দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিশ্বব্যাপি আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস। একের পর এক ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে মহামারী করোনা ভাইরাসের। যদিও এসব ভ্যাকসিন বা ওষুধের কোনোটি করোনা মোকাবেলায় ১০০ শতাংশ কার্যকরি এখনও নয়।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির ক্লিনিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন যে, অ্যান্টি-ম্যালেরিয়াল ওষুধ ক্লোরোকুইন বা এইচআইভি দমনের মিশ্র ওষুধ রিটোনাভি বা উভয় ওষুধের সংমিশ্রণ করোনা ভাইরাস নিরাময়ে সাফল্য এনে দেবে।
জানা গেছে, ‘ইন্টারফেরন আলফা টু-বি’ নামে পরিচিত একটি ওষুধ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের ওপর প্রয়োগে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। আক্রান্তদের অনেকেই নাকি সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
আরো জানা যায় যে, চীনের চিকিৎসকরা করোনা আক্রান্তদের সুস্থ করে তুলতে এই ওষুধটিই নাকি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন।
দাবি করা হয়েছে যে, এই ওষুধ ব্যবহার করেই এক হাজার ৫০০ জনের বেশি রোগীকে সুস্থ করে তুলেছেন তারা।
জানা গেছে, প্রাণঘাতি ব্যধি করোনা ভাইরাসে কার্যকরি এই ওষুধটি তৈরি করেছে কিউবার সেন্টার ফর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি (সিআইজিবি)।
কিউবাভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম গ্র্যানমা এই তথ্য জানিয়েছে। তাছাড়াও মেডিকক্রিভিউ, আহোরা ডট কম অনলাইম মাধ্যমেও এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এই ওষুধটি নিয়ে কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগেল ডিয়াজ-কানেল চীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে টুইট করেছেন।
টুইটে তিনি লিখেছেন যে, ‘আমাদের তৈরি ‘ইন্টারফেরন আলফা টু-বি’ ওষুধটি নভেল করোনা ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছে। চীনে এখন এই ওষুধ বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমরা এই মহামারী মোকাবেলায় সবসময় চীনের পাশেই থাকবো।’
কিউবার একটি টেলিভিশন চ্যানেলে ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা বায়কিউবা ফারমা গ্রুপের ড. লুইস হেরেরা মার্টিনেজ বলেছেন যে, ‘করোনা রোগ প্রতিরোধে রোগীদের ওপর ৩০টি ওষুধ প্রয়োগের জন্য অনুমতি দিয়েছে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। এসব ওষুধের মধ্যে ‘ইন্টারফেরন আলফা টু-বি’ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে চীনে। এটি ব্যবহারে চীনে হাজার হাজার করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।’
ওষুধটির আবিষ্কারক কিউবা হলেও বর্তমানে চীনের জিলিন প্রদেশের চ্যাংচুন হেবার বায়োলজিক্যাল টেকনোলজিতে এটির উৎপাদন করা হচ্ছে।
এমন তথ্য নিশ্চিত করে চীনে অবস্থিত কিউবা অ্যাম্বাসির পক্ষ হতে টুইট করা হয় যে, ‘চন্দ্রবর্ষের প্রথম দিনেই কিউবার জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ‘ইন্টারফেরন আলফা টু-বি’ আবিষ্কার করা হয়। দুই সমাজতান্ত্রিক দেশের মধ্যে এক চুক্তির অংশ হিসেবে যৌথ উদ্যোগে উৎপাদিত হচ্ছে এই ওষুধটি। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন আমাদের এই ওষুধকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
এদিকে এমন খবরের পর সারা বিশ্ব হতে ‘ইন্টারফেরন আলফা টু-বি’ ওষুধ কেনার হিড়িক পড়ে গেছে। ল্যাটিন আমেরিকান, ক্যারিবীয় এবং ইউরোপীয় বেশ কয়েকটি দেশ কিউবার কাছ থেকে চিকিৎসা সহায়তার অনুরোধ করে এই ওষুধটি অর্ডার করেছে।
এই বিষয়ে গত ১৪ মার্চ ড. লুইস হেরেরা মার্টিনেজ বলেন, ‘সারা বিশ্বের বিপুল সংখ্যক দেশ হতে এই ওষুধ বিক্রির অনুরোধ পেয়েছি আমরা। ইতিমধ্যেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ইতালিতে একটি চালানও পাঠিয়েছি। ওষুধটি প্রয়োগ শেখাতে কিউবা হতে চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধি দলও সেখানে গেছে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধটির সরবরাহ রয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়েও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদাও মিটাতে পারবো আমরা।’
‘ইন্টারফেরন আলফা টু-বি’ তে কী কী উপাদান রয়েছে?
এই প্রশ্নের জবাবে মার্টিনেজ বলেন, ‘এতে এইচআইভি, হেপাটাইটিস-বি ও সি, হার্পিস জোস্টার বা শিংলস, ডেঙ্গু এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসায় কার্যকরি উপাদানও রয়েছে। এই ওষুধটি মানবদেহের ইন্টারফেরনের প্রাকৃতিক উৎপাদন বাড়ায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও জোরদার করে থাকে। এক সময় দেখা যায়, করোনা ভাইরাস রোগীর শ্বাসতন্ত্র ও ফুসফুসকেও আক্রান্ত করতে পারে না।’