পুষ্টি সেবার যথাযথ প্রয়োগ দরকার

দি ঢাকা টাইমস্‌ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের অধিক জনসংখ্যার কারণে পুষ্টিহীনতা বেশি দেখা যায়। তাই পুষ্টি সেবার যথাযথ প্রয়োগ বেশি জরুরি।

বাংলাদেশের মতো বিশাল জনসংখ্যার একটি দেশের জন্য ‘স্বাস্থ্য’ কিংবা ‘পুষ্টি’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। একটি দেশ তো দাঁড়িয়েই থাকে তার সুস্থ-সচেতন জনগোষ্ঠীর ওপর। স্বাস্থ্য বা পুষ্টি সেই সুস্থ-স্বাভাবিক জনগোষ্ঠী তৈরিতে ভূমিকা রাখে। ‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’। শৈশব ও কৈশোরের সঠিক শারীরিক পুষ্টি ও বিকাশই পারে তার ভবিষ্যৎ জীবনের ভিতটি রচনা করে দিতে। এসব বিবেচনা করেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সহায়তায় ‘জাতীয় পুষ্টি সেবা’ প্রকল্প চালু করা হয়। বছরের পর বছর ধরে কত সভা-সমিতি, টাকাপয়সা খরচ করে এসব প্রজেক্ট-প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া হয় কিন্তু অচিরেই পরস্ফুিট হয় তার অকার্যকারিতা, ঘটে যায় অকালপ্রয়াণ! অথচ ভবিষ্যৎ জাতি গঠনে শিশু ও কিশোরদের শারীরিক পুষ্টির কোনো বিকল্প নেই। এসব কিছু জানা ও বোঝা সত্ত্বেও লক্ষ্য অনুযায়ী এগোতে পারছে না ‘পুুষ্টি প্রকল্প’ বা ‘জাতীয় পুষ্টি সেবা’ প্রকল্প। -দৈনিক প্রথম আলো অনলাইন।

কোটি কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ থাকলেও দেশের মানুষজন (শিশু-কিশোর) তাদের কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না। আলাপ-আলোচনা প্রজেক্ট-প্রপোজালের রাশি রাশি ভালো কথা, নিয়ম-নৈতিকতা, প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে বরাদ্দকৃত অর্থের যথার্থ ফল লাভ হচ্ছে না। মানুষজন-দরিদ্র, অশিক্ষিত, অপুষ্ট শিশু-কিশোর দিয়েই চিহ্নিত হয়ে থাকছে দেশটির ভবিষ্যৎ সংকেত। শুধু সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী কিংবা মাঠপর্যায়ের ট্রেনিংয়ের মধ্য দিয়েই নিঃশেষিত হচ্ছে কিংবা দেখানো হচ্ছে প্রধান খরচের হিসাব অথচ শিশু-কিশোরদের যথাযথ খাবার-দাবার নিশ্চিত করতে সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওই জাতীয় বারবার প্রশিক্ষণের প্রয়োজন যে কতখানি, তা নিয়ে নতুন করে ভাববার আছে।

খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে যথেষ্ট ভালো ধারণা প্রাথমিক শিক্ষার বইগুলোতে তো আমরা সবাই পেয়েই থাকি। অতি ক্ষুদ্র নবজাতক কিংবা মারাত্মক রকমের পুষ্টিহীন ছোট শিশুদের যথার্থ পুষ্টিবিধানের জন্য যদিও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীর প্রয়োজন আছে। এ ছাড়া বয়স অনুযায়ী খাদ্যমানের মানসম্পন্ন তালিকা করে তার যথাযথ সরবরাহ এবং বিলিকার্য নিশ্চিত করেই তো সমস্যার সমাধান করা যায়। শিশু জন্মের পর থেকে, এমনকি মাতৃজঠর থেকেই তার পুষ্টির জোগান দিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের সব শিশু-কিশোরের শারীরিক বিকাশ-বৃদ্ধি নিশ্চিত করেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।

হাসপাতাল, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান দিয়ে শুরু করে সরকারি প্রাথমিক স্কুল পর্যন্ত এই পুষ্টি সেবা কার্যক্রমের আওতায় আনা দরকার। নবজাতক ওয়ার্ড, শিশু ওয়ার্ডে শিশু অপুষ্টির ক্যাটাগরি করে যেমন প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেওয়া যায়, তেমনই প্রাথমিক স্কুলে সরকারি বরাদ্দের অংশ সরবরাহ করে, শিশু-কিশোরদের জন্য দৈনিক অন্তত একবার একটি সুষম পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা টিফিন হিসেবে নিশ্চিত করা যায়।

এ ছাড়া আয়রন, ভিটামিন জাতীয় সাপিস্নমেন্টের বিষয়গুলোও এই পুষ্টি প্রকল্পের আওতায় থাকতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যশিক্ষাসহ ভিটামিন, আয়রন সাপিস্নমেন্ট তো সরকারি হাসপাতালগুলোতে যথারীতি সরবরাহ করাই হয়ে থাকে।

