দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থার ফেসবুকে পেজে বিভিন্ন সবজির ছবি দিয়ে এভাবেই তুলে ধরা হয়েছিল তাদের ‘বিনা পয়সার বাজার’ আয়োজনের নানা তথ্য।
দেশব্যাপি করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষ বা পরিস্থিতির কারণে আর্থিক সংকটে পড়া মধ্যবিত্তদের জন্য ‘বিনা পয়সার বাজার’ শিরোনামে বিনা মূল্যে সবজি দিচ্ছে এই ফাউন্ডেশনটি।
ফাউন্ডেশন- সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, রাস্তায় বিনা মূল্যে তাঁদের সবজির বাজার দেখে বেশ অবাকই হয়েছেন স্থানীয় লোকজন। চাষির খেত হতে সরাসরি কিনে বিষাক্ত রাসায়নিকবিহীন তাজা নানা সবজি তাঁরা পৌঁছে দিচ্ছেন লোকজনকে। এখানে যে কেও পছন্দমতো বাজার করতে পারবেন, তবে বিনা পয়সায়। একজন সর্বোচ্চ এক কেজি পরিমাণ পর্যন্ত সবজি নিতে পারেন এই বাজার থেকে। তাঁদের মতে, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে খাদ্য সংকটের যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তাতে একে অপরের পাশে থেকে সংকট মোকাবিলা করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনুদানের অর্থ হতে ৩২টি জেলায় সাড়ে ৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন ২০১৬ সাল হতে সহায়তামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশনের সভাপতি আহমেদ ইমতিয়াজ জামি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে গ্রামের চাষিরা ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলে আমরা বিভিন্ন সময় শুনতে পাচ্ছি। আবার শহরের অনেক মানুষ সবজি কিনে খেতে পারছেন না। এই অবস্থায় খেত থেকে বা স্থানীয় কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি সবজি কিনে তা আমরা ট্রাকে করে তা ঢাকায় নিয়ে আসছি। গাবতলী, মিরপুর ১, মিরপুর ১২, মিরপুর সাড়ে ১১–তে পল্লবী এলাকা, মোহাম্মদপুর, আসাদগেট, রায়েরবাজারে দুর্গামন্দির গলিতে ২৬ হতে ২৮ এপ্রিল তিন দিন ৬টি স্থানে বাজার বসিয়ে এবং ভ্রাম্যমাণভাবে পিকআপ ভ্যানে করে বিনা মূল্যে লোকজনের কাছে দুই টন সবজি জনগণের পৌঁছে দিয়েছি আমরা।’ বিনা পয়সার এই বাজার করোনাকালে চালানো হবে।
কৃষক মোহাম্মদ আলী অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশনের কাছে লাউ বিক্রি করেছেন। তার বাড়ি পঞ্চগড় সীমান্তের কাছে নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার পশ্চিম চিলাই নামক গ্রামে। সংবাদ মাধ্যমটিকে মোহাম্মদ আলী বলেছেন, ‘এবার এক বিঘা জমিতে লাউ করি। এখন পর্যন্ত এক হাজার লাউ বিক্রি করেছি এখান থেকে। এর মধ্যে গত সপ্তাহে ৪০০ লাউ বিক্রি করেছি ফাউন্ডেশনের কাছে। প্রতিটি লাউয়ের দাম ছিল মাত্র ১০ টাকা। ফাউন্ডেশনের লোকজন খেতে এসে ট্রাকে করে লাউ নিয়ে গেছেন। খেতে আরও নতুন নতুন লাউও হচ্ছে।’
তিনি বলেন, এখন সবজি বিক্রি করতে না পেরে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন অনেকেই। বিক্রি করতে না পারলে এই সব লাউ পচে যাবে। এ জন্য কম টাকায় বিক্রি করে দিচ্ছেন তিনি। বাকি ৬০০ লাউ তিনি বিক্রি করেছেন স্থানীয় বাজারে।
ফাউন্ডেশনের চাইল্ড স্পনসরশিপ বিভাগের প্রধান ও কৃষকের কাছ থেকে সবজি সংগ্রহে সমন্বয়কারী সাদ বিন সাত্তার সংবাদ মাধ্যমটিকে বলেন, ‘আমাদের বিনা পয়সার বাজারে সবজির মধ্যে রয়েছে, লাউ, বেগুন, শসা, মিষ্টিকুমড়া, জালি কুমড়া ইত্যাদি। খেত থেকে আমরা এক- তৃতীয়াংশ সবজি কিনে নিচ্ছি। বাকি সবজি কেনা হচ্ছে সেখানকার স্থানীয় বাজার হতে। বেশির ভাগ সবজি কেনা হচ্ছে পঞ্চগড় এবং রংপুর হতে।’
তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রথম দিন সকাল ৯টায় পল্লবীতে ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ের সামনে ২০ মণ সবজি রাখা হয়েছিলো ‘বিনা পয়সার বাজার’- এ। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে সব সবজি শেষ হয়ে যায়। তবে তারা যে পরিমাণ সবজি নিয়ে আসেন, তার তুলনায় চাহিদা ২০ গুণ বেশি বলে জানিয়েছেন তিনি।
সাদ বিন সাত্তার বলেছেন, ‘প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ ফোন কল পাই সহযোগিতা চাওয়ার। সহায়তা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদেরকে।’
ওই ফাউন্ডেশনের সভাপতি আহমেদ ইমতিয়াজ জামি সংবাদ মাধ্যমটিকে বলেন, ‘ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে নিবন্ধনের মাধ্যমে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, যাত্রাবাড়ী এবং কেরানীগঞ্জে নিম্নমধ্যবিত্ত ১ হাজার ২০০ পরিবারে ২৫ কেজির ত্রাণের ব্যাগ আমরা তাদের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে দিয়েছি। একেকটি ব্যাগে ৮ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ৫কেজি আলু, ১ কেজি লবণ, ১ লিটার তেল, ১ কেজি পেঁয়াজ, বিস্কুট, নুডলস এবং স্যালাইনের প্যাকেট এবং মাস্ক রাখা হয়েছিলো। আরও ৮০০ পরিবারকে এই সহায়তা দেওয়া হবে। তবে সহায়তা চেয়ে নিবন্ধনের আবেদন এতো বেশি আসছে যে আমরা বাধ্য হয়ে সেটি বন্ধ করে দিয়েছি।’
তিনি আরও জানান, তাঁরা প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ লোককে ইফতার করাচ্ছেন। পঞ্চগড় হতে এক ব্যবসায়ী এক টন চাল অনুদান দিয়েছেন। সেটি বিতরণ তারা করেছেন। পাশাপাশি ‘বিনা পয়সার বাজার’ও চলতে থাকবে। এ ছাড়াও ফাউন্ডেশনের ‘সক্ষম’ নামে একটি প্রকল্প রয়েছে জাকাতের অর্থ গ্রহণের জন্য। ওই অর্থ দিয়ে তাঁরা কাজ হারানো মানুষদের ঈদের পর জীবিকার ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। গত চার বছরে তাঁরা ‘সক্ষম’–এর মাধ্যমে ১০টি জেলার ৪৯২ জনকে মুদি দোকান, খামার, রিকশা, ভ্যানের ব্যবস্থা করে জীবিকার সংস্থান করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংবাদ মাধ্যমকে। তাদের এই মহা উদ্যোগকে আমরাও সাধুবাদ জানাই- জয় হোক মানব সভ্যতার।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।