দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ‘আদিম মানুষ’ বিষয়টি মাথায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের হৃদয়পটে ভেসে আসে এক ধরণের ছবির বিষয়টি। যে ছবিতে কতই না ভাবনার বিষয় প্রসারিত হয়ে থাকে। এবার এমন এক ৭৫ হাজার বছর পূর্বের কিশোরীর মুখাবয়ব নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
আমরা জানি আদিম মানুষ গুহায় বসবাস করতো। তারা কাঁচা মাংস খেতো। তবে আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ নিয়ানডার্থাল বা ডেনিসোভানরা আসলে দেখতে কেমন ছিলো, সেটি নিয়ে চলছে নানা গবেষণা। অবশেষে ৭৫ হাজার বছর পূর্বের এক কিশোরীর মুখাবয়ব গড়তে সক্ষম হয়েছেন গবেষকরা।
সংবাদ মাধ্যমের এক তথ্যে জানা যায়, ইসরায়েলের একদল গবেষক ডেনিসোভান যুগের জীবাশ্ম হতে পাওয়া হাড়ের ডিএনএ বিশ্নেষণের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে প্রাগৈতিহাসিক ওই কিশোরীর মুখ।
এই বিষয়ে হিব্রু ইউনিভার্সিটির জেনেটিকস বিষয়ের অধ্যাপক লিরান কারমেল বলেছেন, ২০০৮ সালে সাইবেরিয়ার ডেনিসোভা নামের একটি গুহায় ডেনিসোভান মানুষের অস্তিত্বের প্রমাণও পাওয়া গেছে। সেখানে পাওয়া একটি আঙুলের জীবাশ্ম ছিল ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরীর। হাড়ের ডিএনএ বিশ্নেষণের মাধ্যমে জানা যায়, ৭৫ হাজার বছর পূর্বে ওই কিশোরীর মৃত্যু হয়েছিল। পরে ডেনিসোভান মানুষের আরও ৩টি দাঁত, একটি ঈষৎ লাল হাড় ও চোয়ালের নিম্নাংশও পেয়েছেন গবেষকরা।
অধ্যাপক লিরান কারমেল বলেছেন, একজন ডেনিসোভান মানুষের পূর্ণাঙ্গ প্রতিকৃতি গড়তে এই উপাদানগুলোই যথেষ্ট। আমরা প্রথমবারের মতো বিশদভাবে এটির শারীরিক পুনর্গঠন প্রস্তুত করেছি, এতে করে সেসব মানুষ কেমন ছিল, তা আমরা বুঝতে পারবো খুব সহজেই। মূলত আমরা এবং তারা একই ধরনের।
অধ্যাপক লিরান কারমেল আরও বলেছেন, গবেষক দল প্রাচীন ডিএনএ বোঝার জন্য একটি প্রযুক্তিও তৈরি করেছেন। বিশেষ করে জিন সম্পর্কে জানার জন্য। যেমন: ব্যাঙের সঙ্গে ব্যাঙাচির ডিএনএর পার্থক্য, যদিও তাদের ডিএনএ প্রকৃতপক্ষে অভিন্ন। তিনি আরও জানিয়েছেন, ডিএনএ অনুযায়ী ডেনিসোভান মানুষদের ত্বক, চোখ এবং চুলও ছিল কালো। তবে তারা জিনগত বৈশিষ্ট্য হতে অনুমান করার চেষ্টা করেছেন, কীভাবে ডেনিসোভানরা নিয়ানডার্থালস এবং আধুনিক মানুষ হতে পৃথক হয়েছিল। গবেষণায় এই ধরনের ৫৬টি বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করা গেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
বিজ্ঞানীদের মতে, আজ থেকে প্রায় ৪/৩ লাখ বছর পূর্বে হোমো হাইডেলবার্গেনসিস একটি দল আফ্রিকা থেকে যাত্রা শুরু করে। এই গবেষণা দলটি পরে দুটি স্বতন্ত্র দলে পরিণত হয়। দল দুটি হলো- নিয়ানডার্থাল এবং ডেনিসোভান। এদের মধ্যে নিয়ানডার্থাল মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপে পাড়ি দেন। অপরদিকে ডেনিসোভানরা পূর্ব দিকে চলে যান। এদের অপর একটি দল চলে যায় সাইবেরিয়ার দিকে। এই দলেরই জীবাশ্ম নমুনা পাওয়া যায় সাইবেরিয়ার আল্টাই পর্বতের ডেনিসোভা গুহায়।
ডেনিসোভানদের অপর দলটি চলে যায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হয়ে একেবারে অস্ট্রেলিয়ার দিকে। সম্প্রতি তিব্বতের একটি গুহায়ও ডেনিসোভানদের বাস করার প্রমাণ পাওয়া পান গবেষকরা। গবেষকরা বলেছেন, ডেনিসোভানরা প্রায় ৩০ হাজার বছর পূর্বে পৃথিবী হতে বিলুপ্ত হয়েছিল।
তথ্যসূত্র : গার্ডিয়ান ও সায়েন্স ম্যাগাজিন