দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকেই আগুন থেকে বাঁচার জন্য কিনছেন আগুন নেভানোর যন্ত্র। কিন্তু এই যন্ত্র কীভাবে ব্যবহার করতে হবে সেটি অনেকেরই জানা নেই। আজ জেনে নিন বিষয়টি।
সুপার শপ, রেস্টুরেন্ট বা অফিসে চোখে পড়ে ছোট্ট লাল সিলিন্ডারটি। যার ভেতরে থাকা উপাদান আগুন নেভাতে সাহায্য করে থাকে। আমরা এমনটিই জানি। তবে এই সিলিন্ডারটি আসলে কীভাবে ব্যবহার করতে হয়? সে বিষয়ে কোনো ধারণা আমাদের অনেকেরই জানা নেই ।
কী ধরনের আগুনে এটি ব্যবহার করতে হবে
আগুন বিভিন্ন ধরনেরই হতে পারে। আজ জেনে নিন কোন আগুন কিভাবে নেভাতে হয়।
Class A : দৈনন্দিন ব্যবহৃত যে কোনো দাহ্য বস্তু যেমন- কাঠ, কাগজ, কাপড়ের আগুন এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই ধরনের আগুন সাধারণত পানি বা শুকনো কেমিক্যাল পাউডার দিয়েও নেভানো যায়।
Class B : দাহ্য তরল ও দাহ্য গ্যাস যদি আগুনের উৎস হয়ে থাকে। যেমন: তেল, গ্যাসোলিন, পেইন্ট ইত্যাদি। এই ধরনের আগুন শুকনো কেমিক্যাল পাউডার বা ফোম দিয়েও নেভানো হয়।
Class C : যে কোনো ইলেকট্রিক্যাল ইকুপমেন্ট যেমন- জেনারেটার/মোটর, ট্রান্সফর্মারের আগুন এই Class C শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এই ধরনের আগুনে কখনই পানি ব্যবহার করা যাবে না। কারণ হলো পানি তড়িৎ পরিবাহী। পানি ব্যবহার করলে তড়িতাহত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এক্ষেত্রে শুকনো কেমিক্যাল পাউডার কিংবা কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার হয়ে থাকে।
Class D : দাহ্য ধাতু যেমন সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়ামের আগুন এই Class D শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়ে।
Class E – রান্নার তেল, ভেজিটেবল অয়েল বা গ্রিজ যদি আগুনের উৎস হয় তাহলে ওয়েট কেমিক্যাল বা ওয়াটার মিক্স এক্সটিংগুইসার ব্যবহার করা হয়।
দৈনন্দিন জীবনে সাধারণভাবে Class-A বা Class-B ধরণের আগুন নেভানোর বেশি প্রয়োজন পড়ে। বর্তমানে যেসব শুকনো কেমিক্যাল এক্সটিংগুইসার ব্যবহার করা হয় সেগুলো Class-A, Class-B, Class-C তিন ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যাবে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন
আগুন নেভানোর এই যন্ত্রের নাম হলো ফায়ার এক্সটিংগুইসার। মূলত প্রাথমিক অবস্থাতেই আগুনের উপর ফায়ার এক্সটিংগুইসার প্রয়োগ করতে হয়। প্রথমেই এর হ্যান্ডেলটি ডান হাতে ধরে বাম হাত দিয়ে টান দিয়ে সেফটি পিন খুলে ফেলতে হবে। তারপর বাম হাতে হোস পাইপ আগুনের দিকে তাক করে ডান হাত দিয়ে বাটন কিংবা লিভার চাপতে হয়।
যেসব সতর্কতা অবলম্বন জরুরি
# ফায়ার এক্সটিংগুইসার সবসময় বাতাসের অনুকূলে থেকেই প্রয়োগ করতে হয়। যাতেকরে কেমিক্যাল পাউডার কিংবা গ্যাস বা ফোম উড়ে এসে নিজের গায়ে আবার না পড়ে। আগুনের উৎপত্তিস্থলের সর্বোচ্চ ২ মিটার দূর হতে ফায়ার এক্সটিংগুইসার প্রয়োগ করতে হবে। আগুন ছোট বা কম অবস্থায় থাকতে ফায়ারম্যানের অপেক্ষায় না থেকে হাতের কাছে থাকা ফায়ার এক্সটিংগুইসারের মাধ্যমে আগুন নেভানো সম্ভব।
# ফায়ার এক্সটিংগুইসার একবার ব্যবহার হয়ে গেলে একইসঙ্গে পুরোটাই ব্যবহার করে ফেলতে হয়। এটি দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা যায় না।
# কোনো কারণে যদি এক্সটিংগুইসার ব্যবহার করেও আগুনের নিয়ন্ত্রণ আসে বা আগুন বেড়ে গেলেই ধরে নিতে হবে আগুনের প্রাথমিক অবস্থা পেরিয়ে গেছে। তখন অবশ্যই অকুস্থলে নিরাপদ অবস্থানে চলে যেতে হবে এবং দ্রুত ফায়ারম্যানকে খবর দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
# কার্বন-ডাই-অক্সাইড টাইপ এক্সটিংগুইসার প্রয়োগ করা হলে আগুন নিভুক কিংবা নাই-নিভুক, ঘটনাস্থলে মোটেও বেশি সময় অপেক্ষা করা যাবে না। নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড খুব তাড়াতাড়ি আশপাশে অবস্থানকারী ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। তাই নিরাপদ স্থানে যতো দ্রুত সম্ভব সরে পড়তে হবে।
# উন্মুক্ত স্থানে কিংবা ধাবমান বাতাসযুক্ত স্থানে কার্বন-ডাই-অক্সাইড টাইপ এক্সটিংগুইসার প্রয়োগ খুব একটা কার্যকর হয় না। এক্ষেত্রে বালি কিংবা পানি (প্রয়োজন অনুযায়ী) ব্যবহারই উত্তম হবে।
এক্সটিংগুইসারের প্রকারভেদ
প্রতিটি ফায়ার এক্সটিংগুইসারের গায়ে লেখা থাকে তাতে কী ধরনের কেমিক্যাল আছে। সিলিন্ডারের গায়ের রং দেখেও বোঝা যায় ওটিতে কি ধরনের এক্সটিংগুইসার। যেমন ধরুন লাল রং হচ্ছে ওয়াটার টাইপ, ক্রীম কালার হলো ফোম টাইপ, কালো রং হলো কার্বন-ডাই-অক্সাইড টাইপ এবং নীল রঙের এক্সটিংগুইসার হচ্ছে পাউডার টাইপের।
অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এড়াতে হলে আপনাকে অবশ্যই হাতের কাছে ফায়ার এক্সটিংগুইসার রাখতে ও ব্যবহার করতে হবে। কারণ ছোট ছোট দুর্ঘটনা এক সময় বড় আকার ধারণ করে। তাই অল্পতেই যদি আপনি ফায়ার এক্সটিংগুইসার ব্যবহার করেন তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন।
অনলাইনে ফায়ার এক্সটিংগুইসার কিনতে www.othoba.com অথবা আর বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট রয়েছে সেখানে ঢুকে আপনি আজই অর্ডার করুন ফায়ার এক্সটিংগুইসার এবং নিরাপদ থাকুন।