দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের কয়েক কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার কারণে তারা সাইবার ক্রাইমসহ নানা ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা।

সাইবার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য তার একান্তই গোপনীয়। তার এই তথ্য নিয়ে অন্য কেও ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া, ভুয়া সিম রেজিস্ট্রেশন, অবৈধ লেনদেন, জমি কেনাবেচা, সাইবার হুমকিসহ নানা অপরাধমূলক কাজেও যুক্ত হতে পারেন। এতে করে আর্থিক, সামাজিক ও আইনিভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন ভুক্তভোগীরা। এছাড়াও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের তথ্য ফাঁস হলে অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিকভাবে রাষ্ট্রও হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
গত শনিবার বাংলাদেশ সরকারের একটি ওয়েবসাইট থেকে দেশের লাখ লাখ নাগরিকের নাম, ফোন নম্বর, ই-মেইল ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচিতি নম্বরসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার খবর প্রকাশ পায়। বিষয়টি প্রথম বুঝতে পারেন দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান বিটক্র্যাক সাইবার সিকিউরিটির গবেষক ভিক্টর মারকোপাওলোস। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত ২৭ জুন হঠাৎ করেই তিনি ফাঁস হওয়া তথ্যগুলো দেখতে পেয়েছেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই সংবাদ দেখার পর অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। প্রত্যেকের মনেই একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে যে, তথ্য ফাঁস হলে তারা কী কী ঝুঁকিতে আসলে পড়তে পারেন।
এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনালের (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, নাগরিকের ফাঁস হওয়া যে কোনো ধরনের তথ্যই অপব্যবহার হতেই পারে। এইসব তথ্য দিয়ে কোনো অপরাধী অন্য কারো নামে ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলতে পারেন, সিগনেচার নকল করতে পারেন, সিম রেজিস্ট্রেশন করে সেগুলো দিয়ে অপরাধ করতে পারেন। অপরাধীকে শনাক্ত করতে গেলে ওই নিরীহ সাধারণ নাগরিক ফেঁসেও যেতে পারেন। এছাড়াও অন্যান্য কাজেও সাইবার অপরাধীরা এইসব নাগরিকের বায়োডাটা ব্যবহার করতে পারেন।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ থেকে এগুলো ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করেন ড. সাখাওয়াত। তবে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ১৭১টি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য ভাণ্ডার আদান-প্রদানের যে চুক্তি হয়েছে সেটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ মন্তব্য করে ব্রিগেডিয়ার জেনালের (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ওই ১৭১টি সংস্থার সাইবার সিকিউরিটি ব্যবস্থা কতোটা সুরক্ষিত তা কী কখনও যাচাই করেছে ইসি? না করে তাদের কীভাবে এসব দিয়ে দিলো? তিনি দ্রুত সিকিউরিটি ওয়াচ ইনস্টলের পরামর্শ দিয়েছেন।
সংবাদ মাধ্যমকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ ড. জাহিদুর রহমান বলেন, কোনো নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস কিংবা পাচার হওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তবে যে ধরনের ডেটা গিয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি, এগুলো মূলত একজন মানুষের পার্সোনালি আইডেন্টিফাইয়েবল ইনফরমেশন। ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ফোন নম্বর ইত্যাদি দিয়ে খুব সহজেই ওই ব্যক্তি ও তার অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব। তাকে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইলও করতে পারে। ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ তুলে নিতে পারে, ফোন দিয়ে হুমকিও দিতে পারে, আবার চাঁদাও চাইতে পারে। তবে আমার মনে হয় নাগরিকদের আঙ্গুলের ছাপ যায়নি। আরএনএ ও ফিঙ্গারপ্রিন্টের মতো ডেটা ফাঁস হলে সেটি হবে উদ্বেগের বিষয়।
এইসব তথ্য ফাঁস রোধকল্পে তিনি সিকিউরিটি ওয়াচ ইনস্টল, আইসোলেটেড পদ্ধতির ব্যবহার, লগ ফাইল করাসহ যাদের কাছে এই তথ্য রয়েছে তাদের পাসওয়ার্ড সিকিউরড এবং তা খুললে ঊর্ধ্বতনদের কাছে নোটিস আসবে- এমন সিকিউরিটি ইনস্টল করার পরামর্শ দিয়েছেন।
অপর একজন বিশেষজ্ঞ সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস (সিসিএ) ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মুশফিকুর রহমান বলেন, যে সব তথ্য ফাঁস হয়েছে এগুলো মূলত ব্যাংকের লেনদেনে, ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক সময় ব্যবহৃত হতে পারে। এছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশের কাছে ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালাদের তথ্যও রয়েছে। সেইসব তথ্য দেখলে সহজেই বোঝা যাবে যে, কার আর্থিক অবস্থা আসলে কেমন, তিনি বিত্তশালী কি না (বাড়ির মালিক কিনা)। এইসব তথ্য অপরাধীদের কাছে গেলে তারা খুব সহজেই নানা কায়দায় নাগরিককে হুমকি-ধামকি দিয়ে চাঁদাও চাইতে পারে। প্রায় সময় অনেকে এমন চাঁদাবাজির ফোন পায় বলেও শুনেছি।
এদিকে গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নিরাপত্তাবিষয়ক আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা শেষে বিষয়টি সম্পর্কে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের সঙ্গে যদি কেও জড়িত থাকে বা সহায়তা করে, তবে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাওকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, কীভাবে এইসব তথ্যগুলো ফাঁস হলো তা আমরা খতিয়ে দেখছি। আগে আমাদের শনাক্ত করতে হবে যে, ঘটনা আসলে কী ঘটেছে, কতোখানি ফাঁস হয়েছে, সেগুলো তো আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে। তারপর যদি দেখি যে, কেউও এটা করেছে বা সহায়তা করেছে, তাহলে অবশ্যই আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। সেই জায়গায় কাওকে ছাড় দেওয়া হবে না। গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নিরাপত্তাবিষয়ক আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের এইসব কথা বলেন তিনি। সূত্র: ভোরের কাগজ।
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org