দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঘুরতে চাইলে আপনি যেতে পারে যে কোনো স্থানে। তবে ঐতিহাসিক স্থানে গেলে আপনার জন্য দুই হবে। বেড়ানোও হবে আবার ইতিহাস সম্পর্কেও ধারণা হবে। তাই ঘুরে আসুন কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান দিল্লির আখড়া থেকে।
কিশোরগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে প্রায় সাড়ে চারশত বছরের পুরনো হলো এই দিল্লির আখড়া। কিশোরগঞ্জের মনোরম একটি হাওরাঞ্চল মিঠামইন উপজেলার কাটখাল ইউনিয়নে অবস্থান এই দিল্লির আখড়ার। নাম দিল্লির আখড়া হলেও বাস্তবে ভারতে দিল্লির সঙ্গে এই আখড়ার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।
জানা গেছে, দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে আধ্যাত্মিক সাধু নারায়ন গোস্বামী এই আখড়াটি স্থাপন করেছিলেন। আখড়ার ভেতরে রয়েছে ধর্মশালা, নাটমন্দির, অতিথিশালা, বৈষ্ণবদেব থাকার ঘর, পাকশালা, সাধক নারায়ন গোস্বামী এবং রয়েছে তাঁর অন্যতম শিষ্য গঙ্গারাম গোস্বামীর সমাধিও।
দিল্লির আখড়ার দুপাশে দুইটি পুকুর ও চারদিকের বিশাল এলাকাজুড়ে প্রায় ৩ হাজার হিজল গাছ যেনো শোভা ছড়িয়ে রয়েছে। নদীর তীরে ঐতিহাসিক এই আখড়া এবং হিজল গাছগুলো মিঠামইন হাওরের সৌন্দর্যে যোগ করেছে বিশেষ এক বৈচিত্রতা।
হিজল গাছ এবং দিল্লির আখড়াকে নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে গা ছমছম করা নানা ঘটনা প্রচলিত রয়েছে। সাধক নারায়ন গোস্বামী ছিলেন পার্শ্ববর্তী বিতলঙ্গের আখড়ার আধ্যাত্মিক সাধক রামকৃষ্ণ গোস্বামীর একজন শিষ্য। তৎকালীন সময় চতুর্দিকে নদী পরিবেষ্টিত এই এলাকা ঘন ঝোপ-জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। রহস্যজনক কারণে এই এলাকার নদীপথে গমনকারী নৌকাগুলো ডুবে যেতো বা অন্য কোনো দুর্ঘটনার শিকার হতো। তেমনি কোনো একদিন দিল্লির সম্রাট প্রেরিত একটি কোষা নৌকা এই নদীপথে যাওয়ার সময় মালামালসহ ডুবে গিয়েছিলো। নৌকার আরোহীরা ওই সময় কোষা উদ্ধারে ব্যর্থ হন। নৌকার যাত্রীদের একজন সাপের কামড়ে মারাও যান। তখন বিতলঙ্গের সাধক রামকৃষ্ণ এই খবর পেয়েছিলেন। তিনি তাঁর শিষ্য নারায়ন গোস্বামীকে দুর্ঘটনার স্থানে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। গুরুর আর্দেশ মোতাবেক সাধক নারায়ন গোস্বামী নদীর তীরে বসে তপস্যায় মগ্ন হলে কোনো এক অলৌকিক শক্তি তাঁকে হাত-পা বেধে নদীতে ফেলে দিয়েছিলো। সাধক নারায়ন তখন গোস্বামী তাঁর সাধনাবলে তীরে আসতে সক্ষম হন। এভাবে পরপর ৭ দিন একই রকম ঘটনা ঘটে।
তারপর একদিন দৈব বাণীর মতো নারায়ন গোস্বামীকে এই স্থান হতে চলে যাওয়ার জন্য বলা হয়। উত্তরে সাধক তাদের পরিচয় এবং দর্শন চান। দৈব কন্ঠ নিজেকে এখানকার বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে দানব মূর্তি ধারণ করেন। নারায়ন গোস্বামী দেখতে পেলেন চারপাশে হাজার হাজার বিশালাকার যেনো দানব দৃশ্যমান হয়েছে। সাধক নারায়ন গোস্বামী দানবদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নেন তারা যেনো মানুষের ক্ষতি না করে বসবাস করেন এবং মানুষও তাদের ক্ষতি করবে না। সাধক নারায়ন গোস্বামী নির্দেশে দানবেরা হিজল গাছে পরিণত হয়ে যায়।
পরবর্তীতে সাধক নারায়ন গোস্বামীর অলৌকিক ক্ষমতায় মালামালসহ ডুবে যাওয়া কোষা নৌকা ও সর্প দংশনে মৃত ব্যক্তিকে নাকি আবার বাঁচিয়ে তুলেন। এই খবর শুনে দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীর নারায়ণ গোস্বামীর জন্য একটি আখড়া প্রতিষ্ঠা করে দেন। তারপর থেকে আখড়াটি দিল্লির আখড়া নামেই পরিচিতি লাভ করে বলে শোনা যায়।
