দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আল্লাহ তাআলার নাজিল করা পবিত্র কুরআনের প্রথম আলোয় আলোকিত যে পাহাড় তাই হলো জাবালে নূর। যে পাহাড়ের গুহায় প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহি লাভের জন্য ধ্যানমগ্ন থাকতেন।
বিশ্বব্যাপী যে পাহাড়কে গারে হেরা বা হেরা গুহা নামেই সবচেয়ে চেনেন বা জানেন। জাবালে নূর কিংবা গারে হেরা তথা হেরা গুহা সম্পর্কে জানতে মানুষের যেনো আগ্রহের শেষ নেই। জাবালে নূরে যে গুহায় বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধ্যানমগ্ন থাকতেন। সেখানে ওঠা মোটেও সহজ ছিল না তখন। ছিল না উপরে ওঠার কোনো সহজ পথ। বর্তমানে যেখানে ওঠতে শক্তিশালী ও সামর্থবান মানুষদের প্রায় ১ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। প্রায় ১০০০ ফুট উচ্চতার ভয়ংকর পথ পাড়ি দিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠতে বেশ কয়েকবার বিশ্রামও নিতে হয় যে কাওকে। সমতল ভূমি হতে পাহাড়ের ওপরের দিকে প্রায় ২০০ ফুট হতে ২৫০ ফুট পথ গাড়িতে যাওয়া যায়। সেখান থেকে হেরা গুহা অবস্থিত ৮৯০ ফুট উচ্চতায়। হেরা গুহায় যেতে আরও প্রায় ১০০ ফুট রাস্তা পাড়ি দেওয়া লাগে। কেনোনা পাহাড়ের চূড়া হতে বিপরীত দিকে একটু নিচে অবস্থিত হেরা গুহায় যাওয়াটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ একটি বিষয়। হেরা গুহাটি পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় না হলেও সেখানে যেতে হলে পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠতে হবে। সেখানে ওঠা ছাড়া হেরা গুহায় যাওয়ার অন্য কোনো বিকল্প পথও নেই। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে গুহায় ধ্যান করেছিলেন, সেটি আকারে ছিলো অনেক ছোট। যেখানে একজন সুঠামদেহী মানুষ সঠিকভাবে নড়াচড়া করতেই কষ্টকর হয়ে যায়। জাবালে নূর খ্যাত হেরা পাহাড়ে রয়েছে বেশ কিছু আকর্ষণীয় তথ্য। জেনে নিন সেইসব অজানা তথ্যগুলো:
পবিত্র কাবা শরিফ হতে ২ মাইল দূরে অবস্থিত একটি পাহাড় হলো এই হেরা পাহাড়। পাহাড়ের নাম হেরা হলেও এটি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জাবালে নূর বা জাবালে হিরা নামেই অধিক পরিচিত। জাবালে নূর এর অর্থই হলো নূর বা আলোর পাহাড়।
কেনোনা এই পাহাড়েই আল্লাহর পক্ষ হতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর সর্বপ্রথম বরকতময় আলোকিত আল কুরআন নাজিল হয়। যা শুধু মুসলিম উম্মাহই নয় বরং বিশ্ব মানবতার জন্য নূর কিংবা আলো। সেই কারণেই এই পাহাড় বিশ্বব্যাপী জাবালে নূর নামেই পরিচিতি পেয়েছে।
হেরা গুহা এতো ছোট ও এর মধ্যকার জায়গা এতো কম যে, প্রথম দেখাতেই বিস্ময়কর মনে হয়। এই স্থানেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধ্যানমগ্নে নিয়োজিত ছিলেন। যার লম্বায় ৪ মিটার ও পাশে ১.৫ তথা দেড় মিটার। এর উচ্চতায় ভালোভাবে সোজা হয়ে দাঁড়ানোও কষ্টকর। যদিও সমতল হতে পুরো পাহাড়টির উচ্চতা প্রায় হাজার ফুটের মতো।
এই পাহাড়ের প্রায় চূড়া সংলগ্ন হেরা গুহায় ৬১০ খ্রিস্টাব্দে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারিম নাজিল করেছিলেন। যদিও এরআগে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক সত্য স্বপ্ন দেখতেন যা প্রকৃত পক্ষে ওহির সমতুল্য।
এই পাহাড়ে হেরা গুহায় ধন্যমগ্ন থাকা অবস্থায় সর্ব প্রথম হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম কুরআনের ওহি নিয়ে হাজির হন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন-
