটের সঙ্গেই সেটিকে লিঙ্ক করা যায়। যে কারণে হাতের ওপর নিজের মোবাইল ফোনটা রেখে র্যাভেন যখন নিজের এনএফসি ট্যাগটি অ্যাকসেস করতে চাইলেন, অনায়াসে সেটি কাজ করলো। রিচ লি-ও হলেন একজন বায়োহ্যাকার। তিনি এগুলো নিয়ে নিজের ওপরই দিনরাত নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে আসছেন। তবে অতীতে সেরকম কতোগুলো পরীক্ষা রীতিমত ব্যর্থও হয়েছে তার। তিনি বলছিলেন যে, “নিজের হাতের দুটো আঙুলে আমি ম্যাগনেট কিংবা চুম্বক বসিয়ে নিয়েছি, ডানদিকের কানের নিচে আমি একটা হেডফোন ইমপ্ল্যান্ট করিয়েছি।”
তার বক্তব্য হলো, “আসলে আমি এমন একটি দুনিয়ার জন্য লড়াই করছি যেখানে একজন তার নিজের জিন পরিবর্তন করতে পারবে বা যেভাবে শরীরে এখন ট্যাটু আঁকা যায় ঠিক সেভাবেই জেনেটিক মডিফিকেশনও করা যাবে।”
“এটিকে বলা যেতে পারে একটা বায়োলজিক্যালি ফ্লুইড সমাজ, যেখানে এগুলোর মাধ্যমে নিজের ক্ষমতা অনেকখানি বাড়িয়ে নেওয়া যাবে।”
রিচ লি এখন একটা বিল্ট-ইন ভাইব্রেটর তৈরি করার পেছনে মাথা খাটাচ্ছেন, যেটি তিনি নিজের পুরুষাঙ্গের ঠিক ওপরেই বসাতে চান। তার ভাষায়, “আমরা যদি শরীরে ভাইব্রেটিং মোটর বসাতে পারি তাহলে একটু নিচের দিকেই বা কেনো নয়, যাতে আমি নিজেকে একজন সেক্স সাইবর্গ বা ওই জাতীয় কিছু বানিয়ে তুলতে পারি খুব সহজেই!”
তিনি অবশ্য এও শিকার করেন যে, “হ্যাঁ, কাজটায় এখনও অনেক বাধা রয়েছে সেটি ঠিক – তবে আমরা লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমার বাবা-মা ও বাচ্চাদেরও আমার এই কাজে পুরোপুরি সমর্থন রয়েছে!”
তার ভাষায়, “তবে কয়েকটি জিনিস মেনে নিতে কিন্তু তাদেরও অসুবিধা হয়, কিন্তু আমি যেমন ওদের গলফ খেলা নিয়ে কখনও কিটকারি করি না, ওরাও তেমনি আমার বায়োহ্যাকিং নিয়ে কিটকারি করে না!”