দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কোরবানী দিতে গেলে পশু জবাই যাতে শুদ্ধ হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। প্রথমত: নিয়ম শুদ্ধ হতে হবে। দ্বিতীয়ত পশু জবাই করার ক্ষেত্রেও রয়েছে কিছু শর্ত। আজ জেনে নিন সেগুলো।
কোরআন এবং সুন্নাহর বিধান অনুযায়ী জবাই শুদ্ধ তথা জবাইকৃত পশুর গোশত বৈধ হওয়ার জন্য ৩টি শর্ত পালন করা আবশ্যক।
১. জবাইকারীকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে।
২. জবাইয়ের সময় আল্লাহর নাম অবশ্যই উচ্চারণ করতে হবে।
৩. শরিয়তসম্মত পদ্ধতিতে পশু জবাই করতে হবে। আর সেটি হলো, পশুর খাদ্যনালি, দুটি শ্বাসনালি ও রক্তনালি কাটা।
জবাইয়ের সময় পশুকে কষ্ট দেওয়া যাবে না
শাদ্দাদ বিন আউস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কাজে সঠিক পদ্ধতিই অবলম্বন আবশ্যক করেছেন। সুতরাং যখন তোমরা পশু হত্যা করবে সুন্দরভাবে হত্যা করবে। যখন তোমরা পশু জবাই করবে, সেটি সুন্দরভাবে জবাই করবে। তোমাদের প্রত্যেকেই যেনো (পূর্ব থেকে) ছুরি ধার দিয়ে নেয় ও প্রাণীকে শান্তি দেয় (দ্রুত কষ্টমুক্ত করে)। ’ (বুখারি)
উল্লিখিত হাদিসের দাবি, প্রাণী হত্যায় মানুষ সর্বোচ্চ সুপন্থা অনুসরণ করবেন, যেনো প্রাণীর অতিরিক্ত কষ্ট না হয়। জবাইয়ের সময় প্রাণীর কষ্ট শতভাগ এড়িয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। তবে ছুরি ধারালো হলে তার মৃত্যু সহজ হবে। তাই হাদিসে পশু জবাইয়ের আগে ছুরি ধারালো করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। জবাইয়ের আগে প্রাণীকে পানি পান করানো ও ছুরি ধারালো করা মুস্তাহাব। শাস্তি দেওয়ার অর্থই হলো, জবাইয়ের অনেক আগে তাকে বেঁধে না রাখা ও জবাইয়ের পর প্রাণত্যাগের সময় দেওয়া। অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) জবাইয়ের পূর্বে ছুরি প্রাণীর সামনে আনতে ও তার সামনে ছুরি ধার দিতে নিষেধ করেছেন এবং দ্রুত জবাইয়ের কাজ শেষ করার নির্দেশও দিয়েছেন।
পশু হত্যার সময় তার সঙ্গে নির্দয় আচরণ করা মোটেও উচিত নয়। সম্ভব হলে একটি প্রাণীর সামনে অন্য প্রাণী জবাই দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, যেনো সে মৃত্যুর আগেই মৃত্যুর ভয়ে ভীত হতে না পারে। অনেক সময় মৃত্যুভয়ে প্রাণী ছোটাছুটিও করে। তখন পশুর সঙ্গে নির্দয় আচরণ করা একেবারেই অনুচিত। জবাইয়ের পর প্রাণীর প্রাণ বের হয়ে যাওয়ার পর তার চামড়া ছাড়াতে হবে। প্রাণ বের হওয়ার আগে কিংবা পশু পুরোপুরি শান্ত হওয়ার পূর্বে চামড়া ছাড়ানো হারাম। তবে কেও পশু পুরোপুরি শান্ত হওয়ার আগে চামড়া ছিললে তার গোশত হারাম হবে না, যদিও সে পশুকে কষ্ট দেওয়ার কারণে গুনাহগার হবেন। চামড়া একসঙ্গে পুরোটা ছিলাও বৈধ, আবার টুকরা টুকরা করে ছিলাও বৈধ। (কিফায়াতুল মুফতি : ৮/২৫৭, আগলাতুল আওয়াম, পৃষ্ঠা ১৩৪)
জবাইয়ের স্থানে পশুকে যেনো-তেনোভাবে টেনেহিঁছড়ে নিয়ে যাওয়া, শোয়ানোর পর জবাই করতে কিছুটা দেরি করা, পশুর সামনে ছুরি ধারানো মাকরুহ। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৪/৮১)
জবাইয়ের সময় যেসব বিষয়গুলো লক্ষ রাখতে হবে
# জবাইয়ের পূর্বে প্রাণীকে দানা-পানি খাওয়ানো মুস্তাহাব। পশুকে ক্ষুধার্ত রেখে জবাই করা মাকরুহ।
# নির্দয়ভাবে জবাইয়ের স্থানে নেবেন না।
# যতোটা সম্ভব সহজে শোয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। অতিরিক্ত কষ্ট হয়- এমন পদ্ধতি পরিহার করতে হবে।
# কিবলামুখী এবং বাঁ পাশে শোয়াবে, যেনো সহজে পশুর প্রাণ নাশ হয়। বিপরীত দিক করা মাকরুহ।
# চার পায়ের তিন পা বাঁধবেতে হবে।
# ছুরি ধারালো করতে হবে। ভোঁতা ছুরি দিয়ে পশু জবাই করা মাকরুহ।
# পশুর সামনে ছুরি ধার দেবেন না। এটিও মাকরুহ।
# শোয়ানোর পর জবাই করতে দেরি করাও মাকরুহ।
# এক পশুর সামনে অন্য পশু জবাই করাও মাকরুহ।
# জবাইয়ের সময় মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলা কিংবা কাটতে কাটতে গলার হাড়ের সাদা মগজ পর্যন্ত চলে যাওয়াও মাকরুহ।
# পশুর ঘাড়ের ওপরের দিক হতে জবাই করা নিষিদ্ধ। কারণ হলো এতে পশুর বেশি কষ্ট হয়।
# পশু জবাইয়ের পর পশু পুরোপুরি স্থির হওয়ার আগে ঘাড় আলাদা করা ও চামড়া ছাড়ানো মাকরুহ।
উল্লিখিত বিষয়গুলো শুধুমাত্র কোরবানির সঙ্গে বিশেষায়িত তা নয়, বরং যে কোনো সময় পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রেও তা বিবেচ্য। (ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া : ১/৯৮)
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকার চেষ্টা করি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।