দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, যুদ্ধ, সহিংসতা ও হত্যা থেকে বাঁচতে ২০১৮ সালে বিশ্বে ৭ কোটিরও বেশি মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। সেই হিসেবে প্রতিদিন বিশ্বে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয় অন্তত ৩৭ হাজার মানুষ!
জাতিসংঘের এই সংস্থাটির শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানায়, বিগত ৭০ বছরের মধ্যে ঘরহারা মানুষের এই সংখ্যা ছিলো সর্বোচ্চ।
সম্প্রতি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা প্রকাশিত বার্ষিক গ্লোবাল ট্রেন্ডস প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ২০১৮ সালে ৭ কোটি ৮ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয় যা গতবছরের তুলনায় প্রায় ২৩ লাখ বেশি। ২০ বছর আগের সংখ্যার তুলনায় এটি দ্বিগুণ। সংস্থাটি আরও জানায়, ঘরহারা মানুষের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও বেশি হতে পারে। কারণ হলো ভেনেজুয়েলা সংকটে ঘরহারাদের সংখ্যা এই প্রতিবেদনে আংশিকভাবে উঠে এসেছে। ভেনেজুয়েলার শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া দেশগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ।
বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের সঙ্গে সঙ্গে এই বাস্তুহারাদের সংখ্যা বৃদ্ধি হারের আনুপাতিক সম্পর্কও উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনে। ১৯৫১ সালে শরণার্থী কনভেনশন এর পর হতে প্রণীত তালিকা অনুযায়ী এর আগ পর্যন্ত ১৯৯২ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ ঘর হারিয়েছিল। প্রতি এক হাজারে মানুষে সেই বছর বাস্তুহারার হার ছিলো ৩.৭ শতাংশ। ২০১৮ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩ শতাংশে।
জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে ঘরহারাদের ৩টি ভাগে পর্যায়ভূক্ত করা হয়েছে। একটি ভাগে রয়েছে যুদ্ধ, হত্যা বা সহিংসতা হতে বাঁচতে দেশ থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীরা। ২০১৮ সালে এমন শরণার্থীদের সংখ্যা দাঁড়ায় ২ কোটি ৫৯ লাখ, যা ২০১৭ সালের চেয়েও ৫ লাখ বেশি। শুধু ফিলিস্তিনিতে শরণার্থীই রয়েছে ৫৫ লাখ।
দ্বিতীয় ভাগে আছে সেইসব রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী, যারা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিতে নিজের দেশ ছেড়ে অন্য কোনো দেশে আশ্রয় নিয়েছে, তবে এখনও শরণার্থী স্বীকৃতি পায়নি। তাদের সংখ্যা হলো ৩৫ লাখ।
তৃতীয় ভাগে রাখা হয়েছে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদেরকে। তারা ঘর ছাড়তে বাধ্য হলেও নিজ নিজ দেশেই অবস্থান করছেন। বিশ্বজুড়ে এই সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ১৩ লাখ।
বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ শরণার্থীই সিরিয়া, আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান, মিয়ানমার এবং সোমালিয়ার নাগরিক। তার মধ্যে সিরীয় শরণার্থীই সবচেয়ে বেশি। এই ৬৭ লাখ শরণার্থীর মধ্যে ২০১৮ সালে মাত্র ৯২ হাজার ৪০০ জন শরণার্থী পুনর্বাসিত হয়েছেন, যা মূলত ৭ শতাংশেরও কম। অপরদিকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক শরণার্থী রয়েছে আফগানিস্তানে। তাদের সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্দি বলেছেন, প্রাপ্ত পরিসংখ্যান হতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে যুদ্ধ, হত্যা এবং সহিংসতা থেকে পালিয়ে বেড়ানো মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০০৯ সাল হতে প্রতিবছরই বাস্তুহারাদের সংখ্যা বাড়ছে। ২০০৯ সালে বাস্তুহারার সংখ্যা ছিলো ৪ কোটি ৩৩ লাখ। ২০১২ হতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সিরিয়া সংকটের কারণে শরণার্থী বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি ছিলো। তাছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে ইরাক ও ইয়েমেন, সাব সাহারান আফ্রিকায় ডিআর কঙ্গো ও দক্ষিণ সুদানের মতো দেশগুলোর সহিংসতাও এই সংখ্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
অপরদিকে ২০১৭ সালের শেষ দিকে মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে, যা প্রায় ১২ লাখের মতো। ইথিওপিয়ানদের মধ্যে শরণার্থী সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। তাদের ৯৮ শতাংশই অভ্যন্তরীণ শরণার্থী যা বিগত সংখ্যার থেকে দ্বিগুণেরও বেশি। এর মূল কারণই হলো জাতিগত সহিংসতা। বাংলাদেশের আশ্রয় গ্রহণ করা শরণার্থীদেরও ওই একই সমস্যা জাতিগত। একমাত্র ধর্মের কারণে রহিঙ্গাদেরকে বিতাড়িত হতে হয়েছে।