Related Post

পুষ্টি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত উচ্চপদস্থ সরকারি কিংবা বেসরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কেউই এই কার্যক্রমের ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারেন না। সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলে কাউকে একতরফাভাবে দোষারোপ করাও কোনো কাজের কথা নয়। একটা বিষয় মনে রাখা দরকার, মানুষের নিয়ত যদি ভালো হয়, তবে সে পারে না এমন কাজ কমই আছে। শিশু-কিশোরদের শারীরিক পুষ্টি ও বিকাশের কথা তথা ভবিষ্যৎ দেশ ও জাতির কথা ভেবে ব্যক্তিগত লোভ-লালসার পথ পরিহার করে আমাদের ভালোর জন্য কাজ করতে হবে।

অপুষ্টি, অশিক্ষা, দারিদ্র্য-এসবই এক চক্রের মধ্যে আবর্তিত। পুষ্টিহীনতা-দারিদ্র্য যেমন অশিক্ষা, অজ্ঞানতার জন্ম দেয়; তেমনই অশিক্ষিত-অজ্ঞান জনগোষ্ঠীই দারিদ্র্য ও অপুষ্টির বোঝা বাড়িয়ে তোলে। এ কারণেই গৃহীত সব পুষ্টি কার্যক্রমকে গতিশীল করে পুষ্টিহীনতার অভিশাপ থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হবে এবং জরুরি ভিত্তিতেই।

শুধু নিজে খেয়ে নিজে পরার জন্য তো আমাদের জন্ম হয়নি। চুরি-ডাকাতি, জোচ্চুরি করে অন্যের মুখের গ্রাস কেড়ে খাওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। সরকারি কিংবা আন্তর্জাতিক বরাদ্দকৃত টাকা মানুষের কাজে না লাগিয়ে ব্যক্তিগত উদরপূর্তির অধিকারও আমাদের নেই। আমাদের নিয়ত ভালো করতে হবে, মানুষ হিসেবে নিজের পরিচয়কে জাগিয়ে তুলতে হবে। ‘সুস্থ দেহে সুস্থ মন’ নিয়ে দেশের তাবৎ শিশু-কিশোর যেন তাদের ভবিষ্যৎ চলার পথকে সুগম করতে পারে এবং দেশমাতৃকার একজন যোগ্য সন্তান হিসেবেও তার কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারে, সে চেষ্টাই করতে হবে।

অশিক্ষার অন্ধকার থেকে মুক্ত হয়ে সুষ্ঠু দেশ-জাতি গঠনে কাজ করা আমাদের কর্তব্য। শিক্ষাহীন, খাদ্যহীন দারিদ্র্যপীড়িত সাধারণ মানুষকে সহায়তা করে মানুষের মতো গড়ে তুলে মূল জনগোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার, যাতে করে কেউই আর দেশটির ওপর বোঝার মতো চেপে থাকতে না পারে।

মাত্রাতিরিক্ত সহায়হীন জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধেও শিক্ষা ও পুষ্টির বিকল্প নেই। তাদের বঞ্চিত করে রেখে নিঃসহায়ের বোঝা বাড়িয়ে তুললে একদিন এর বিস্ফোরণ থেকে আমরা কেউই আর রেহাই পাব না। এ ক্ষেত্রে তাই দেশের শিক্ষিত মানুষদের দায়িত্বই সবচেয়ে বেশি।

# লেখক: তৃপ্তি বালা- গল্পকার, চিকিৎসক।

This post was last modified on ডিসেম্বর ১০, ২০২৪ 12:00 অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

হোসাইন নূরের কথায় নতুন গজল ‘মিছে দুনিয়া’ এখন ইউটিউবে [ভিডিও]

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ইসলামিক সঙ্গীত জগতে এক নয়াদিগন্তের সূচনা করলেন হোসাইন নূর। তার…

% দিন আগে

দড়িতে পোষা কচ্ছপ বেঁধে বেড়াতে বেরোলেন এক তরুণী!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দু’টি কচ্ছপ নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছেন এক তরুণী। কচ্ছপ…

% দিন আগে

সুন্দর এক শীতের সকাল

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ৭ পৌষ ১৪৩১…

% দিন আগে

ওজন কমাতে কোনটি বেশি উপকারী জগিং নাকি সাইকেল চালানো?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিটনেস প্রশিক্ষকরা বলেছেন, হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানো, জগিং, সাইকেল চালানো কিংবা সাঁতার…

% দিন আগে

মৌলিক গান নিয়ে আবার গানে ফিরলেন তানভীর তমাল [ভিডিও]

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রায় একযুগেরও বেশি সময় পর মৌলিক গান নিয়ে মিউজিক ডোমেইনে…

% দিন আগে

২৪ বছর সংসার করার পর বিচ্ছেদ: ৪৯ বছর পর প্রাক্তন স্ত্রীকে আবারও বিয়ে ৯৪ বছরের বৃদ্ধের!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ১৯৫১ সালের নভেম্বর মাসে বিয়ে হয় ফে ও রবার্টের। বিয়ের…

% দিন আগে