দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জীবন্ত এক জাদুঘর গালাপাগোস। রূপকথার গল্পের মতো শোনালেও আসলে বাস্তবে এমন একটি দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে। সেই দ্বীপপুঞ্জের কাহিনীই রয়েছে আজকের এই লেখাতে।
চার্লস ডারউইনের বিখ্যাত বইটির নাম ‘অন দি অরিজিন অব স্পিসিস’। বইটি প্রকাশিত হয় ১৮৫৯ সালে। আর এ বই লেখার তথ্য তিনি পেয়েছিলেন যে দ্বীপপুঞ্জ থেকে, তার নাম গালাপাগোস। গ্যালাপাগোস দ্বীপের প্রধান প্রাণীই হলো অতিকায় কচ্ছপ। লাখ লাখ বছর ধরে তারা বাস করছে ওখানে। এত বছরেও ওদের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। ইকুয়েডর থেকে প্রায় ছয়’শ মাইল পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জ গালাপাগোস। আগ্নেয়গিরি থেকে সৃষ্টি দ্বীপগুলোর। কিছু দ্বীপ কিন্তু এখনও তৈরি হচ্ছে। এই দ্বীপপুঞ্জটি আবিষ্কার করেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস। ভারত আবিষ্কারের কথা বলে বেরিয়েছিলেন জাহাজ নিয়ে। এখানে কোনো কোনো দ্বীপ এখনও গড়ছে। দ্বীপের বেশিরভাগের নাম আমেরিকার স্বীকৃত আবিষ্কারক ক্রিস্টোফার কলম্বাসের নানা স্মৃতির কথা মনে করিয়ে দেয়। দ্বীপের কয়েকটির নাম পিন্টা আর সান্টা ম্যারিয়া- ক্যারাভেল জাহাজের একটির নামে। কলম্বাসের স্বদেশ ইতালির জেনোয়ার নামেও দ্বীপ আছে। আছে স্পেনের রাজা ফার্ডিনাণ্ডের নামেও। আছে ব্যালট্রা ও স্যান ক্রিস্টোব্যাল। তবে এটা আসলে ছিল স্প্যানিশ জলদস্যুদের আস্তানা। লোকজন তেমন ছিল না। এখনও এসব দ্বীপে মাত্র তিরিশ হাজার লোকের বসবাস। ওদের বেশিরভাগের কাজ সাগরে মাছ ও হাঙ্গর ধরা। পর্যটক আসে ২ লাখের মতো ফি বছর। সেটাই গ্যালাপাগোসের আকর্ষণ ও আয়ের উৎস।
তবে গালাপাগোসের নাম অবিস্মরণীয় হয়ে আছে বিশ্বের অন্যতম প্রকৃতিবিজ্ঞানী ব্রিটিশ নাগরিক চার্লস ডারউইনের জন্য। যার অবিস্মরণীয় কীর্তির ভিত্তিভূমি হল এই গালাপাগোস। চার্লস ডারউইন এখানে আসেন ১৮৮৫ সালে। এইচএমএস বিগল নামে ব্রিটিশ নৌবাহনীর জাহাজে। তার গবেষণা স্টেশনটি এখনও এখানে সংরক্ষিত আছে। স্পেনিশ ভাষায় গালাপাগোস শব্দের অর্থও কচ্ছপ। আর তার এই বিশ্বখ্যাত গবেষণার কারণেই আজকে এ দ্বীপমালায় এত পর্যটকের আগমন ঘটে এখানে আজব প্রাণীকূল দেখতে। তবে এটায় বিপদও ঘটেছে। এখানে পরিবেশ দূষণ ঘটেছে। নানাধরনের পোকামাকড়, মশা ও গবাদির এমনকি বিমানবাহিত হয়ে আগমন ঘটেছে, যা এদেশের মূল প্রাণীকূলের জন্য বৈরি। জাহাজের তেল ফেলা হয় এখানে। পর্যটক ও অধিবাসীরা নানা বর্জ্য তৈরি করে। উপকূলের হাঙরের ঝাঁক শিকার করে নিয়ে যায় মৎস্যদস্যুরা চীনের বাজারে দামি খাবার শার্কফিন বিক্রির জন্য। এই হাঙরেরা সাধারণত হিংস্র নয়। সেজন্য গ্যালাপাগোস স্কুবা ডাইভিং-এর জন্যও খ্যাত। এ ছাড়া এই দ্বীপমালায় কোনো হিংস্র মাংশাসী প্রাণী নেই।
আসলে এই দ্বীপমালা প্রকৃতির এক অসাধারণ শান্ত গবেষণাগার। এ কারণেই ইউনেস্কো এ বিপন্ন দ্বীপমালা ও তার প্রাণীকূলকে রক্ষা করার জন্য একে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং দ্বীপ ও তার প্রাণীগুলিকে বিপন্ন তালিকাভুক্ত করে।
গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ ইকুয়েডরের গালাপাগোস প্রদেশের অন্তর্গত এবং দেশটির জাতীয় পার্কের অংশ। দ্বীপপুঞ্জের মানুষদের প্রধান ভাষা স্পেনিশ। দ্বীপগুলোতে প্রচুর এন্ডেমিক তথা বিরল প্রজাতি আছে। প্রজাতিগুলো গালাপাগোস ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না। নৌচালনার জন্য এই দ্বীপের প্রথম নিখুঁত মানচিত্র তৈরি হয় ১৬৮৪ সালে। মানচিত্র তৈরি করেছিলেন বাকানিয়ার অ্যামব্রোস কাউলি। তিনি দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন দ্বীপের নাম রেখেছিলেন তার সহযোগী জলদস্যুদের নামে। তার নৌভ্রমণে যেসব ইংরেজ অভিজাত লোকেরা সাহায্য করেছিল তাদের নামেও কয়েকটি দ্বীপের নাম রেখেছিলেন। বর্তমানে ইকুয়েডর সরকার প্রায় সবগুলো দ্বীপেরই আলাদা স্পেনিশ নাম দিয়েছে। দাপ্তরিক ও সরকারি কাজে স্পেনিশ নাম ব্যবহার করা হলেও অনেকে এখনও এগুলোকে পুরাতন ইংরেজি নামে ডাকেন।
মোটামুটি এই ছিল গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের কাহিনী। এই দ্বীপে বসবাস করে বিশালকায় কচ্ছপ, সমজাতীয় আরও নানা প্রাণী, বিরাটকায় গিরিগিটি ইগুয়ানা, পাখি হাঁসের মতো জোড়া পায়ের অ্যালব্যাট্রস, পেঙ্গুইন ও সিল মাছ। সিল মাছগুলো মানুষের কাছে ঘেঁষতে মোটেও ভয় পায় না। আপনিও ইচ্ছে করলে ওখানে যেতে পারেন। সূত্র: অনলাইন।