দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঘুরতে গেলে তেমন একটি স্থানে যাওয়া উচিত। যেখানে গেলে আপনি মনের মধ্যে এক অবারিত আনন্দ অনুভব করবেন। আর তেমনই একটি স্থান হলো খাগড়াছড়ির তৈদুছড়া ঝর্ণা। ঘুরে আসুন এই স্থানটি।
খাগড়াছড়ি হতে ২০ কিলোমিটার দূরে দীঘিনালা উপজেলার বুনো জঙ্গলের মাঝে আঁকাবাঁকা পাহাড়ের ভাঁজ দিয়ে বয়ে চলেছে নয়নাভিরাম এই তৈদুছড়া ঝর্ণা। ত্রিপুরা ভাষায় তৈদু অর্থ পানির দরজা এবং ছড়া অর্থ ঝর্ণা। ১০০ ফুট উচু ঝর্ণা মুখ থেকে বয়ে যাওয়া শীতল এবং স্বচ্ছ পানির কলকল শব্দে মুখরিত হয়ে থাকে তৈদুপাড়া এলাকার চারপাশটি। প্রাকৃতিক অসাধারণ বিচিত্রের এই ঝর্ণা এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে খাগড়াছড়ির পর্যটনশিল্পের জন্য। ভ্রমণ প্রেমীরা দীঘিনালার দুর্গম গিরি পথ পাড়ি দিয়ে খাগড়াছড়ির বৃহত্তম এই ঝর্ণা দেখতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন প্রতিদিন।
তৈদুছড়া যাওয়ার পথে ছোট বড় বেশকিছু ঝর্ণা এবং পাহাডড়ের স্বর্গীয় রূপেও মুগ্ধ হবেন আপনি। তবে তৈদুছড়া ঝর্ণার পানির ধারা একেবারে ব্যতিক্রম, পাহাড়ের গা বেঁয়ে সিঁড়ির মতো তৈরি হওয়া অসংখ্য পাথুরে ধাপ হতে পানি গড়িয়ে ছোট একটি হ্রদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
ঝর্ণার পাশেই প্রায় ৮০ ফুট উঁচু থেকে বয়ে যাওয়া থাংঝাং নামের আরেকটি ঝর্ণাও রয়েছে। মূলত থাংঝাং ঝর্ণা হতে সৃষ্ট ঝিরির পানি হতেই তৈদুছড়া ঝর্ণার উৎপত্তি হয়েছে। তৈদুছড়া ঝর্ণার ডানপাশ দিয়ে ঝিরি পথ পার হয়ে প্রায় ঘণ্টা খানিক হাঁটলে থাংঝাং ঝর্ণা আপনি দেখতে পাবেন। তবে এই পথে পাড়ি দিতে হলে পাহাড়ী উঁচু নিচু ঢাল, বুনো জঙ্গল আবার কখনও হাঁটু বা বুক সমান পানি পাড়ি দিতে হবে। দীর্ঘ রোমাঞ্চকর এই পথের ক্লান্তি মুহূর্তেই দূর হয়ে যাবে ঝর্ণার শীতল পানিতে নামলে। ঝর্ণার ধাপে ধাপে পাথুরে স্তর এই ঝর্ণাকে অন্য সব ঝর্ণা হতে আলাদা করে তুলেছে। এছাড়াও পাহাড়ের গায়ে জুম চাষের ক্ষেত পর্যটকদের চোখ জুড়িয়ে দিতে পারে।
ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ, উত্তরা এবং আরামবাগ হতে খাগড়াছড়ি (Khagrachari) যাওয়ার বাসগুলো পাওয়া যায়। খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা ও সীমানা পাড়া এই দুই পথেই তৈদুছড়া যাওয়া যাবে। সীমানা পাড়া দিয়ে গেলে সময় বাঁচবে এবং ট্র্যাকিংও কম করতে হয়।
যদি সীমানা পাড়া হয়ে তৈদুছড়া ঝর্ণা যেতে চান তাহলে আপনাকে খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা মোড় হতে দীঘিনালাগামী বাস কিংবা সিএনজি নিয়ে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে সীমানা পাড়া যাওয়ার রাস্তায় আপনাকে নামতে হবে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে ৩ কিলোমিটার গেলেই আপনি সীমানা পাড়া পৌঁছে যাবেন। তবে শাপলা মোড় হতে চান্দের গাড়ী নিলেও সরাসরি সীমানা পাড়া যেতে পারবেন। সীমানা পাড়া থেকে গাইড নিয়ে ট্র্যাকিং করে তৈদুছড়া ঝর্ণা এবং থাংঝাং ঝর্ণায় যেতে হয়।
যদি দীঘিনালা হতে যেতে চান তবে খাগড়াছড়ির শাপলা মোড় হতে বাস বা আপনার সুবিধাজনক যানবাহনে দীঘিনালা চলে আসুন। তারপর সেখান থেকে গাড়ী কিংবা মোটর সাইকেলে জামতলী যেতে হবে। জামতলীর পোমাংপাড়া হতে প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তা ট্র্যাকিং করে তৈদুছড়া ঝর্ণা পৌঁছাতে পারবেন। দীঘিনালা হতে তৈদুছড়া পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যেতে আপনার ৪ হতে ৫ ঘণ্টা সময় লাগবে। খাগড়াছড়ি থেকে সকাল ৭ টায় রওনা দিয়ে সন্ধ্যার মধ্যে আবার ফিরে আসা যাবে।
দীঘিনালাতে রয়েছে দীঘিনালা গেস্ট হাউজ, আল আমিন ও হোটেল জুরানির মতো সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। তবে খাগড়াছড়িতে রয়েছে পর্যটন মোটেল, হোটেল ইকো ছড়ি ইন, হোটেল হিল টাচ, শৈল সুবর্ন, হোটেল নূর, হোটেল মাউন্ট ইন, গাংচিল আবাসিক, অরণ্য বিলাস সহ কয়েকটি উন্নতমানের আবাসিক হোটেল রয়েছে।
দীঘিনালাতে খাবারের জন্য বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে সাদিয়া হোটেল, ক্যাফে আমন্ত্রণ রেস্টুরেন্ট ও দরবার হোটেলের মতো সাধারণ মানের হোটেল পাবেন। খাগড়াছড়ির সিস্টেম রেস্তোরাঁ, পেডা টিং টিং, গাং সাবারং, পাজন এবং চিম্বাল রেস্টুরেন্টের খাবারও বেশ জনপ্রিয়।
# শীতের আগে ও বর্ষার শেষে তৈদুছাড়া ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার জন্য হলো উপযুক্ত সময়। যাত্রা করার সময় পরিমাণ মতো শুকনো খাবার এবং পানীয় সঙ্গে নিয়ে যান।
# পানিনিরোধ হালকা একটি ট্র্যাভেল ব্যাগে কিছু শুকনা কাপড়, মোটা এবং শক্ত দড়ি, স্যালাইন এবং ফাস্ট এইড বক্স সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ভালো।
# ঝর্ণার পানিতে নামার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঝর্ণার আশেপাশের পাথর বেশ পিচ্ছিল থাকে তাই সাঁতার না জানলে পানিতে নামলেও অল্প গভীরতায় অবস্থান করুন। গভীর পানিতে যাবেন না।
# প্রশাসনের অনুমোদিত গাইড সাথে নিয়ে যান।
# ভালো গ্রিপের জুতা পড়তে হবে।
# জোঁকের কামড় থেকে নিরাপদে থাকতে লবণ বা গুল সঙ্গে নিতে পারেন।
# মশা থেকে বাঁচতে হলে ওডোমস ক্রিম সঙ্গে রাখুন।
খাগড়াছড়ির অন্যান্য দর্শনীয় স্থানসমূহ
খাগড়াছড়ির অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে রিসাং ঝর্ণা, আলুটিলা গুহা, পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুঠির, হাতিমাথা এবং নিউজিল্যান্ড পাড়া উল্লেখযোগ্য স্থান।
তথ্যসূত্র: https://vromonguide.com
This post was last modified on ফেব্রুয়ারী ৪, ২০২০ 12:35 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ড এবং লেবাননজুড়ে ভয়াবহ হামলা চলমান রেখেছে…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ স্বপ্ন দেখে তা মনে রাখা সত্যিই দুষ্কর। আর তাই রাতের…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ৩০ কার্তিক ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকই সুজি খেতে খুবই ভালোবাসেন। তাই তারা প্রতিদিন সুজির পায়েস,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রথমবারের মতো প্যান ইন্ডিয়ান চলচ্চিত্র বানিয়েছেন নির্মাতা অনন্য মামুন। ঢালিউড…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনার যদি প্রতিদিন চিকেন খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে জেনে রাখুন,…