দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রবীন্দ্র ভুবনে পতিসর। বিশেষ করে সাহিত্যমনা মানুষদের কাছে একটি তীর্থ স্থান বলা যায়। সাহিত্যকে যাঁরা লালন করেন তারা ছুটে যান রবীন্দ্র ভুবনে পতিসরে। এটি নওগাঁর আত্রায়ে অবস্থিত।
রবীন্দ্র ভুবনে পতিসর। বিশেষ করে সাহিত্যমনা মানুষদের কাছে একটি তীর্থ স্থান বলা যায়। সাহিত্যকে যাঁরা লালন করেন তারা ছুটে যান রবীন্দ্র ভুবনে পতিসরে। এটি নওগাঁর আত্রায়ে অবস্থিত। কীভাবে যাবেন সেখানে?
আপনাকে ট্রেনে নওগাঁর আত্রাই স্টেশনে গিয়ে নামতে হবে। স্টেশনটি বেশ পুরনো এবং ছিমছাম; এই স্টেশনের কাগুজে নাম আহসানগঞ্জ। তবে সবাই এটিকে আত্রাই বলেই চেনেন। ইতিহাসখ্যাত আত্রাই নদীর কারণে এর নামকরণ করা হয়েছে।
শোনা যায়, রবীন্দ্রনাথ ট্রেনে করে কোলকাতা থেকে সরাসরি এখানে এসেই নামতেন। এরপর তিনি তার বিখ্যাত ‘পদ্মা বোট’-এ করে নদীপথে সোজা চলে যেতেন পতিসরের ওই কাছারিবাড়িতে। কখনও কখনও পালকিও নাকি ব্যবহার করতেন। তবে আমাদের তো নৌকাও নেই আবার পালকিও নেই। তাই সময় বাঁচানোর জন্য দ্রুতযান সিএনজি অটোরিকশাকেই বেছে নিতে হবে। ভ্যানেও যাওয়া যায় ১৫ কিলো দূরের পতিসর কাছারিবাড়িতে। তবে সময় লাগে অনেকটা বেশি। এক সিএনজি অটোরিকশায় পাঁচজনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। ভাড়া প্রতিজনের কাছে নেওয়া হয় ২৫ টাকা করে। ওখানকার ভ্যানে করেই আপনাকে পতিসরের উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে।
এরপর রেললাইন পার হয়ে সরু পিচঢালা পথ ধরে এঁকে-বেঁকে এগিয়ে যেতে হবে আপনাকে। চোখে পড়বে দু’পাশে পরিত্যক্ত ফসলের মাঠ ও মাঠ। শস্যহীন, শ্রীহীন এই মাঠের ফসলের প্রাচুর্যের চিত্রকল্প অনুভব করে রবীন্দ্রসংগীতে ডুব দেওয়ার চেষ্টাও করতে পারেন! তবে সেটি হবে বৃথা আয়োজন, কারণ হলো রাস্তার উঁচু-নিচু খানাখন্দে হেডফোনে গান শোনার সব আয়োজনই আপনার ব্যর্থ হবে তাতে সন্দেহ নেই। ফসলের দেখা না পেলেও দেখা পাওয়া যাবে তরুণী জলস্রোতের। নদীর ঘোলা পানির বানে ভেসে গেছে ধানকাটা মাঠগুলো। জলধারার সরব উপস্থিতি রাস্তার দু’ধারেও। এখানকার লোকালয়গুলো বেশ দূরে-দূরে এবং গাছ-গাছালিও বেশ অনেক কম। রাস্তায় লোকজনের উপস্থিতিও কমই দেখা যাবে। সমস্ত পথে মাঝারি গোছের মাত্র দু’তিনটে মোড়ের দেখা পাওয়া যাবে। ওই সড়কটিই নওগাঁ জেলা পরিষদের রাস্তা। পূর্বে এখানকার লোকদের জেলা-উপজেলার সঙ্গে চলাচলের এই রাস্তাটির অবস্থা খুবই সঙ্গীন ছিল। রবীন্দ্রনাথের কল্যাণে মোটামুটি চলাচল উপযোগী করা হয়েছে। আপনি মূল সড়ক হতে এরপর ডানের সরু সর্পিল রাস্তা ধরে এগোতে থাকবেন; সঙ্গে সঙ্গেই সম্পূর্ণ বদলে যেতে থাকে প্রাকৃতিক দৃশ্যপট। রাস্তার দু’ধারে সারি সারি তালগাছ, এগুলো রোপণ করেছে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এসব দেখতে দেখতে মিনিট বিশেকের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারেন রবীন্দ্র-স্মৃতিধন্য পতিসরে।
পৌঁছানোর পর দেখা যাবে সিংহদরজার ওপরের সিংহ দুটি যেনো আপনাকেই সম্ভাষণ জানাচ্ছে। দরজার দু’পাশে রয়েছে মার্বেল পাথরে খোদিত পতিসরে সৃষ্ট রবীন্দ্র রচনার বয়ান। পড়ে নিন এগুলো, ভালো লাগবে।
প্রবেশদ্বার বন্ধ থাকে রবিবার। কারণ ওইদিন সাপ্তাহিক বন্ধ। এতো দূরে এসে কাছারিবাড়িটির ভেতরটা না দেখে আপনার আর ফিরে যেতে মন চাইবে না।
ভেতরে গেলে দেখতে পাবেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ক্রিয়া কলাপগুলো। আপনার মন ভরে যাবে। শত বছর আগে যিনি নানা কাব্য রচনা করেছেন এখানে বসে সেই জায়গাই গিয়ে আপনার গায়ের লোম মাঝে-মধ্যেই খাড়া হয়ে উঠবে।
রবীন্দ্রনাথের অন্য দুটি কুটিবাড়ি কুষ্টিয়াপর শিলাইদহ ও সাহজাদপুরের থেকে এটি অনেক বেশি গোছানো এবং ছিমছাম গোছের। এখানে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত আরাম কেদারা, লোহার সিন্দুক, গ্লোব, বাথটাব, রয়েছে বিভিন্ন চিঠিপত্রের অনুলিপি, পদ্মাবোটের নোঙর, জানালার কাচ প্রভৃতি বিভিন্ন বস্তু-সামগ্রীই পরম যত্নে সংরক্ষিত রয়েছে। সবচেয়ে বিস্মিত হওয়ার বিষয় হলো কলের-লাঙলের ফলা! পুত্র রথীন্দ্রনাথকে কৃষিবিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষার্থে আমেরিকায় পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আর রথীন্দ্রনাথ দেশে ফিরে মন দিয়েছিলেন আধুনিক কৃষিকাজে। কৃষি ও কৃষকের সনাতনী চিন্তায় প্রচণ্ড আঘাত হেনেছিল সেটি। এসব কারণে পতিসর তথা কালীগ্রাম পরগনার কৃষকরা অপরিসীম শ্রদ্ধা এবং সম্মান করতেন রবীন্দ্রনাথ ও রথীন্দ্রনাথকে। রবীন্দ্রনাথ এখানকার কৃষকদের মনে-প্রাণে ভালোও বাসতেন। তিনি নোবেল পুরস্কারের অধিকাংশ টাকা এখানকার কৃষকদের মধ্যেই কৃষিঋণ হিসেবে দিয়েছিলেন। যদিও তিনি তা আর কখনও ফিরে পাননি। এই বিষয়ে অবশ্য তার কোনো দুঃখও ছিল না। বাংলাদেশের কৃষকদের মান উন্নয়নের জন্য তিনি সবসময়ই ভাবতেন। জাদুঘর দেখতে দেখতে রবীন্দ্রনাথের কৃষিভাবনার কথাই বেশি করে মনে পড়বে।
কাছারিবাড়িটি মূলত চতুর্ভুজাকৃতি। মাঝে স্বল্প পরিসরের খোলা লনও রয়েছে। এর তিনদিক ঘিরে ঘরগুলো অবস্থিত। মাঝের লনে বই হাতে দাঁড়ানো রবীন্দ্রনাথের একটি ভাস্কর্য রয়েছে। মনে হবে রবীন্দ্রনাথ মাথা উঁচু করে যেনো দাঁড়িয়ে রয়েছেন এবং আমাদের অভয়বাণী শোনাচ্ছেন। জাদুঘর দেখা শেষ করে সামনের পুকুরের শান বাঁধানো ঘাটে এসে বসতে পারেন, তাতে বেশ ভালো লাগবে। বসার জায়গাটা অত্যন্ত চমৎকার। এখানকার বই-হাতে আরাম কেদারায় বসা অপর রবীন্দ্র ভাস্কর্যটি দেখে মন জুড়িয়ে যাবে। ভাস্কর শিল্পী কনক কুমার পাঠকের শিল্পবোধ যেনো মন ছুঁয়ে যায়। মন-প্রাণ উজাড় করে উপভোগ করার পর নাগরের সৌন্দর্যের সবটুকুু এই মনে বারংবার হানা দিলো যেনো বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ গীতি-কারিগর আমাদের প্রাণের রবীন্দ্রনাথ।
ঢাকা থেকে আত্রাই যাওয়ার জন্য ট্রেনই হলো উপযুক্ত বাহন। লালমনি, দ্রুতযান, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতাসহ রংপুর-দিনাজপুরগামী যেকোনো আন্তঃনগর ট্রেনে আত্রাই স্টেশনে নেমে সেখান থেকে প্রথমেই যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ঠিক সেইভাবে সিএনজি অটোরিকশা, ভ্যানে সহজেই যাওয়া যায় পতিসরে। আবার ঢাকা থেকে নওগাঁয় সরাসরি বাসে গিয়েও সেখান সিএনজি অটোরিকশা রিজার্ভ করেও যেতে পারেন পতিসরে। তবে মনে রাখতে হবে পতিসরে রাত্রিযাপনের জন্য কোনো হোটেল নেই, সরকারি একটি ডাকবাংলো রয়েছে। পূর্ব অনুমতি থাকলে এখানে রাত্রীযাপন করা যাবে। তা না হলে নওগাঁ শহরের যে কোনো আবাসিক হোটেলে থাকতে হবে আপনাকে।
# সহকারী অধ্যাপক, ফোকলোর বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখা অবলম্বনে।
This post was last modified on ডিসেম্বর ২৩, ২০১৯ 1:33 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অবশেষে গত ৩১ বছর ধরে চলা ‘গোল্ডেন আউল’ বিতর্কের অবসান…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ২৯ কার্তিক ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যদি আপনি হৃদরোগের থেকে দূরে থাকতে চান তাহলে ভরসা রাখতে…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ব্রিটিশ কাউন্সিলের আয়োজনে রাজধানী ঢাকার রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে গতকাল…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাশ্রয়ী দামে শক্তিশালী ব্যাটারি, দ্রুত চার্জিং সুবিধা; সাথে দৃঢ়তা ও…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মারণব্যধি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছেন ভারতীয় জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিনা খান।…