দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সত্যিই আজব এক দেশ। এমন এক দেশ যে দেশে প্রেম কিংবা বিয়ে নির্ভর করে জিন পরীক্ষার ওপর! আপনি কী কখনও শুনেছেন এমন আজব দেশের কথা?
পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে মানুষ নিজের পছন্দ অনুযায়ী প্রেম বা বিয়ের মতো সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে থাকেন। তবে এবার এমন এক দেশের খবর পাওয়া গেছে যে দেশে প্রেম কিংবা বিয়ে নির্ভর করে জিন পরীক্ষার ওপর! সেই দেশটি হলো নাইজেরিয়া। বর্তমানে প্রেম বা বিয়ে করার পূর্বে বিবাহযোগ্য নারী-পুরুষকে চিন্তা করতে হয় ভবিষ্যত প্রজন্মের বিষয়টির দিকে। জিন পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে বিয়ের মতো সম্পর্কের বিষয়ে ভাবতে হয় তাদেরকে। কারণ হলো দেশটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের শরীরে এমন কিছু জিন রয়েছে যেগুলো ভবিষ্যতে সিকল সেল ডিজিজের (এসসিডি) জন্য দায়ী হতে পারে।
সম্প্রতি বিয়ে করেছেন নাইজেরিয়ার যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ডেমিলোলা ওগুনপেবি। তবে এই বিয়ে করার জন্য তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ এক বিশাল পথ। বিয়ের উপযোগী পাত্রীর সন্ধানে তাকে অনেক রকমভাবে অনুসন্ধান করতে হয়েছে। এমন অনেককে পছন্দ হলেও দুই জনের জিন পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফল না আসার কারণে বিয়ে করা হয়নি তার।
ডেমিলোলা ওগুনপেবি বলেন, আমি আমার বর্তমান সঙ্গীকে খুঁজে পাওয়ার পূর্বে দীর্ঘদিন খোঁজখবর করতে হয়েছে আমাকে। উপযুক্ত জিনোটাইপের সমস্যা ছিল তাই। যখনই কারও সঙ্গে ‘ডেটে’ যেতাম প্রথমেই আমাকে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হতো—তোমার জিনোটাইপটি কী? এইভাবে অনেকের সঙ্গে দেখা করলেও দুই জনের জিনোটাইপের সমন্বয় না হওয়ার কারণে সেসব সম্পর্ক কখনও সামনে এগোয়নি। মূলত যাদের জিনে সিকল সেল ডিজেজের গুণাগুণ থাকে তাদের সঙ্গে বিয়ের মতো সম্পর্ক তৈরিতে অনীহা প্রকাশ করে দেশটির মানুষ।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, সিকল সেল ডিজেজ হলো মূলত উত্তরাধিকারী রক্তের ব্যাধি। অর্থাৎ বাবা-মায়ের রক্তের মাধ্যমে এটি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে চলে যায়। এসসিডিতে আক্রান্তদের রক্তের কোষের গঠন সাধারণত সি আকারের হয়ে থাকে। সুস্থ রক্তের হিমোগ্লোবিন শরীরে অক্সিজেন পরিবহন করে থাকে। সুস্থ ব্যক্তির রক্তের হিমোগ্লোবিন সাধারণত মসৃণ, গোলাকার ও নমনীয় হয়ে থাকে। তবে এসসিডিতে আক্রান্তদের রক্তের হিমোগ্লোবিনের আকার অস্বাভাবিক হয়ে থাকে। এই ধরনের রোগীদের শরীরে অ্যানিমিয়া, অসম্ভব ব্যথা ও অন্যান্য উপসর্গও দেখা দেয়। সেই কারণে জিনোটাইপ পরীক্ষা না করে যখন এই ধরনের ব্যক্তিরা বিয়ে করে সন্তান জন্ম দেবে তখন ওইসব সন্তানের সিকল সেল ডিজেজে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থেকে যায়। প্রতিবছর নাইজেরিয়াতে দেড় লাখের বেশি শিশু এসসিডি রোগ নিয়ে জন্ম হয়- যা কি না বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
২০০৬ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয় যে, দেশটিতে গড়ে ২৪ শতাংশ মানুষ সিকল সেল জিন বহন করে চলেছে। প্রতি হাজারে অন্তত ২০টি শিশুর জন্ম নিয়ে থাকে সিকল সেল নিয়ে।