দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কানাডার মন্ট্রিয়াল শহরের দ্য জুইস জেনারেল হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
মন্ট্রিয়াল গেজেট হতে জানা যায়, এই অ্যাপের মাধ্যমে হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তি তার মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে প্রাথমিকভাবে রোগীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হবেন।
করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এই অ্যাপটি ‘গেম–চেঞ্জিং’ অ্যাপ হয়ে উঠতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে মন্ট্রিয়াল গেজেটে। মন্ট্রিয়াল–ভিত্তিক স্বাস্থ্য প্রযুক্তি সংস্থার সহযোগিতায় তেল আবিবের আইটি প্রতিষ্ঠান এই মেডিকেল-গ্রেড অ্যাপটি তৈরি করেছে বলে জানা যায়।
যদিও এই অ্যাপটি করোনাকে মাথায় রেখে তৈরি করা হয়নি। তবে দ্য জুইস জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা মোকাবিলায় অ্যাপটি ব্যবহার করবে বলেও জানা যায়।
আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি বিভাগে আসা রোগীর শ্বাসকষ্টের সমস্যা ও লক্ষণগুলো শনাক্ত করতে এই অ্যাপটি ব্যবহার করবে।
রোগীকে স্পর্শ না করেই স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীর মুখের সামনে স্মার্টফোনটি ধরে রাখবেন। এক মিনিটেরও খুব কম সময়ের মধ্যে অ্যাপ্লিকেশনটি রোগীর ৩টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ পরিমাপ করবে। এগুলো হলো হার্টবিট, শ্বাস–প্রশ্বাসের মাত্রা এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা।
এই ৩টি বিষয়ে রোগীর অবস্থান খারাপ হলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।করোনা ওয়ার্ডে থাকা রোগীদেরও এই অ্যাপটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে। তারা নিজেরাই তাদের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এতে করে সেবা প্রদানকারী ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে আর ঘন ঘন প্রবেশ করতে হবে না। চিকৎসকদের গ্লাভস, মাস্ক এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের ব্যবহার অপেক্ষাকৃত কম করতে হবে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যাপ্লিকেশনটির যথাযথ পরীক্ষা–নিরীক্ষা সম্পন্ন করে কুইবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনও পেয়েছে। প্রাদেশিক সরকার আগামী কয়েক মাস করোনা মোকাবিলায় প্রদেশজুড়ে এই স্মার্টফোন প্রযুক্তি চালু করার কথাও বিবেচনা করছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মাস কয়েক পূর্বে এই অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারলে পরিস্থিতি এতো গুরুতর হতো না। কারণ হলো, ব্যবহারকারী ঘরে বসেই নিজেই নিজের শারীরিক অবস্থা জানতে পারতেন। করোনার লক্ষণ দেখলে ঘরে বসেই নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারতেন। এতে কিছুটা হলেও করোনার সংক্রমণ ঠেকানো যেত।
সিআইইউএসএসের পরিচালক (ডিজিটাল) ডা. জাস্টিন ক্রস বলেছেন, নতুন এই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে জুইস জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে না এসেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণও পরীক্ষা করতে পারবেন।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।