দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের ডোনাল্ড ট্রাম্পের গত ২৪ ঘণ্টায় দেখা দেওয়া বেশ কিছু উপসর্গ ‘খুবই উদ্বেগজনক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবরে।
খবরে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত একজন একথা জানিয়ে বলেছেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও কোভিড-১৯ হতে সেরে ওঠার পর্যায়ে আসেননি।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ভালো আছেন’ বলে শনিবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকরা যে তথ্য দেন, তার সঙ্গে এই ব্যক্তির দেওয়া তথ্যে বিস্তর ফারাকও রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে একজন চিকিৎসক বলেছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প তাদের বলেছেন যে, “আজকেই এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারবো বলে আমার মনে হচ্ছে।”
তবে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে ওই ব্যক্তি আরও বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য আগামী ৪৮ ঘণ্টা খুবই ‘ক্রিটিকাল’ একটি সময়। কারণ করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে বয়স্কদের ঝুঁকিই সবথেকে বেশি। ৭৪ বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই বয়স শ্রেণীতেই পড়েছেন।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ ধরা পড়ার কয়েক ঘণ্টা পর গত শুক্রবার বিকালে হোয়াইট হাউস হতে ওয়াল্টার রিড ন্যালশনাল মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে ভর্তি হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের চিকিৎসক শন কনলি শনিবার হাসপাতালের বাইরে সাংবাদিকদের বলেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়নি, তাকে অক্সিজেন দেওয়া লাগছে না।
তিনি আরও বলেছেন, “প্রেসিডেন্টের শারীরিক অবস্থার যে অগ্রগতি হয়েছে তাতে মেডিকেল টিম এবং আমি খুবই খুশি।” তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প কবে নাগাদ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেতে পারেন, সে সম্পর্কে কিছুই বলেননি কনলি।
হোয়াইট হাউস বলেছে যে, পূর্ব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবেই ৭৪ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী কয়েক দিন হাসপাতালের একটি স্পেশাল স্যুট হতে কাজ চালিয়ে যাবেন।
আগামী ৩ নভেম্বর ভোট সামনে রেখে গত কয়েক সপ্তাহে নিয়মিতভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী সফর করে আসছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেই তিনি হাজার হাজার মানুষের ভিড়ের মধ্যেই রিপাবলিকান পার্টির বিভিন্ন নির্বাচনী সমাবেশে যোগ দেন।
করোনা ভাইরাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু ও দেশটির অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই মহামারিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ততোটা গুরুত্বই দেননি। সংক্রমণ এড়াতে চিকিৎসকরা যেখানে মাস্ক ব্যবহারের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছেন, সেখানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে মাস্ক পরতে অনাগ্রহ দেখিয়ে এসেছেন, এমনকি যারা মাস্ক ব্যবহার করছেন, তাদেরও সমালোচনা করতে ছাড়েননি ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শন কনলি জানিয়েছেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইতিমধ্যে রেমডেসিভিরের ৫ দিনের কোর্সের একটি ডোজ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তাকে রেজেনেরন ফর্মাসিটিক্যালের পরিক্লোনল অ্যান্ডিবডি ককটেলও (REGN-Cov2) দেওয়া হয়েছে।
ওই ওষুধটি শরীরে ভাইরাসের বিস্তার হ্রাস করে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে সহায়তা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে জিংক, ভিটামিন ডি, ফ্যামোটিডিন, মেলাটোনিন এবং অ্যাসপিরিন দেওয়া হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।