দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পবিত্র শবে মেরাজের বিষয়ে আমাদের অনেক কিছুই অজানা রয়েছে। পবিত্র এই রাতে আসলে কী ঘটেছিলো? সেই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করা হবে আজ।
ইসরা অর্থ হলো রাতে ভ্রমণ করা। মক্কা হতে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত রাসুল (সা.)-এর বিশেষ ভ্রমণই ইসরা হিসেবে পরিচিত। আর মিরাজ অর্থ হলো আরোহণের মাধ্যম কিংবা ঊর্ধ্ব ভ্রমণ। ভূপৃষ্ঠ হতে নভোমণ্ডলে ভ্রমণ করাকে বোঝানো হয়েছে। বায়তুল মুকাদ্দাস হতে সাত আসমানের ওপর সিদরাতুল মুনতাহায় গমন এবং সেখান থেকে আবার বায়তুল মুকাদ্দাসে ফিরে আসাই মিরাজ হিসেবে পরিচিত।
মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘পবিত্র ওই সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে মসজিদে হারম হতে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন। যার চতুর্পাশ আমি বরকতময় করেছি, তাঁকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য, তিনি সর্বশ্রোতা এবং সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ১)
আল্লাহ আরও বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তিনি তাকে (জিবরাইল) আরও একবার প্রত্যক্ষ করেছেন। সীমান্ত নির্দেশকারী সিদরা বৃক্ষের কাছে। যেখানে রয়েছে বাসোদ্যান। যখন সিদরা বৃক্ষটি যতোটুকু আবৃত থাকার ততোটুকু আবৃত করা হয়। তখন তাঁর দৃষ্টিভ্রম হয়নি এবং সীমা অতিক্রমও করেনি। নিঃসন্দেহে তিনি তাঁর রবের শ্রেষ্ঠ নিদর্শনগুলো প্রত্যক্ষ করেছেন।’ (সুরা নাজম, আয়াত : ১৩-১৮)
বায়তুল মুকাদ্দাস গমন
আনাস বিন মালেক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন যে, ‘বোরাক নিয়ে আসা হলো—বোরাক হলো, গাধার চেয়ে দীর্ঘ এবং খচ্চরের চেয়ে ছোট একটি জন্তু দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত যার পদক্ষেপ। আমি তাতে আরোহণ করে বায়তুল মুকাদ্দাস আসি। অত:পর বাহনটি একটি আংটার সঙ্গে বেঁধে রাখি, নবী-রাসুলরা এর সঙ্গেই বাহন বেঁধে নিতেন। মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করি। মসজিদ থেকে বের হলে জিবরাইল (আ.) আমার কাছে দুটি পাত্র আনেন। একটি মদের, আর অপরটি দুধের পাত্র। আমি দুধের পাত্র গ্রহণ করি। জিবরাইল (আ.) বললো, আপনি ফিতরাত তথা স্বভাবজাত বিষয়টিই গ্রহণ করেছেন।
নবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ
জিবরাইল (আ.) মহানবী (সা.)-কে নিয়ে সপ্তাকাশ অতিক্রমের সময় তাঁর সঙ্গে কয়েকজন নবীর সাক্ষাৎ হয়। দ্বিতীয় আসমানে ঈসা বিন মারয়াম এবং ইয়াহইয়া বিন জাকারিয়া (আ.)-এর সঙ্গে, তৃতীয় আসমানে গিয়ে ইউসুফ (আ.)-এর সঙ্গে, আর চতুর্থ আসমানে ইদরিস (আ.)-এর সঙ্গে, আর পঞ্চম আসমানে হারুন (আ.)-এর সঙ্গে, ষষ্ঠ আসমানে গিয়ে ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে এবং ফেরার সময় মুসা (আ.)-এর সঙ্গে দেখা হয়।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হলো যেভাবে
‘অত:পর তিনি আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যান। ঠিক হাতির কানের মতো এর পাতাগুলো। এর ফলগুলো কাঠের মতোই। আল্লাহর নির্দেশে সেটি আবৃত হলে পরিবর্তন হয়ে পড়ে। আল্লাহর কোনো সৃষ্টিই এর সৌন্দর্যের বর্ণনা দেওয়ার সামর্থ্য নেই। অত:পর আল্লাহ আমাকে ওহি প্রদান করেন। অত:পর প্রত্যেক দিন এবং রাতে ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেন।
নামাজ কমাতে মুসা (আ.)-এর পরামর্শ
আমি মুসা (আ.)-এর কাছে আসি। তিনি বলেন যে, আপনার রব আপনার উম্মতের ওপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম, ৫০ ওয়াক্ত নামাজ। তিনি বলেন, আপনি রবের কাছে গিয়ে আরও সহজ করার আবেদন করুন। আপনার উম্মত তা পালন করতে পারবে না। আমি বনি ইসরাইলকে পরীক্ষা করেছি এবং তাদের সম্পর্কেও জানি। অত:পর আমি রবের কাছে গিয়ে বললাম, হে আমার রব, আমার উম্মতের জন্য সহজ করুন। তিনি ৫ ওয়াক্ত নামাজ কমালেন। আমি মুসা (আ.)-এর কাছে গিয়ে বললাম, তিনি ৫ ওয়াক্ত কমিয়েছেন। মুসা (আ.) বললেন, আপনার উম্মত তাও পালন করতে পারবে না। আপনার রবের কাছে যান এবং সহজ করার আবেদন করুন। এভাবেই আমি মহান রব ও মুসা (আ.)-এর মধ্যে আসা-যাওয়া করতে থাকলাম।
শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুহাম্মদ, প্রতিদিন এবং রাতে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে। প্রত্যেক নামাজের বিনিময়ে ১০ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব হবে। এভাবে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াবই হবে। যে কোনো ভালো কাজের ইচ্ছা করবে এবং তা করলো না তার জন্য একটি পুণ্য লেখা হবে। তা করলে দশটি সওয়াব লেখা হবে। যে কোনো মন্দ কাজের ইচ্ছা করে এবং তা করলো না, তার ক্ষেত্রে কিছুই লেখা হয় না। তা করলে একটি গুনাহ লেখা হয়।’
অত:পর আমি অবতরণ করে মুসা (আ.)-এর কাছে চলে আসি। এবারও তাঁকে জানালে তিনি বলেন, আপনার রবের কাছে গিয়ে সহজের আবেদন করুন। আমি বললাম, আমার রবের কাছে অনেকবার গিয়েছি, এখন আবার যেতে লজ্জাবোধ হচ্ছে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৬২)
এভাবেই ৫ ওয়াক্ত নামাজকে মহান রাব্বুল আলামিন ফরজ করেছিলেন এই মেরাজের রাতে। তাই আজকের এই রাতটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ একটি রাত। এই রাতে আমরা বান্দারা অনেক অনেক তজবিহ তাহরিম পাঠ, কোরআন তেলাওয়াত এবং নফল নামাজ পড়ার মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভের চেষ্টা করতে পারি। তিনি আমাদের এই পবিত্র রাতের রহমত, বরকত ও ফজিলত দান করুন- আমিন।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।