দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমানে চারিদিকেই জ্বরের প্রকোট দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের বেশি জ্বর হচ্ছে। জ্বর হলেই ডেঙ্গু হবে তেমনটি কিন্তু নয়। তারপরও জ্বর হওয়ার তিনদিন পর অবশ্যই রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর একটি আপরাধিক রোগ, যা ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে উৎপন্ন হয়। এই রোগ একটি প্রজনন জনিত অর্থাৎ এডিস মশা দ্বারা ছড়ানো হয় এবং এর সাথে মশা প্রজননের সম্পর্কও বিশেষভাবে জড়িত। জড়িত মশা মূলত এডিশ মশা এবং এটি এশিয়া মহাদেশেই বেশি দেখা যায়। যার মধ্যে আবার বাংলাদেশে এই প্রকপ ব্যাপক। ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান লক্ষণই হলো জ্বর, মাংসপেশী ব্যথা, জ্বরের সাথে অন্যান্য লক্ষণ যেমন মাথায় চাপাব্যথা এবং চোখে লাল দাগের উত্থানও হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর শুধুমাত্র উপসর্গ ছড়াতে পারে না, এটি সাধারণ জ্বরের সাথে সম্পর্কিতও হতে পারে। অধিকাংশ মানুষ ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখায় না বা এটি সাধারণ জ্বরের মধ্যে মিশে যায় এবং অনেকেই এটি বেশি গুরুত্বই দেন না যে কারণে সমস্যা এক সময় প্রকট আকার ধারণ করে। তবে, যখন কেউ জ্বরে আক্রান্ত হয়, তার ডেঙ্গু জ্বরের সহীত অন্যান্য জ্বরের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।
উপসর্গ না থাকলেও, ডেঙ্গু টেস্ট প্রয়োজন হতে পারে কারণ হলো এটি জ্বরের অন্যান্য কারণের সাথে মিলে থাকতে পারে এবং এর সঠিক নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ডেঙ্গু জ্বর নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় টেস্ট হলে ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রতিক্রিয়ার উপরই ভিত্তি করে হয়। এই টেস্টটির মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বরের নির্ধারণ করা হয় এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ডেঙ্গু পজিটিভ হলে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ দেওয়া হয় না। তবে স্যালাইন দেওয়া হয়। বেশি বেশি লিকুইড খাওয়ার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
ডেঙ্গু জ্বর একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যাও হতে পারে, তবে আপনি যদি যে কোনো জ্বরে আক্রান্ত হন তা হলে ডেঙ্গু টেস্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। কারণ আপনি টেস্ট না করলে বুঝতেই পারবেন না কোনটি সাধারণ জ্বর আর কোনটি ডেঙ্গু জ্বর। তাই সময় থাকতে আপনাকেই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ সাম্প্রতিক সময় ডেঙ্গু আমাদের দেশে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিপূর্বে শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকাতে এই রোগের প্রকোপ সীমাবদ্ধ ছিলো কিন্তু এখন অন্যান্য জেলা-উপজেলা শহরেও ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। তাই জ্বর হলে আগেই প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ না দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org