দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চীনে এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে পিঠে নিয়ে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি তাকে নিয়ে কখনও কখনও স্কুলের সিঁড়ি বেয়ে তরতর করে উঠেও যাচ্ছেন। আবার কখনও বড় দালানে দৌড়চ্ছেন। কখনও আবার এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে পা বাড়াচ্ছেন। ঘটনাটি এখন ওয়েব দুনিয়ায় ভাইরাল।
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের এই ভিডিওটি বর্তমানে মন জয় করেছে বিশ্বের লাখ লাখ নেটিজ়েনের। সাদা শার্ট পরিহিত ছেলেটির নাম শু বিনইয়্যাং। সিচুয়ানের মেইশান শহরে হেবাজ়ি টাউন সেন্ট্রাল প্রাইমারি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র সে। তারই পিঠে চড়ে গত ছ’বছর ধরে স্কুল করছে তারই বন্ধু ঝাং জ়ি।
কখনও একদিনের জন্যও ঝাংকে ফেলে একা কোনও ক্লাস করে না শু। চীনের সরকারি সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া সম্প্রতি শু এবং ঝাংয়ের বন্ধুত্ব নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে। সিচুয়ান অনলাইন নামে একটি ওয়েবসাইটেও ছড়িয়ে পড়েছে বন্ধুপ্রাণ শু’য়ের কথা।
তা দেখে ভাষা হারিয়েছেন অনেকেই। চূড়ান্ত পেশাদারিত্বের এই যুগে বছরের পর বছর ধরে শু তার বন্ধু জন্য যা করে আসছেন, তা চট করে কেও নিজের আত্মীয়ের জন্যও বর্তমান সময়ে করে না বলে মনে করছেন নেটিজ়েনরা।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, চার বছর বয়সে পেশির বিরল এক রোগে আক্রান্ত হন শুয়ের বন্ধু ঝাং। আর পাঁচটা শিশুর মতো সে হাঁটতে-চলতে পারতো না। তবে প্রবল ইচ্ছা থাকায় স্কুলে ভর্তি হয় সে। প্রথম শ্রেণী হতেই শু’য়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তার। সেই থেকেই শুরু। এখন তারা ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। পিঠে করে ঝাংকে ক্লাসে পৌঁছানো থেকে শুরু করে তার বোতলে পানি ভরে দেওয়া সবই করেন শু।
অন্য ক্লাসরুমে গিয়ে অর্থাৎ বিশেষ কোনও ক্লাস করা। হোমওয়ার্কের খাতা জমা দেওয়া, টিফিন খাওয়ানো। সব কিছুই শু করে আসছে এ যাবত কাল ধরে। তাদের স্কুলেরই এক শিক্ষক জানান, প্রথম দিকে ক্লাসের সব ছেলেই ঝাংকে সাহায্য করতো।
তবে বছর যতো গড়িয়েছে, ঝাংয়ের জন্য বাকি সবার সময় তখন কম পড়েছে। তাদের পড়া, খেলা, অন্য কাজও বেড়েছে। সব দিক সামলাতে গিয়ে ঝাংয়ের দিকে তাকাতে পারেনি অন্য কেও। তবে ব্যতিক্রম শু।
ওই শিক্ষকই জানালেন যে, প্রথম দিকে শু’য়ের মা-ও জানতেন না তার ছেলে স্কুলে প্রতিদিন পিঠে করে বন্ধুকে তুলে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে তার সমস্ত কাজ করে দেয়। মুখচোরা শু নিজেই বিষয়টি জানাতে চায়নি বাড়ির কাওকে। পরে শু’য়ের বন্ধুরাই এক দিন সব জানিয়ে দেয় তার মাকে।
নিজের বয়সি কাওকে পিঠে করে ঘুরতে কষ্ট হয় কি না? এমন এক প্রশ্নের জবাবে শু জানিয়েছে, ঝাংয়ের চেয়ে তার ওজনই অনেক বেশি। বারো বছর তাই নির্দ্বিধায় বলেছে যে, ‘‘আমি তো চল্লিশ কেজিরও উপরে। ও মাত্র ২৫ কেজির মতো। আমি ওর চেয়ে লম্বাও। আবার শক্তিশালীও। তাছাড়া আমি না করলে ওকে আর কে-ই বা সাহায্য করতো।’’
এমন একজন বন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতার যেনো শেষ নেই ঝাংয়ের। সে বলছে, ‘‘শু আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। প্রতিদিন আমি ওর সঙ্গে পড়ি, খেলি, গল্প করি। এভাবে সব সময় আমার পাশে থাকার জন্য ওকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানায়।’’