দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা জানি ঘরে গাছপালা লাগানো মন ভালো থাকার ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে ঘরের গাছপালা পরিবেশের জন্য উপকারী নাকি ক্ষতিকর? বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।
চারাগাছ উৎপাদন থেকে শুরু করে, পুনরায় ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পট তৈরিসহ ব্রিটেনের উদ্যানবিদ, উদ্ভিদবিদ ও পরিবেশবিদরা আপনার এই উদ্যানের শখ টিকিয়ে রাখার জন্য নানা কাজ করে চলেছেন। বর্তমানে বাসায় ছোট বাগান করার প্রবণতাও বাড়ছে বলে জানিয়েছে রয়্যাল হর্টিকালচারাল সোসাইটি (আরএইচএস)। সাম্প্রতিক সময় এটি আরও বেড়েছে বলে এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে।
এই প্রবণতাকে পরিবেশ বান্ধব এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার সহস্রাব্দ বলে মনে করা হয়, যারা তাদের শহরের ছোট বাসায় সবুজ তৈরির চেষ্টা করছেন ও ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল যুগে কিছু ‘বাস্তব’ লালন-পালনও করছেন।
যুক্তরাজ্যে প্রতি ১৬ হতে ২৪ বছরের ৫ জন ব্যক্তির মধ্যে অন্তত ৪ জনের বাসায় কোন একটি গাছ রয়েছে। তাদের মধ্যে আবার এক পঞ্চমাংশ গাছ কিনেছেন তাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকার কথা চিন্তা করে। গাছ নিয়ে মানুষের আগ্রহ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, বেশ কিছু অনলাইন খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বর্তমানে একেবারে বাড়িতেই গাছপালা পৌঁছে দিচ্ছে। লন্ডনের সবচেয়ে বড় অনলাইন গাছ বিক্রেতা দাবি করা প্যাচ এদের মধ্যে আবার অন্যতম। তারা তাদের গাছগুলোকে ডাক নাম দেয় যেমন ‘চ্যাজ’ বা ‘বিগ কেন’, যাদেরকে তাদের সম্ভাব্য ‘গাছের পিতামাতার’ কাছে দিয়ে দেওয়া হয়।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফ্রেডি ব্লাকেট বলেছেন, গাছ মানুষের মধ্যে ‘শান্তি, আনন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্য’ এনে দিতে পারে। প্যাচের গাছ ও উদ্ভিদগুলো নেদারল্যান্ডসে জন্মানো হয়। তারপর গাছ সরবরাহের আদেশ পাওয়ার পর সেগুলো যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসা হয়। যে কারণে অতিরিক্ত গাছ আমদানি করা হয় না। তবে এর ফলে ‘প্লান্ট মাইলস’ তৈরি হতে পারে বলে বলছেন ফে কেনওয়ার্থি, প্ল্যান্টসোয়াপ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যারা স্থানীয়ভাবে গাছপালা হাতবদলের জন্য উৎসাহিত করে থাকেন। তিনি বলেছেন, ‘যেহেতু অনেক গাছ বিদেশ থেকে নিয়ে আসা হয়ে থাকে, তাদের পরিবহনের সময় অনেক ইকোলজিক্যাল ফুটপ্রিন্টও তৈরি হতে পারে।’
তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন যে, গাড়িতে করে কোনো উদ্যানে যাওয়ার চেয়ে একবার বাসায় গাছ সরবরাহে পরিবেশগত প্রভাব অনেক কম পড়ে থাকে। তিনি বলেন যে, উষ্ণ জলবায়ুর মধ্যে গাছ উৎপন্ন করে যুক্তরাজ্যে পাঠানো হলে যুক্তরাজ্যের কাছাকাছি অন্য কোনো গ্রিনহাউজ তৈরির প্রয়োজনও পড়বে না। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, যেসব গাছের চাহিদা একেবারে নেই, বা কলম তৈরি করা বা বীজ থেকে গাছ উৎপন্ন করা সবসময়ই বাসাবাড়িতে যারা গাছের বাগান করেন, তাদের জন্য ভালো বিকল্পও হতে পারে।
তিনি বলেন, এতে নতুন গাছের সঙ্গে আসা অতিরিক্ত প্যাকেজিং করার বিষয়টি এড়ানোও যেতে পারে- কারণ প্যাকেট করার জন্য প্লাস্টিকের হাঁড়ি ব্যবহার করা হয়। প্লাস্টিক বিরোধী প্রচারণা কর্মী অ্যামি মার্ক বলেছেন, পুনরায় ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এসব প্লাস্টিকের পট কিংবা হাঁড়ি দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দিতে পারে।
