মানুষ কেনো বাদুড়ের শব্দ শোনে না?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক॥ বাদুড় (Bat) আমরা সবাই জানি। পৃথিবীর আজব প্রাণীদের মধ্যে একটি হলো এই বাদুর। এদের ডানা রয়েছে এবং আকাশেও উড়তে পারে তবে তারপরও এটি পাখি নয়। প্রাণী হিসেবে তাদের চিহ্নিত করা হয়ে থাকে!

আমরা জানি বাদুড়ের মুখ অনেকটা শিয়ালের মতোই। বাদুরদের খরগোশের মতো বড় বড় দুটো কানও রয়েছে। রয়েছে ছাতার মতো অদ্ভুত দুটি পাখাও। তবে বাদুড়ের সবচেয়ে আজব বিষয় হচ্ছে বড় বড় দুটি চোখ থাকতেও সেগুলো দিয়ে তারা দেখতে পায় না। অন্ধ চোখ দিয়ে না দেখলেও ঠিকই পথ চলতে পারে চোখে দেখা প্রাণীর মতোই। তবে দিনের আলোতে চলতে পারে না, বাদুড় চলে রাতের আঁধারে।

জানা গেছে, এইক্ষেত্রে বাদুড় তার চোখের দৃষ্টি নয়, কানের শব্দকেই ব্যবহার করে থাকে। চলাফেরার কাজটা সে করে মূলত কান দিয়েই। যদিও দিনের বেলা পথ চলতে বাদুড়ের মোটেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়, তবে বাদুড়ের তাতেও সমস্যা হয়। বাদুড় আসলে পথ চলে শব্দ তরঙ্গের সাহায্য নিয়ে। বাদুড় যখন পথ চলে তখন সে এক ধরনের শব্দ তরঙ্গ বাতাসে ছড়িয়ে দেয়। সেই শব্দই ঘরবাড়ি, গাছপালা, পাহাড়-পর্বত বা বড় কোনো বাধায় প্রতিফলিত হয়ে আবার ফিরে আসে বাদুড়ের কানে। বাদুড়ের মস্তিষ্ক প্রতিফলিত শব্দ হতে বুঝতে পারে সামনের বাধাটা আসলে কতো দূরে।

Related Post

শব্দ ছুঁড়ে দেওয়ার কিঠক কতোক্ষণ পর সেটা আবার কানে ফিরে আসে তার ওপর নির্ভর করেই বাদুড় বাধা এবং খোলা পথের নিশানা নির্ধারণ করতে পারে। বাদুড়ের মস্তিষ্ক এখানে সূক্ষ্ম কম্পিউটারের মতোই কাজ করে। কারণ সামনের বাধার দূরত্ব কতো সেটা বুঝতে অবশ্যই শব্দের বেগ ব্যবহার করতে হয়। বাদুড়ের মস্তিষ্ক নিশ্চয়ই সেটা জানে। মুহূর্তের মধ্যেই শব্দের বেগ, দূরত্ব ও সময়ের মধ্যে সঠিক অঙ্ক কষে সঠিক নিশানা ঠিক করতে পারে সে।

একটি বাস্তব সত্য হলো দিনের বেলায় মানুষসহ পৃথিবীর অধিকাংশ প্রাণীই জেগে থাকে। তাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের কারণে কোটি কোটি শব্দ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। দিবাচর প্রাণীদের নানা কোলাহলে বাদুড়ের পথচলার সেই বিশেষ শব্দ তরঙ্গ হারিয়ে যায়। তাই কোটি কোটি শব্দ তরঙ্গের ভিড়ে নিজের শব্দ তরঙ্গটি খুঁজে খুঁজে পায় না বলেই বাদুড় দিনের বেলা বাসা ছেড়ে কখনও বের হয় না।

পথচলার জন্য বাদুড় এক ধরণের শব্দ তরঙ্গ বাতাসে ছুঁড়ে মারে। যা আমরা কখনও শুনতে পাই না। রাতে পেয়ারা বা লিচু গাছে আক্রমণ করলে তখন বাদুড়ের কিচিরমিচির শব্দ শোনা যায়। তবে সেটা ওদের পথ চলার কোনো শব্দ নয়, ওটি ওদের সাধারণ ডাক। পথচলা এবং খাদ্য খোঁজার জন্য বাদুড় ইনফ্রাসনিক কিংবা আল্ট্রাসনিক শব্দ ব্যবহার করে থাকে। এসব শব্দ আমাদের কান কখনও ধরতে পারে না। তাই সেসব শব্দ মানুষের শুনতে পাওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই।

তবে আশ্চর্য হলেও সত্য যে, বাদুরের এই শব্দ এতোই তীক্ষ্ণ যে, তা আমাদের কানের পর্দায় আঘাত করলেও কানের পর্দা ছিড়ে যাবে। তবে বাদুরের শব্দ ভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সিত থাকে বলেই আমারা সেই শব্দ কখনও শুনতে পাই না।

মূলত বাদুড় ফলভোজি। পেয়ারা, লিচু, জামরুল ইত্যাদি ফলের ঠিকানা খুঁজে বের করতে তারা শব্দ তরঙ্গের সঙ্গে নাকের গন্ধ শক্তির ওপরও অনেকটা নির্ভর করে।

This post was last modified on নভেম্বর ৩০, ২০১৯ 1:07 অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

নদীমাতৃক বাংলাদেশের এক চিরাচরিত দৃশ্য

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। বুধবার, ১ মে ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১…

% দিন আগে

অফিসে এসি না থাকলে গরমে সারাদিন পরিশ্রম করে সুস্থ থাকবেন কীভাবে?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেক অফিসেই এসির ব্যবস্থা থাকে না। এসি না থাকলেও কাজ…

% দিন আগে

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা: এক মহা দুর্যোগের শিকার এশিয়া

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পুরো বিশ্বের জলবায়ুর সঙ্গে তুলনা করলে প্রথমেই উঠে আসে এশিয়ার…

% দিন আগে

এনার্জিপ্যাকের সঙ্গে চীনের আনহুই প্রাদেশিক গণ-কংগ্রেসের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চীনের আনহুই প্রাদেশিক গণ-কংগ্রেসের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও…

% দিন আগে

জয়া এবার মা হচ্ছেন!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জনপ্রিয়তার শিখরে আছেন অভিনেত্রী জয়া। দুই বাংলার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী…

% দিন আগে

মার্কিন পতাকা নামিয়ে ফিলিস্তিনি পতাকা উড়লো হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলমান ক্যাম্পাস বিক্ষোভের…

% দিন আগে