দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ তেলের দাম নেমে গেছে একেবারে শূন্যের নিচে। সোমবার শূন্যের নিচে তেলের দাম থাকার বিষয়টি ছিল “উদ্ভট”, বলছেন জনৈক বাজার বিশেষজ্ঞ।
বিশ্লেষকরা বলছেন যে, একদিকে বাজারে তেলের অতি সরবরাহ ও অপরদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে চাহিদায় ব্যাপক ধস – এই দুই কারণের সমন্বয়ই তেলের দাম এতোটা কমে যাবার মূল কারণ।
বিশ্বব্যাপি করোনা ভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশ যে লকডাউন কার্যকর করেছে তাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে গেছে একেবারে। যান চলাচল ব্যাপকভাবে কমে গেছে, লোকজন ঘরে বসে রয়েছে এবং বৈশ্বিক চাহিদাও প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
আমেরিকান তেলের দাম গতকাল দিনের এক পর্যায়ে ব্যারেল প্রতি মাইনাস ৩৭ ডলারে দাঁড়িয়েছে! তবে এখন আবার এই দাম শূণ্যের ওপরে উঠছে।
যুক্তরাজ্যেও তেলের দামও অনেক পড়ে গেছে। তবে ব্রিটিশ তেল, যা বাজারে পরিচিত ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেল হিসাবে তার দাম এক ব্যারেল বর্তমানে প্রায় ২৩ ডলার।
ফিডেলিটি ইন্টারন্যাশানাল নামে একটি সংস্থার বিশ্লেষক জেমস ট্র্যাফোর্ড বলেছেন, “কাল বাজারে তেলের দামের এই নজিরবিহীন পতনকে উদ্ভট বলেই আমাদের দেখতে হবে। বুঝতে হবে যে ভবিষ্যতে বাজারে এমন আশ্চর্য কাণ্ডও ঘটতে পারে।”
তিনি মনে করেন যে, এই নজিরবিহীন মূল্যপতন এটা নিশ্চিত করছে যে, সামনের মেয়াদে তেলের বাজার খুব দুর্বল থাকবে।
“তবে এটা বাজারের ভয়ংকর একটা উথালপাতাল পরিস্থিতির কোনো সূচক নয়,” তিনি তাই বলছেন। “তেলের দাম শূণ্যের নিচে চলে যাওয়াটাকে আগামীতে বাজারের নতুন একটা স্বাভাবিক সূচক হিসাবে আমরা কখনও দেখছি না।”
কী ঘটতে চলেছে?
কথা হলো বাজারে তেলের যে দাম বলা হয়, সেটি প্রকৃতপক্ষে বাজারে তেলের দামের আগাম মূল্যায়ন। ভবিষ্যত চাহিদার ভিত্তিতে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী যে তেল সরবরাহ লাইনে রয়েছে তার ভিত্তিতেই আগামী কয়েকমাসে তেলের দাম কী হবে সেটি বলা হয়।
সরবরাহের তারিখ এগিয়ে এলে পরবর্তী মাসগুলোর চাহিদা মূল্যায়ন করে পরবর্তী দাম নির্ধারণ করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দামের প্রধান নিয়ামক যে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট – সোমবার তাদের ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শূন্যের নিচে নেমে গিয়েছিলো।
তবে সেটি মে মাসে সরবরাহের জন্য যেসব চুক্তি ছিল তার ভিত্তিতে। যেসব তেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরবরাহের চুক্তি আগেই ছিল, তারা ক্রেতা পায়নি, যেহেতু যাদের চালান নেবার ক্ষমতাই ছিল না, তাই তারা তেলও নিতে চায় নি।
“আগামী মাসে কেও তেল নিতে চাইছে না কারণ তেল মজুত রাখার জায়গা তাদের হাতে নেই। যে কারণে তেলের দাম শূণ্যের নিচে নেমে গেছে,” বিষয়টি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন কিলিক এন্ড কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ বিষয়ক পরিচালক রেচেল উইন্টার।
এর মানে কী তেলের দাম আরও নামবে?
“তেলের দাম ও এই খাতের বাজার আগামী কয়েক মাসই খুবই দুর্বল থাকবে,” জেমস ট্র্যাফোর্ডের পূর্বাভাস।
তিনি বলেছেন, তেলের সরবরাহ হ্রাস করতে ওপেক যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে তা শীঘ্রই বাজারে ভারসাম্য নিয়ে আসতে পারবে না।
ওপেক তেলের উৎপাদন অবিলম্বে বন্ধ করেও দিতে চাইছে। তারা মনে করছে যে, দামের এই ধস সামলাতে হলে আগামী মাস পর্যন্ত তা ঠিক হবে না।
পেট্রোলের দামও কী কমবে?
পেট্রোলের দাম যদিও তেলের পাইকারি দামের সঙ্গে সম্পর্কিত, তবে পেট্রোলের দাম প্রতিযোগিতার কারণে বাড়ে কমে। এর অর্থ হলো যারা গাড়ি চালান তারা পেট্রোলের জন্য যে দাম দেন তার সঙ্গে অপরিশোধিত তেলের দামের সরাসরি কোনো যোগ নেই। বরং সরবরাহকারীরা ঠিক করেন পেট্রোল তারা কী দামে বিক্রি করবেন।
কাজেই সম্প্রতি তেলের বাজারে যে উথালপাতাল দেখা দিয়েছে পেট্রোল পাম্পে তার প্রভাব আপনি দেখবেন না। অনেক ক্ষেত্রে পেট্রোলের দাম নির্ভর করে সেই দেশের সরকার তেলের ওপর কতো কর ধার্য করে তার ওপরেই।
তেলের পাইকারি বাজারে দাম কমলে তার একটা প্রভাব হয়তো তেলের দামের ওপরও পড়তে পারে। তবে এখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড খুবই কম হওয়ায় মানুষ গাড়িই চালাচ্ছে কম, পেট্রোল বা ডিজেল ব্যবহার করছে খুবই কম। যে কারণে পেট্রোলের দাম যে এর ফলে কমবে- বিশেষজ্ঞরা বলছেন সে সম্ভাবনা খুবই কম। তথ্যসূত্র: বিবিসি
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।