হাসানুজ্জামান ॥ সাংবাদিক নির্যাতন আবারো বেড়েছে। পাবনার ঈশ্বরদীতে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে মানবন্ধন ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদের বিরুদ্ধে পাবনার এক প্রাক্তন এমপি ডিজিটাল আইনে এই মামলাটি করেছে। মামলা করার পর পরই পাবনার সাংবাদিকরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। তারা এই মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে পাবনা শহরে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। এখন আন্দোলন শুধুমাত্র পাবনা শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।
উপজেলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। এই মামলা নিস্পত্তির পথে গেলেতো আর কোন কথা নেই কিন্তু মামলা চলমান থাকলে আন্দোলন দেশব্যাপি ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। কিছুদিন আগে দিনাজপুর সদর হাসপাতালে সরবরাহকৃত খাদ্যের মান নিয়ে স্থানীয় জনৈক এক সাংবাদিক নিউজ করে। এই নিউজকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকের নামে ডিজিটাল আইনে মামলা করলে পুলিশ সাংবাদিককে গ্রেফতার করে। সাংবাদিককে জেলে যেতে হয়। তারও আগে কাজল মাহমুদ নামের ঢাকার কাগজের এক সাংবাদিক দীর্ঘদিন নিখোঁজের পর অবশেষে তার সন্ধান মিলে যশোরের বেনাপোল সীমান্তে। সাংবাদিক কাজল এখন জেলে রয়েছে। সাংবাদিক কাজলের নিখোঁজ এবং জেলে থাকার পিছনে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের হাত রয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে সচিবালয়ে জনৈক আমলা কর্তৃক সাংবাদিক রোজিনা খাতুনের হেনস্তার ঘটনা দেশ ব্যাপি ব্যাপক আলোচনায় এসেছে।
সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা সব সরকারের আমলেই ঘটে আসছে। ক্ষমতাসীন সরকারের প্রভাবশালী আমলা বা রাজনীতিবিদদের সাথেই সাংবাদিকদের ঝামেলা হয়। সমাজের অসংগতি তুলে ধরাই সাংবাদিকদের প্রধান কাজ। বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কিছু প্রভাবশালী মানুষ তাইরে নাইরে করে অর্থের মালিক হতে চায়। সেই অর্থ অর্জনের পথটি কখনো সহজ হয় আবার কখনো বৈসাদৃশ্য হয়। সাংবাদিকরা এ ক্ষেত্রে নিউজ করলেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এই প্রভাবশালী মহল। কখনো রাতের অন্ধকারে নিজের তৈরী করা ক্যাডার বাহিনী দিয়ে সেই সাংবাদিকদের আঘাত করে। আবার কখনো থানায় মামলা ঠুকে দেয়। সরকারের ডিজিটাল আইন প্রবর্তনের পর প্রভাবশালী এই মহলটি সাংবাদিকদের হেনস্থা করতে উঠে পড়ে লেগেছে।
‘দৈনিক ইত্তেফাকের’ ব্যরিষ্টার মইনুল ইসলাম এবং ‘দৈনিক আমার দেশ’ পত্রিকার মাহমুদুর রহমানকে সন্ত্রাসীরা যে ভাবে আক্রমণ করে আহত করেছে তা ছিল স্মরণাতীতকালের ভয়াবহ ঘটনা। রাজনীতিতো অনেক প্রকার। যে রাজনীতিই হোক বুদ্ধিদিয়ে কৌশল করে প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা কর্ধাসঢ়;টাই উত্তম বলে গুণিরা মনে করেন।
ক্যাডার দিয়ে হাত,পা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে পঙ্গু বানানোর রাজনীতি কি সুস্থ মানসিকতার লক্ষণ? স্বাধীনতা বিরোধীরা যে ভাবে হত্যার মধ্যদিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায় সেই রাজনীতি থেকে কি শিক্ষা নেওয়া যায় ? হত্যা বা সহিংসতার রাজনীতি কখনো কারোর জন্য মঙ্গল হতে পারে না।
শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু হওয়ার পিছনে সেই সময়ের দৈনিক ইত্তেফাঁক, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক আজাদসহ অন্যান্য পত্রিকার সাহসী ভ’মিকার কথা কি ভোলা যায় ? আজকের শেখ হাসিনা জননেত্রী হওয়ার পিছনে প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনি· মিডিয়া অনেকগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তেমনিভাবে খালেদা জিয়াকে দেশ নেত্রী হওয়ার পিছনে মিডিয়ার ভ’মিকা কোন অংশে কম ছিল না। ফলে মিডিয়া কখনো কারো শত্রæ নয়। দলীয় ছত্র ছায়ায় থেকে অনেক সুযোগ সন্ধানীরা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছে। এই সব প্রভাবশালী ব্যক্তিরা একদিকে রাষ্ট্রের ক্ষতি করছে অপরদিকে দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ঠ করছে। অনেক সময় রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকরা নিচের নেতাদের খোঁজ খবর রাখতে পারে না। মিডিয়া ঠিকই এদের সম্পর্কে জানে। সময় মত মিডিয়া এদের চরিত্র জনসন্মুখে তুলে ধরে। এতে দল , রাষ্ট্র , সমাজ ও পরিবার সকলের জন্যই মঙ্গল বয়ে আনে। এদেশে সামরিক সরকার এবং মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে মিডিয়া আগে যেমন সোচ্ছার ছিল এখনও আগের মতই রয়েছে। এই জন্যইতো সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ।
সংবাদপত্রকে উপেক্ষা করা বা সংবাদপত্রের সাথে বৈরিতা সৃষ্ঠি করা কখনো কাম্য হতে পারে না। শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর সকল দেশে সংবাদপত্রকে সন্মানের চোখে দেখা হয়। এ দেশে কেন তার ব্যতিক্রম হবে?
তবে একটি কথা বলার দরকার এই জন্যই যে, দেশের প্রতিটি প্রিন্ট অথবা ইলেকট্রনি· মিডিয়া নিরপেক্ষভাবে সততার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করে আসছে এমনটি কিন্তু নয়।
অনেক মিডিয়া রয়েছে যাদের উদ্দেশ্য সাংবাদিকতা নয় , সাংবাদিকতার পিছনে রয়েছে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য। অনেকে আবার সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে বিশেষ সুযোগসুবিধার বিনিময়ে সরকারের গুণ গান গাইতেই ব্যস্ত তাকে। আবার সাংবাদিকদের মধ্যে নীতি ভ্রষ্ঠ হলুদ সাংবাদিকও রয়েছে। এ দেশে তাদের দাপটও কম নয়। সংবাদপত্রের প্রধান কাজ হওয়া উচিত জনগণ তথা রাষ্ট্রের পক্ষে কথা বলা। রাষ্ট্রকে আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়ে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহযোগিতা করা। এর ব্যত্যয় কারোর কাম্য নয়।
# লেখক: গবেষক ও প্রাবন্ধিক।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।