‘এক রাতে তাহাজ্জুদের সময় মানুষের আকৃতিতে একজন ফেরেশতা প্রিয় নবীর কাছে আসেন ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন যে, পড়ুন। উত্তরে রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি পড়তে জানি না। তারপরও ফেরশতা তাঁকে আরও দুইবার পড়ার অনুরোধ করেন, সে দুইবারই প্রিয় নবী জানালেন আমি পড়তে জানি না।
শেষ পর্যন্ত ফেরেশতা হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম কুরআনের ৯৬নং সুরার প্রথম ৫টি আয়াত পড়লেন। এটিই ছিল প্রিয় নবীর প্রতি হেরা গুহায় প্রথম ওহি। তিনি শুরু করেছিলেন এভাবে-
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ
خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ
اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ
الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ
عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ
জাবালে নূর খ্যাত এটিই সেই ঐতিহাসিক গুহা। যেখান থেকে এই ওহি লাভের মাধ্যমেই প্রথম শুরু হয়েছিল প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তি দায়িত্ব পালনের কঠিন জীবনের এক শুভ সূচনা। কেনোনা তিনি যখন ওহি নিয়ে হেরা গুহা হতে পাহাড়ের অর্ধেক নিচে নেমে আসেন, তখন তাঁর কানে একটি কণ্ঠের আওয়াজ ভেসে আসে- ‘হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর নবী আর আমি জিবরিল।’ তিনি পৃথিবীতে নবী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি হলেন আল্লাহ তাআলা সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ নবী ও রাসুল।
হেরা গুহায় যেদিন প্রথম জিবরিল আলাইহিস সালাম ওহি নিয়ে আসেন, সেই রাতটি ছিল প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য কঠিন এক রাত। সেই রাতে হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম বিদায় গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত প্রিয় নবী যেদিকেই তাকাতেন দেখতেন হযরত জিবরিল আলাইহিস সালাম সব দিক থেকেই সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এতে করে তিনি ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে নেমে আসার সময়ই তাঁর নবুয়তি পরিচয়সহ জিবরিল নিজের পরিচয় দেন। তারপর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেরা গুহা হতে নিজ ঘরে ফিরে আসলেন ও হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন যে, আমাকে কম্বল দিয়ে আবৃত করে দাও এবং জড়িয়ে ধরো। হেরা গুহা হতে কুরআনের প্রথম ওহি নাজিল হওয়ার পর হতে দীর্ঘ ২২ বছর ৫ মাস ১৪দিন সময় পুরো মানব জাতির জন্য সংবিধান হিসেবে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ওহি নাজিলের মাধ্যমে পুরো কুরআনুল কারিম অবর্তীণ করেন। যার শুভ সূচনা হয়েছিল এই জাবালে নূর হতেই। তথ্যসূত্র: https://techroc.info
This post was last modified on নভেম্বর ২৮, ২০১৯ 12:22 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ স্বপ্ন দেখে তা মনে রাখা সত্যিই দুষ্কর। আর তাই রাতের…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ৩০ কার্তিক ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকই সুজি খেতে খুবই ভালোবাসেন। তাই তারা প্রতিদিন সুজির পায়েস,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রথমবারের মতো প্যান ইন্ডিয়ান চলচ্চিত্র বানিয়েছেন নির্মাতা অনন্য মামুন। ঢালিউড…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনার যদি প্রতিদিন চিকেন খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে জেনে রাখুন,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’- এর অন্যতম সমন্বয়ক…