দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট হিসেবে খ্যাত সুন্দরবন এলাকায় গত ১২ বছরে একশটিরও বেশি ডলফিন ও শুশুকের মৃত্যু হয়েছে। এই হিসাব অনুযায়ী বছরে গড়ে প্রায় ৯টি ডলফিন ও শুশুক মারা পড়েছে।
ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি বাংলাদেশের (ডব্লিউসিএস বাংলাদেশ) তথ্য মতে, এসব ডলফিনের প্রায় এক তৃতীয়াংশই জেলেদের জালে আটকা পড়ে মারা যায়।
সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩১ জুলাই রাতে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার বড় দুর্গাপুর এলাকাতে। সেখানকার মোংলা নদীতে ভেসে ওঠে একটি মৃত শুশুক (বিপন্ন ডলফিন)। প্রায় ৮ ফুট দীর্ঘ ও ৩ মণ ওজনের শুশুকটির মৃতদেহ উদ্ধারের পর সেটির দাঁতে জাল প্যাঁচানো দেখতে পায় উদ্ধারকারীরা। পরে বন বিভাগের কর্মকর্তারা নিশ্চিত হন যে, মাছ ধরার জালে আটকে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ডলফিনটির মৃত্যু ঘটেছে।
ডব্লিউসিএস বাংলাদেশের রেকর্ড মতে, ২০০৭ সাল হতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সুন্দরবন ও এর আশেপাশের এলাকায় তিন প্রজাতির ১০৮টি ডলফিন এবং শুশুক মৃত্যু ঘটেছে। যারমধ্যে ছিলো ৮০টি শুশুক, ২৪টি ইরাবতি ডলফিন, ৪টি পাখনাহীন পরপয়েস। এগুলো সাধারণতভাবে জেলেদের কারেন্ট জাল, বেহুন্দি জাল, ইলিশ ধরা জাল এবং বড়শিতে আটকা পড়ে মারা যায়। আবার কিছু মারা গেছে নৌযানের আঘাতেও। কিছু হত্যার শিকার হয়েছে।
বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা এবং প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খুলনা অঞ্চলের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. মদিনুল আহসান সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত ৬ বছরে সুন্দরবন এলাকায় জেলেদের জালে আটকে পড়ে ১৪টি ডলফিন এবং শুশুকের মৃত্যু ঘটেছে। গত ৩১ জুলাই উদ্ধার হওয়া শুশুকটির মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্ত করা হয়।
বন বিভাগের খুলনা বিভাগীয় মৎস্য বিশেষজ্ঞ মফিজুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, ‘৩১ জুলাই উদ্ধার হওয়া শুশুকটি জালে আটকে মারা গিয়েছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২ অনুযায়ী গাঙ্গেয় প্রজাতির ডলফিন হত্যাকাণ্ড একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
জানা যায় যে, নদীতে পেতে রাখা মাছ ধরার জালে আটকে পড়ে প্রায়ই মারা যাচ্ছে শুশুক এবং ইরাবতি ডলফিন। সুন্দরবন অঞ্চল ও তৎসংলগ্ন নদীগুলোয় এই দুই প্রজাতির ডলফিন জেলেদের জালে আটকে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে বেশি।
‘আইডেন্টিফাইং ডলফিন হটস্পট ইন সাউথ ইস্টার্ন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, উপকূলীয় অঞ্চলে ২০০১ সালে পরিচালিত এক সমীক্ষায় সুন্দরবনে তুলনামূলক কম লবণাক্ত এলাকায় ২২৫টি শুশুকের উপস্থিতি শনাক্ত করেন ডব্লিউসিএস বাংলাদেশের গবেষকরা। ২০১৮ সালের জানুয়ারি হতে এপ্রিল পর্যন্ত পরিচালিত এক সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী জানা যায়, সুন্দরবনে শুশুকের সংখ্যা ১৫৯। তাছাড়া ২০০৬ সালের এক সমীক্ষায় সুন্দরবন এলাকায় ইরাবতি ডলফিন শনাক্ত হয় ৪৫১টি। জানুয়ারি হতে এপ্রিল পর্যন্ত করা সমীক্ষায় সুন্দরবনে ইরাবতির সংখ্যা ছিলো ১৯৮টি।
এইসব ডলফিন সম্পর্কে ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি বাংলাদেশের এডুকেশন অ্যান্ড লাইভলিহুড প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটর নাদিম পারভেজ বলেছেন, ‘বন্যপ্রাণী (প্রকৃতি ও সংরক্ষণ) আইন ২০১২ অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রাপ্ত সব প্রজাতির ডলফিনই সুরক্ষিত প্রাণী। এগুলো শিকার করা, হত্যা করা, বা এর কোনও অংশ খাওয়া বা বিক্রি করা আইনত একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। এসব ডলফিন নদী এবং সাগরের পরিবেশ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে তাকে। এদের সংখ্যা কমে যাওয়া অর্থই হলো, মাছের পরিমাণও কমে যাওয়া। তাই এগুলো বিলুপ্ত হলে তা আমাদের জীবন-জীবিকার ওপরও একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সুতরাং এদের সুরক্ষায় আমাদের সর্বস্তরের জনগণকে সচেষ্ট হতে হবে।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন