দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাস টার্মিনালে টিকিট কাউন্টারের সামনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মানুষ। প্রত্যেকের হাতেই প্লাস্টিকজাতীয় বর্জ্য পদার্থ! উদ্দেশ্য একটাই, কাউন্টারে জমা দেবেন প্লাস্টিক; তাহলেই পাওয়া যাবে বাসের টিকিট!
সংবাদ মাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন একটি ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার শহর সুরাবায়াতে। যে সকল যাত্রীরা কাউন্টারে প্লাস্টিকজাতীয় বর্জ্য জমা দেবেন, তাদেরকে আলাদা করে অর্থ খরচ করে টিকিট কাটতে হবে না। তারা বিনামূল্যেই পেয়ে যাবেন টিকিট।
মূলত সমুদ্র দূষণ কমাতেই সুরাবায়া শহরের প্রশাসন এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চীনের পর সমুদ্র দূষণের দিক থেকে দ্বিতীয় দেশ হলো ইন্দোনেশিয়া। দূষণ কমানোর জন্য নতুন এক প্রকল্প হাতে নিয়েছে দেশটি। ২০২৫ সালের মধ্যে সমুদ্রে প্লাস্টিকজাতীয় বর্জ্যের পরিমাণ ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে দেশটি। সেই উদ্দেশ্যে প্লাস্টিক বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের (রিসাইক্লিং) ওপর মনোযোগী হয়েছে দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতেই তাই এমন একটি অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুরাবায়ার প্রশাসন।
বলা হয়েছে, ৩টি বড় আকারের প্লাস্টিক বোতল বা ৫টি মাঝারি আকারের বোতল জমা দিলে পাওয়া যাবে এক ঘণ্টা দূরত্বের যাত্রাপথের একটি টিকিট। আবার বোতল না থাকলে ১০টি প্লাস্টিকের কাপ জমা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে একই টিকিট। তবে শর্ত একটাই, বোতলগুলো নোংরা থাকা যাবে না বা দুমড়ানো-মোচড়ানো অবস্থায় থাকলে হবে না।
দেশটির প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে সাড়াও পাওয়া গেছে ব্যাপক। যাত্রীরা নিজ উদ্যোগেই প্লাস্টিক বর্জ্য জমা দিয়ে ফ্রিতে ভ্রমণ করছেন গণপরিবহনে। প্রায় ৩০ লাখ মানুষের সুরাবায়া শহরে প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১৬ হাজার যাত্রী প্লাস্টিকের বিনিময়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন বলে জানা যায়। ৪৮ বছর বয়সী শহরের একজন বাসিন্দা ফ্রান্সিসকা নুগরাহেপি সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, ‘খুবই বুদ্ধিদীপ্ত একটি সমাধান। যেখানে সেখানে ছুড়ে ফেলার বদলে লোকজন এখন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে রাখছে এবং সেগুলো কাউন্টারে নিয়ে আসছে।’
নুরহায়াতি আনোয়ার নামে জনৈক যাত্রী তার তিন বছরের সন্তানকে নিয়ে সপ্তাহে একদিন প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাসে ভ্রমণ করছেন। বিনা খরচে বাসে ভ্রমণ করার জন্য সপ্তাহজুড়ে পৃথক করে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে রাখছেন, এমনটিও জানিয়েছেন ৪৪ বছর বয়সী আনোয়ার। তিনি বলেছেন, ‘অফিসে হোক কিংবা বাসায় হোক, ফেলে না দিয়ে মানুষ বর্তমানে বর্জ্য সংগ্রহ করে রাখার চেষ্টা করছে। সুরাবায়ার মানুষ এখন বুঝতে শিখেছে, প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য ভীষণভাবে ক্ষতিকর একটি সামগ্রী।’
সুরাবায়ার জনৈক পরিবহন কর্মকর্তা ফ্রাঙ্কি ইউনুস বলেছেন যে, শুধু প্লাস্টিক দূষণ কমানোর জন্য তা নয়, বরং শহরের মানুষকে গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহী করে তুলতেও এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। ফ্রাঙ্কি ইউনুস আরও বলেন, ‘মানুষের কাছ থেকে বেশ ভালো সাড়া মিলছে। প্লাস্টিকের বিনিময়ে ভ্রমণের এই সুবিধা মানুষকে গণপরিবহন ব্যবহারে আরও আগ্রহী করে তুলছে।’