দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার মামলায় ২৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গতকাল (বুধবার) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগের নেতাসহ বুয়েটের ২৫ ছাত্রের সম্পৃক্ততাও পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। তাদের সবাইকেই চার্জশিটভুক্ত করা হয়। এই মামলায় সাক্ষী হয়েছেন ৩০ জন। এক মাসের মধ্যে এই মামলার তদন্ত শেষ করলো ডিবি পুলিশ।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ, আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং তদন্তে পাওয়া তথ্যানুযায়ী চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, শিবিরকর্মী সন্দেহে আবরারকে খুন করা হয়। আসামিরা ওই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অংশ নেন। চার্জশিটে যে ২৫ জনকে আসামি করা হয়, তাদের মধ্যে ২১ আসামিই কারাগারে রয়েছেন। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৬ জন ও এজাহারের বাইরে ৫ জন আসামি রয়েছে। এজাহারভুক্ত তিন আসামি এখনও পলাতক রয়েছে। অপরদিকে অপর আরেকজন অভিযুক্তও পলাতক রয়েছে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্যে এজাহারভুক্ত ৮ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে অপর আসামিদের সম্পৃক্ততাও উঠে আসে। তাছাড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুই জন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন। এর বাইরে তদন্ত কর্মকর্তারা বুয়েটের শিক্ষক, শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট, চিকিৎসক, নিরাপত্তাকর্মীসহ বিভিন্নজনের সাক্ষ্যও নিয়েছেন। চার্জশিটে তাদের সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে।
অপরদিকে চার্জশিটের সঙ্গে আলামত হিসেবে আবরারের রক্তমাখা জামা-কাপড়, মেসেঞ্জারে ওইসব আসামিদের লিখিত যোগাযোগ, প্রযুক্তিগত অন্যান্য আরও যোগাযোগ, শেরেবাংলা হলের সিসিটিভি ফুটেজসহ ঘটনাস্থল হতে জব্দ করা আলামতও জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
আসামিদের অন্তত ১১ জন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে অধিষ্ট ছিলেন। অপর আসামিরাও ছাত্রলীগের কর্মী কিংবা সমর্থক। তবে আবরার হত্যাকাণ্ডের পর ছাত্রলীগ হতে পদধারীদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। তাছাড়াও ঘটনার পর বুয়েটে ছাত্র রাজনীতিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে মামলার তদন্তের সময় রাজনৈতিক পরিচয় বাদ দিয়ে তাদেরকে কেবলমাত্র অপরাধী হিসেবেই বিবেচনা করা হয়েছে। চার্জশিটেও এর প্রতিফলন রয়েছে। কার কী অপরাধ, কতোটুকু অপরাধ- তা চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
চার্জশিটভুক্ত আসামি
মেহেদী হাসান রাসেল, মুহতাসিম ফুয়াদ, অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশররফ সকাল, মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, অমিত সাহা, মাজেদুল ইসলাম, মো. মুজাহিদুল, মো. তানভীর আহমেদ, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. জিসান, শামীম বিল্লাহ, মো. আকাশ, মো. সাদাত, মো. তানিম, মো. মোর্শেদ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, মুনতাসির আল জেমি, মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না ও এস এম মাহমুদ সেতু প্রমুখ।
এদের মধ্যে মুন্না, অমিত সাহা, মিজান, রাফাত ও সেতুর নাম এজাহারে ছিল না। আর আসামিদের মধ্যে রাসেল ছিলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক, ফুয়াদ সহসভাপতি, অনিক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, রবিন সাংগঠনিক সম্পাদক, সকাল উপ-সমাজসেবা সম্পাদক, মনির সাহিত্য সম্পাদক, জিয়ন ক্রীড়া সম্পাদক, রাফিদ উপ-দপ্তর সম্পাদক, অমিত সাহা উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক ও তানিম, মুজাহিদুর এবং জেমি সদস্য।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, মামলার এজাহারভুক্ত তিন আসামি মো. জিসান, মোর্শেদ ও এহতেশামুল তানিম এখনও পলাতক রয়েছে। এই মামলায় এজাহারভুক্ত ৮ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- নাজমুস সাদাত, ইফতি মোশাররফ, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর এবং মনিরুজ্জামান মনির।
উল্লেখ্য, ৬ অক্টোবর রাতে শেরেবাংলা হলে নিজের কক্ষ হতে আবরারকে ডেকে নিয়ে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। পরের দিন আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলাটি ডিবি পুলিশ তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে এই চার্জশিট দাখিল করলো।
এদিকে আইনমন্ত্রী গতকাল (বুধবার) এই মামলা সম্পর্কে এক প্রতিক্রিয়ায় মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিয়ে বিচার দ্রুততম সময়ের মধ্যে ১৩৫ (সর্বোচ্চ) দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্যির কথা জানিয়েছেন। এদিকে আবরাতের মা তার সন্তান হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ফাঁদি দাবি করেছেন।