দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সাংবাদিক, ভাষা সংগ্রামী, প্রগতিশীল আন্দোলনের অগ্রসৈনিক, বীরমুক্তিযোদ্ধা এবং পাবনা প্রেসক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রণেশ মৈত্র আর নেই।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯০ বছর। তিনি স্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা পুরবী মৈত্র, দুই ছেলে এবং তিন মেয়েসহ অসখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আগামীকাল (মঙ্গলবার) তার সৎকার করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানানো হয়েছে।
ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন গণ আন্দোলনে সব সময় সাহসী ভূমিকা রাখেন রণেশ মৈত্র। ১৯৩৩ সালের ৪ অক্টোবর তার মাতামহের চাকুরিস্থল রাজশাহী জেলাস্থ ন’হাটা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন আজীবন সংগ্রামী রণেশ মৈত্র। বাবা রমেশ চন্দ্র ছিলেন পাবনার আতাইকুলা থানার ভুলবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
২০১৮ সালে সাংবাদিকতায় একুশে পদক পান রণেশ মৈত্র। তার স্ত্রী পুরবী মৈত্র বীরমুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, পাবনা জেলা শাখার সভানেত্রী।
সপ্তম শ্রেণীতে ওঠার পরই টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালান রণেশ মৈত্র। নিজ জীবন সংগ্রাম থেকে শিক্ষা নিয়েই রণেশ মৈত্র দেশের অসহায়, শোষিত এবং বঞ্চিত মানুষের জন্য আন্দোলন ও সংগ্রাম করেন। ১৯৫০ সালে জিসিআই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৫ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ হতে আইএ ও ১৯৫৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৪৮ সালে ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দিয়ে ভাষা আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় তার রাজনৈতিক জীবন।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনেও তিনি পাবনা জেলার অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ওই বছরই তিনি ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে তিনি বাংলাদেশ অবজারভারের আব্দুল মতিন, কামাল লোহানী, প্রসাদ রায়, আনোয়ারুল হকসহ প্রগতিশীল বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে শিখা সংঘ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনও প্রতিষ্ঠা করেন। যে সংগঠনের একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার ছিল, সেখান থেকে শিখা নামে একটি হাতে লেখা পত্রিকা প্রকাশিত হতো।
ভাষা আন্দোলন, ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ পাক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য তিনি বহুবার কারাবরণও করেন। ১৯৫৫ সালে জেল হতে মুক্তি পেয়ে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৫৭ সালে মওলানা ভাষানীর নেতৃত্বে ন্যাপে যোগ দেন তিনি। পরে ১৯৬৭ সালের দিকে তিনি মোজাফ্ফর আহমেদের নেতৃত্বাধীন রাশিয়াপন্থী ন্যাপে যুক্ত হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ন্যাপের প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
রণেশ মৈত্র ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তৎকালীন জেলা প্রশাসক নুরুল কাদের খান জেলার প্রগতিশীল বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে তিনি একটি সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটির রণেশ মৈত্র ছিলেন একজন অন্যতম সদস্য। ১৯৯৩ সালে তিনি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে গণফোরামে যোগ দেন ও প্রেসিডিয়াম সদস্য হন। তিনি দীর্ঘদিন গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে ২০১৩ সালে তিনি ঐক্য ন্যাপে যোগ দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রণেশ মৈত্র ঐক্য ন্যাপের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন।
১৯৫১ সালে সিলেট থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নওবেলাল পত্রিকার মাধ্যমেই তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয়েছিলো। তারপর কোলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সত্যযুগে তিন বছর সাংবাদিকতার পর ১৯৫৫ সালে যোগ দেন দৈনিক সংবাদ পত্রিকায়। ১৯৬১ সালে ডেইলি মর্নিং নিউজ ও ১৯৬৭ সাল থেকে তিনি ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দৈনিক অবজারভারে পাবনা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯২ সালে দি নিউ নেশনের মফস্বল সম্পাদক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর তিনি ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দি ডেইলি স্টারের পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। পরে তিনি স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়ে একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে দেশের শীর্ষ পত্রপত্রিকায় কলাম লিখে সারা দেশেই ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন।
তিনি ১৯৬১ সালে পাবনায় পূর্বপাকিস্তান মফস্বল সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত পূর্বপাকিস্তান সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই সম্মেলনের মাধ্যমেই মফস্বল সাংবাদিকরা তাদের পেশার স্বীকৃতি পায়। তিনি ওই বছরেই প্রতিষ্ঠিত পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হন। এছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে জেলার সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দেন।
সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে এবং দুঃখদুর্দশায় সব সময়ই এগিয়ে আসতেন রণেশ মৈত্র। তাঁর মৃত্যুতে পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান এবং সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ পাবনার সাংবাদিকদের পক্ষ হতে গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকার চেষ্টা করি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।