দিল্লির আখড়ার ৩৭২ একর জমিতে ছড়িয়ে রয়েছে কয়েক হাজার হিজল গাছ। নারায়ন গোস্বামী তখন দানব প্রধানের গাছের রূপের নিচে বসে সাধনা শুরু করেন। নারায়ণ গোস্বামীর সাধনার জায়গা ‘সাধনবৃ’ বর্তমানে পাকা বেষ্টনী করে রাখা রয়েছে। প্রতি অমাবশ্যা এবং পূর্ণিমার রাতে এখানে ভোগ দেওয়া হয়। প্রতি বছর ৮ চৈত্র এখানে মেলার আয়োজনও করা হয়।
ঢাকা হতে ট্রেনে কিশোরগঞ্জ যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে চলে আসতে হবে। ঢাকা হতে বাসে বা ট্রেনে কিশোরগঞ্জে আসতে পারবেন। ট্রেনে সকালের এগারোসিন্ধুর প্রভাতীতে গেলে বেশি সুবিধা হবে। ট্রেন ভাড়া শ্রেণী অনুযায়ী ১২০-২০০ দিতে হবে, সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘন্টা ২০ মিনিটের মতো। ট্রেন ষ্টেশন হতে একরামপুর সিএনজি স্ট্যান্ড ১৫ হতে ২০ টাকা রিকসা ভাড়ায় চলে যেতে পারবেন।
বাসে যেতে চাইলে মহাখালী হতে অনন্যা পরিবহণ কিংবা অনন্যা ক্লাসিক এবং গোলাপবাগ (সায়েদাবাদ) হতে যেতে চাইলে যাতায়াত বা অনন্যা সুপারে সরাসরি কিশোরগঞ্জ যেতে পারেন। বাস ভাড়া লাগবে ২০০ হতে ২৫০ টাকা। মহাখালী হতে সময় লাগবে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টার মতো এবং গোলাপবাগ হতে সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘন্টা। বাস স্ট্যান্ড হতে লোকাল (১৫ টাকা) কিংবা রিজার্ভ ইজিবাইকে (১২০ টাকা) চলে আসতে পারবেন একরামপুর সিএনজি স্ট্যান্ডে।
একরামপুর হতে সিএনজি কিংবা অটোরিকশায় চেপে চামটা বন্দর (স্থানীয় নাম হলো চামড়া ঘাট) চলে আসুন। চামড়া বন্দর হতে লোকাল ও রিজার্ভ নেওয়ার জন্য ট্রলার এবং নৌকা পাবেন।
একইভাবে কিশোরগঞ্জ শহরের একরামপুর মোড় হতে বালিখোলা বা মরিচখালি বাজারে এসে ট্রলার কিংবা নৌকা রিজার্ভ নিয়ে দিল্লির আখড়া দেখতে যেতে পারবেন। চামড়া বন্দর, বালিখোলা, মরিচখালি এই তিন স্থান হতেই দিল্লির আখড়া যাওয়ার সুযোগ থাকলেও চামটা বন্দর হতে দিল্লীর আখড়া যাওয়া সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক হবে।
মনে রাখা ভালো যে, শুকনা মৌসুমে হাওর এবং নদীতে পানি কম থাকে যে কারণে হাওরের স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়।
মিঠামইন উপজেলায় থাকার খুব একটি ভালো ব্যবস্থা নেই। যদি থাকতেই চান তাহলে উপজেলা পরিষদের ডাক বাংলোতে থাকতে পারেন। এছাড়াও মিঠামইন বাজার এলাকায় শিকদার হোটেল এবং সোহেল গেস্ট হাউজ থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ভালো কোথাও থাকতে চাইলে কিশোরগঞ্জ সদরে থাকতে পারেন। সেখানে রিভার ভিউ, গাংচিল, উজানভাটি, নিরালা, ক্যাসেল সালাম নামে বেশ কিছু ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এছাড়াও অনুমতি সাপেক্ষে জেলা সদরের সরকারি ডাক-বাংলোতেও ইচ্ছে করলে থাকতে পারবেন।
বাজারের স্থানীয় খাবার হোটেলে চেখে দেখতে পারেন। তাতে হাওরের বিভিন্ন স্বাদের মাছ পাওয়া যাবে। মিঠামইনের খাবার হোটেলগুলোতে সাধারণত হাওরের তাজা মাছ রান্না করে খাওয়ানো হয়।
তথ্যসূত্র: https://vromonguide.com
This post was last modified on ফেব্রুয়ারী ৯, ২০২০ 11:07 পূর্বাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গাজার মতোই অধিকৃত পশ্চিম তীরকেও ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতে চাই ইসরায়েলি…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সোনা ভেবে রাস্তা থেকে পাথর কুড়িয়ে এনেছিলেন এক ব্যক্তি। ১৫…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫ খৃস্টাব্দ, ২৬ পৌষ ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শীতে মধু মাখলে বেশ উপকার পাওয়া যাবে। যে কারণে এই…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিপাইনের…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আসলে ২০২৫ সালের প্রযুক্তি–দুনিয়া কেমন যাবে, তা নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা…