দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ হয়তো এমন একটি খবর আমাদেরকে বিস্মিত করবে। তবে বিস্ময়কর হলেও ঘটনাটি সত্যি। এক রাতেই গায়েব হয়ে যায় ৮৪ গ্রামের অধিবাসী! কিন্তু কেনো?
আজকের কথা নয় সেই ১২৯১ সালের দিকে পালিওয়াল ব্রাহ্মণরা আগমন ঘটার পর সমৃদ্ধ নগরী হিসেবে পরিচিতি পায় কুলধারা। চারপাশে মরু অঞ্চল হওয়া স্বত্ত্বেও ভারতের কুলধারায় পানির কোনো সংকটই ছিলো না। ওই সময়টাতেই এলাকার লোকে এতোটাই সমৃদ্ধি ছিলো যে প্রাচীন মন্দির হতে শুরু করে, নিখুঁত নকশায় বানানো বিভিন্ন বাড়ি এখনও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে তা দেখা যায়।
জানা যায়, কুলধারার ৮৪ গ্রামের অধিবাসীরা এক রাতেই তাদের গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছিলেন। কিন্তু এই অঞ্চলে শস্যের কোনো কমতিও ছিলো না। তাহলে তারপরেও কেনো ওই এলাকার বাসিন্দারা চলে গিয়েছিলেন সেই রহস্য আজও অজানা।
কুলধারা ৮৪টি ছোট ছোট সম্প্রদায়ভিত্তিক গ্রাম মিলিয়েই গড়ে ওঠে। ১২৯১ সালের দিকে প্রায় ১৫শ’ মানুষের বেশ সমৃদ্ধ এক জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিলো এই কুলধারা। পালিওয়াল ব্রাহ্মণরা মূলত কৃষি কাজে বেশি দক্ষ ছিলো। যে কারণে এলাকাটি কৃষি এবং ব্যবসার জন্য বেশ বিখ্যাতও ছিলো ওই সময়।
তবে আশ্চর্যের বিষয় একটাই আর তা হলো হঠাৎই এক রাতে এই নগরী জনমানবহীন হয়ে পড়লো। ভারতের রাজস্থানের মতো রুক্ষ অঞ্চলে যেখানে বসবাসের উপযোগী জায়গা খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন একটি ব্যাপার, সেখানে পানীয় জলের অভাব নেই, প্রকৃতিও তেমন একটা রুক্ষ নয়, তারপরও এমন একটি নগরী মানুষের বসবাসের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলো কেনো, তা খুবই অবাক করার একটি বিষয়।
ঘটনার অনুসন্ধানে গবেষক দল অনেক বছর ধরেই কাজ করে যাচ্ছেন। তবে এখনও পুরো ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। গবেষক দল আপাতত ধারণা করছেন, মূলত ওই অত্যাচারী দেওয়ানের ভয়েই গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে গ্রামের বাসিন্দারা। ওই দেওয়ানের নাম ছিলো নাকি সেলিম সিং। তিনি কর আদায়ের জন্য সব ধরনের দুর্নীতির আশ্রয় নিতেন।
এই সেলিম সিংয়েরই একদিন নাকি নজর পড়ে কুলধারার গ্রামপ্রধানের সুন্দরী কন্যার দিকে। সে ওই মেয়েকে জোর করে বিয়েও করতে চায়, তবে ব্রাহ্মণদের প্রতিবাদের মুখে তা আর সম্ভব হয় না। সেলিম সিং ওই মেয়েটির জন্য খুবই বেপোরোয়া হয়ে উঠেছিলো। তিনি ঘোষণা দেন গ্রাম প্রধানের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে না দিলে অস্বাভাবিক করের বোঝা মাথায় নিয়েই বাঁচতে হবে কুলধারার ৮৪টি গ্রামকে।
আর সেই রাতেই ঘটে যায় এই অদ্ভুত ঘটনা। রাতারাতি ৮৪টি গ্রামের লোকজন যেনো মিলিয়ে যায় বাতাসে! কারও কারও মতে, গ্রামবাসীরা দেওয়ানের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এক বস্ত্রে।
আবার কারো মতে, কুলধারার অধিবাসীরা পরবর্তী সময় দেশটির পশ্চিম রাজস্থানের যোধপুর শহরের কাছাকাছি কোনো একটি স্থানে বসতি গড়ে তোলে। তবে এই বক্তব্যের মধ্যে তেমন সত্যতা আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৮৪টি গ্রামের লোক না-হয় রাতের আঁধারে গ্রাম ছাড়লো! কিন্তু এতো বড় দল কোথাও যদি চলে বা পালিয়ে গিয়ে থাকে, তবে কোথাও না কোথাও তো পথের মধ্যে তাদের খুঁজে পাওয়া যাওয়ার কথা। অথচ কেওই তাদের দেখলো না তা কীভাবে সম্ভব!
তারা যদি সত্যিই অন্যত্র গিয়ে বসতি গড়তো, তাহলে তাদের বর্তমান প্রজন্মও থাকার কথা। তবে পুরো ভারতে কুলধারা গ্রামের পালিওয়াল সম্প্রদায়ের ব্রাহ্মণদের কোথাও দেখতে পাওয়া যায়নি। আবার সেরকম কোনো তথ্যও কারও কাছ থেকে পাওয়া যায়নি!