দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নাটক সৃষ্টি সম্পর্কে আমাদের অনেকের কোনো ধারণাই নেই। বিশেষ করে বাংলা নাটক সৃষ্টি সম্পর্কেও আমরা একেবারেই অজ্ঞ। আজ জেনে নিন বাংলা নাটক সৃষ্টি সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য।
প্রাচীনকালে ভারতবর্ষে সংস্কৃত নাটক অভিনয় হতো। তারপর আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণের পর গ্রীকদের উৎসাহে আবার নাটক অভিনয় শুরু হয়েছিলো। ইউরোপীয় নাটকের প্রভাবে বাংলাদেশে নাটক অভিনয়ের ঝোঁক দেখা যায়। ক্রমে এদেশের সাহেবদের উদ্দ্যোগে কয়েকটি নাট্যশালা গড়ে ওঠে। তখন ওইসব নাট্যমঞ্চে মূলত ইংরেজি নাটক অভিনয় হতো। তবে দু’একটি সংস্কৃত নাটকের ইংরেজি অনুবাদও অভিনীত হতো।
হেরামিস লেবেডেফ নামে জনৈক রুশ বণিক দু’টি ইংরেজি নাটকের বাংলা অনুবাদে একটি নাট্যমঞ্চে অভিনয় করান। এরপর দেশীয় ভদ্রলোকরা নাট্যমঞ্চ প্রতিষ্ঠিত করে নাটক অভিনয় করাতে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। তারপর হতে এইসব রঙ্গমঞ্চে অভিনয়ের জন্য বাংলা নাটক লেখা হতে লাগলো। তারাচাঁদ সিকদারের ‘ভদ্রার্জুন’ ছিলো পাশ্চাত্য রীতিতে লেখা প্রথম বাংলা নাটক। রামনারায়ণ তর্করত্নের লেখা ‘কুলীনকুলসর্বস্ব’ ছিলো বাংলা ভাষায় প্রথম সামাজিক নাটক।
তারপর একের পর এক নাটক আসতে থাকে। যেমন ‘বেণীসংহার’, ‘রত্নাবলী’, ‘মালতীমাধব’, ‘নবনাটক’, ‘যেমন কর্ম তেমন ফল, চক্ষুদান ‘ ইত্যাদি বহু নাটক তিনিই লেখেন। বেলগাছিয়া রঙ্গমঞ্চে রামনারায়ণ তর্করত্নের ‘রত্নাবলী’ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ অভিনীত হয়। মাইকেল মধুসূদন দত্ত সেই অনুবাদ কার্যেই উৎসাহী ছিলেন। তারপর তিনি নিজেই বাংলা নাটক লেখার কাজে নেমে পড়েন। তিনি ১৮৫৯ সালে তাঁর লেখা ‘শর্মিষ্ঠা’ নাটক পাইকপাড়ার রাজাদের বেলগাছিয়া নাট্যশালায় অভিনয় করান। এরপর লিখলেন ‘পদ্মাবতী’ নাটকটি। এই নাটকে তিনি প্রথম ইংরেজি মিলহীন (blank verse) রীতিতে ‘অমিত্রাক্ষর ছন্দের ‘ ব্যবহার করেন। তারপর ‘কৃষ্ণকুমারী’ এবং ‘ মায়াকানন’ লেখেন তিনি।
অপরদিকে ‘নীলদর্পণ’ নাটক হলো কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সমসাময়িক নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের লেখা অতি বিখ্যাত একটি বই। নীলকরদের অত্যাচার নিয়ে লেখা এই নাটক সেই সময় এই দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। শেষপর্যন্ত নীলকরদের অত্যাচার বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় গিরিশচন্দ্র ঘোষ নিজে অভিনয় শেখাতেন, রঙ্গমঞ্চ পরিচালক করতেন ও নাটক লিখতেন। এই আমলের একজন প্রতিভাবান নট এবং নাট্যকার ছিলেন ‘রসরাজ’ অমৃতলাল বসু। তাঁর লেখা অনেক নাটকের মধ্যে ‘বিবাহবিভ্রাট’, ‘ তরুবালা’, ‘বিল্বমঙ্গল’ উল্লেখযোগ্য নাটক। গীতিকার ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ‘ডি,এল,রায়’ নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি বেশ কয়েকটি প্রহসন রচনা করে বাংলা নাটকে নতুনত্ব আনেন। তাঁর রচিত নাটকগুলো বাঙালিদের মনে নতুন ভাবধারা এবং স্বাদেশিকতা আনতে সমর্থ হয়েছিলো।