ওয়েস্ট এন্ড রিসোর্স অ্যাকশন প্রোগ্রামের (ডব্লিউআরএপি) বিশ্লেষণ অনুযায়ী জানা যায়, যুক্তরাজ্যের মাত্র ১০ শতাংশ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এসব প্লাস্টিকের হাঁড়ি গ্রহণ করে থাকেন। অনেক সময় এগুলো আবার সংগ্রহ করা হয় না, কারণ এগুলো বিষাক্ত বলে মনে করা হয়ে থাকে।
আবার অনেক ক্ষেত্রে এসব হাঁড়ি তৈরি করা হয় কালো প্লাস্টিক দিয়েও, যা পুনঃপ্রক্রিয়া করার কেন্দ্রে বাছাই মেশিনগুলো সনাক্ত করতেও পারে না। যে কারণে সেগুলোর ঠাই হয় শেষ পর্যন্ত ভাগাড়ে। এমনকি অনেক স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কালো নয়, এমন গাছের হাঁড়িগুলো নিতে চায় না। যে কারণে সহজেই পুনঃ ব্যবহার করা যায় এমন হাঁড়ি কিংবা পচন উপযোগী হাঁড়ি তৈরির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সে কারণে বর্তমানে হর্টিকালচারাল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনও আরএইচএস গার্ডেন অনেক সময় গাছের পটগুলো পুনঃব্যবহার বা ফিরিয়ে নেওয়ার প্রকল্প চালু করেছে।
‘কিডস অ্যাগেইনস্ট প্লাস্টিক’ নামে একটি দাতব্য সংস্থা পরিচালনা করেন মিক, তারই ছোট বোন এলাকে নিয়ে। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যে, মানুষ যেনো গাছ কেনার সময় সেটির হাঁড়ি নিয়ে প্রশ্ন করেন যে, এটি কী আবারও ব্যবহার করা যাবে? বা এমন কোনো জায়গা কি রয়েছে যেখানে আসলে পরিবেশ উপযোগী হাঁড়ি পাওয়া যাবে?
তবে ঘরে পরিবেশ সম্মত গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে সেটি কীভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে, শুধু এটাই গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং সেখানে কি জন্মানো হচ্ছে, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। উদ্ভিদবিদ ড. ট্রেভর ডাইনসের মতে, প্রধান সমস্যাই হলো জীব সারের মধ্যে পিট শৈবাল ব্যবহার করা।
ঘরের গাছ কী কখনও বাতাস পরিষ্কার করে?
আমরা সবাই জানি গাছ কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে ও অক্সিজেন নির্গত করে। এর অর্থই এই নয় যে, তারা পরিবেশের দূষণ বন্ধ করে বাতাসকে পরিষ্কার করে রাখছে। পরিবেশ বিষয়ক পরামর্শক এবং এই বিষয়ে পিএইচডি করা কার্টিস গুয়াব দেখতে পেয়েছেন যে, ঘরের একটি কক্ষ হতে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কার্বনডাই অক্সাইড সরিয়ে ফেলতে পারে গাছ কিংবা উদ্ভিদ।
তবে সেটা নির্ভর করে কী ধরণের গাছ ও সেগুলো পরিমাণে কতোগুলো রয়েছে, ঠিক তার ওপর। সেইসঙ্গে রুমটি কতোবড় ও গাছের মাটির ভেতরে কতোটা পানি রয়েছে, তার ওপর। তিনি বলেন যে, ‘উদ্ভিদে যে পরিমাণ পানি সরবরাহ করা হয়, তার ওপর নির্ভর করে গাছটি কতোটা কার্বন ডাই অক্সাইড সরাতে সক্ষম, ঠিক যেমনটি মানুষের ক্ষেত্রেও ঘটে থাকে। আপনার শরীরে যদি পানিশূনত্য থাকে বা আপনি অতিরিক্ত পানি খেয়ে ফেলেন, তাহলে আপনিও কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ বোধ করবেন না।
ঘরের গাছ তাহলে কী পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর?
এই বিষয়ে ওয়াঙ বলেছেন, যা কিছুই আমরা করি না কেনো, সেটির একটি কার্বন ফুটপ্রিন্ট তৈরি করে, তবে সেটি পরিবেশের ওপর কতোটা প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে আতংকিত হওয়া মোটেও ঠিক নয়। তবে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, ক্রেতারা যদি যতোটা সম্ভব টেকসই পরিবেশ রক্ষা করতে চান, তাহলে তাদের উচিত হবে সরবরাহকারীদের সঙ্গে পিট শৈবাল ব্যবহার নিয়ে খোলাখুলি কথা বলা, বিশেষ কিছু গাছপালা এড়িয়ে চলা ও কলম বা বীজ থেকে তৈরি করা হয়, এমন গাছপালার প্রতিই বেশি আগ্রহী হওয়া। তিনি মনে করেন, এর কোনটিই কিন্তু কঠিন কোন কাজ নয়। তবে এর প্রতিটি পদক্ষেপই পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ সাহায্য করতে পারে। তথ্যসূত্র: বিডিলাইভ২৪
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।