দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভাসমান বাড়ি, ভাসমান হাসপাতাল, ভাসমান স্কুল, ভাসমান এয়ারপোর্ট- এমন অনেক কিছুর পর এবার থাইল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ভাসমান ফুটবল মাঠ!
অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বলেছে, থাইল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলের ছোট্ট একটা গ্রাম কোহ পেনি। পুরো গ্রামটাই একটা দ্বীপ। ফ্যাং এনগা রাজ্যের জেলেগ্রাম। গ্রামের সবার পেশা মাছ শিকার। ৩৬০টি পরিবার বাস করে দ্বীপগ্রামে। মানুষ সাকুল্যে ১৭’শ। গ্রামে স্কুলও আছে। এই গ্রামের মানুষ সবাই মিলে বানিয়েছে একটা ভাসমান ফুটবল মাঠ। আর সেই মাঠকে ঘিরে গ্রামবাসীদের স্বপ্নও আকাশছোঁয়া।
থাইল্যান্ডের মানুষ এমনিতেই ফুটবল পাগল। ফুটবলই ওদের অনেকের ধ্যান-জ্ঞান। ক্লাব ফুটবল নিয়েও ভীষণ মাতামাতি করে। ক্লাবের রঙে পোশাকআশাক বানায়। আর বিশ্বকাপ ফুটবল হলে তো কথাই নেই। নাওয়া-খাওয়া পর্যন্ত ভুলে যায় থাইরা। ঘটনার শুরু ১৯৮৬ সালে। চলছিল ফুটবলের বিশ্বকাপ। কিংবদন্তি ম্যারাডোনা দাবড়ে বেড়াচ্ছেন মাঠ জুড়ে। কোহ পেনি গাঁয়ের স্কুল পড়ুয়া ছেলেরা রাত জেগে বিশ্বকাপ ফুটবল দেখে আর স্বপ্ন বুনতে থাকে। আহা, কবে ওরা অমন ফুটবল খেলতে পারবে! ওদের বলও আছে, খেলোয়াড়ও আছে। তবে ফুটবল খেলতে তাদের বড় বাধা কোথাও তাদের খেলার মাঠ নেই।
পাহাড়ি গ্রাম। এক চিলতে মাঠ নেই কোথাও। ছোট্ট জায়গায় ফুটবল খেলা যায় একটু জোরে কিক মারলেই চলে যায় সাগরে, নয়ত পাহাড়ের গিরিখাদে। এভাবে ফুটবল হয় না। তাই বলে ফুটবলটাকে ঘরের কোনে সাজিয়ে রেখে আড্ডা আর গুলতানি মেরেই দিন কাটাবে তা-ও হয় না। একটা উপায় ঠিকই বের করে নেয় গ্রামবাসীরা। আর সে উপায়টা হলো সাগরের উপরই কৃত্রিম ফুটবল মাঠ বানাবে ওরা। একটা ফুটবল মাঠ!
চারপাশে সাগর, মাঝে পাহাড় আর বন। সমান কোনো জায়গা নেই। কাজেই সাগরের সমান উপরিভাগই ওদের ভরসা। কাজে নেমে পড়ল সবাই। স্কুলে যাওয়ার আগে আর স্কুলে আসা যাওয়ার পথে ভাসমান মাঠ বানানো জিনিসপত্র জোগাড় শুরু হল। বনের কাঠ, পুরনো তক্তা, পুরনো নৌকা আর মাছধরার জাল। স্কুল ছুটির পর এসব দিয়ে বানানো শুরু করল ফুটবল মাঠ। পেরেক ঠুকে ঠুকে, ছোট ছোট তক্তাগুলো জোড়া লাগিয়ে যখন ওরা বিশাল করে তুলছিল, তখনও কেও ভাবেনি এমন ছোট একটা উদ্যোগ থেকেই হয়ে যাবে বিশাল একটা মাঠ। গাঁয়ের বড়রা তো প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। একটু একটু করে যখন ওদের কাজ এগিয়ে যাচ্ছিল তখন একে একে এগিয়ে এলেন বড়রা। হাত মেলালেন খুদেদের সঙ্গে।
তৈরি হয়ে গেল মাঠ। মাঠ তো নয়, কোহ পেনি গাঁয়ের নিজস্ব স্টেডিয়াম। ওখানেই অনুশীলন শুরু করল গাঁয়ের ছেলেরা। মন ভরে খেলতে লাগল ফুটবল। অন্য কেও হলে হয়ত এখানেই থেমে থাকত। কোহ পেনির ছেলেরা থামেনি। রীতিমতো একটা ফুটবল ক্লাবই বানিয়ে ফেলল ওরা ওই ভাসমান মাঠের ওপর ভরসা করে। ক্লাবের নাম ‘পেনি এফসি’, একটা ভাসমান মাঠের ওপর ভিত্তি করে জন্ম নিল একটা ফুটবল ক্লাব। ভাবা যায়! শুধু তাই নয়, থাইল্যান্ডের জুনিয়র লিগে সবচেয়ে সফল দল এই ‘পেনি এফসি’।
ভাসমান ফুটবল মাঠ তৈরির স্বপ্নটা প্রথম কে দেখেছিল, আজ হয়ত ওদের মনে নেই। মনে আছে, ভাসমান মাঠ তৈরির সময় গাঁয়ের সবাই একাকার হয়ে গিয়েছিল। একসাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করেছিল। তাদের এই মাঠ বানানোর গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমাও। ২০০৪ সালের সুনামিও কিন্তু ভাসিয়ে নিতে পারেনি এই ভাসমান মাঠটিকে। আর্ন্তজাতিক ফুটবলে থাইল্যান্ডের তেমন বড় কোনো অর্জন নেই। আছে তার চেয়েও বড় অর্জন- ফুটবলের প্রতি ভালবাসা। এ অর্জনই নাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বকে।
সেই স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা
একসঙ্গে কাজ করলে অনেক কিছুই অর্জন করা যায় তার প্রমাণ রেখেছে এ গাঁয়ের মানুষরা। শুধু ফুটবল মাঠ নয়- একসঙ্গে মিলে-মিশে কোন কিছু করলে তা যত অসাধ্যই হোক না কেনো সফল হবেই থাইল্যান্ডের ‘পেনি এফসি’ ক্লাব ও তাদের ভাসমান ফুটবল মাঠ তার জ্বলন্ত প্রমাণ। তথ্যসূত্র: দৈনিক যুগান্তর অনলাইন।