দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ডেঙ্গু আমাদের দেশের খুবই পরিচিত রোগের মধ্যে একটি। প্রতিবছর বর্ষার সময়ে আমাদের দেশে ডেঙ্গুর প্রভাব চোখে পড়ে যার ফলে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়ে। কিন্তু এই বছর ডেঙ্গুর এই মহামারিতা যেন দ্বিগুণে পরিণত হয়েছে। সতর্ক হোন- ডেঙ্গু থেকে বাঁচুন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের একটি জরিপে বলা হয়েছে, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৭৭৬৩জন মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। আরো জানা যায়, ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৭৩জন।এই ডেঙ্গুর মহামারিতা ও লক্ষণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত ও সচেতন। কিন্তু সম্প্রতি সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো, এ বছর ডেঙ্গু জ্বরের ধরন ও লক্ষণে বেশকিছু পরিবর্তন এসেছে যা আমাদের ধারণার বাইরে। যার ফলে যারা এই রোগ খুব সহজে শনাক্ত পারতেন এই পরিবর্তনের ফলে তা এখন সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ কারণে জ্বর হলে রোগীরা এটিকে স্বাভাবিক জ্বর মনে করে চিকিত্সকের কাছে যেতে দেরি করছেন এবং এই কারনে রোগীর ঝুকি দিনে দিনে বেড়ে চলেছে।
এই ডেঙ্গুর লক্ষণ পরিবর্তনের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চিকিৎসকরাও বিপাকে পড়েছেন। এই দুই থেকে তিন দিনের জ্বরের কারণে অনেক ডাক্তার এটিকে সামান্য জ্বর মনে করে রোগীদের সাময়িক চিকিৎসা প্রদান করছেন যার ফলে আমাদের দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ মহামারী আকার ধারন করেছে।
এই ডেঙ্গু থেকে বাঁচার জন্য আমাদের সকলের বিশেষ করে রোগীদের সচেতন হতে হবে এবং সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ধরুন আপনার জ্বর হয়েছে তার ৩ থেকে ৪ দিন পর আপনি ডাক্তারের কাছে গেলেন । ডাক্তার সময় ও পরিস্থিতি মোতাবেক আপনাকে Dengue NS1 antigen test করতে দিলো, এবং সাথে Complete Blood Count (CBC) ও করতে দিলো যা আপনার ডেঙ্গুর পরিক্ষা। আপনার অলসতা আর ব্যস্ততায় আপনি টেস্ট করালেন জ্বরের ৫ম দিনে জার ফলে পরীক্ষায় আপনার ডেঙ্গু ধরা পরে না। অপরদিকে আপনার সিবিসিতে প্লেটলেট ৩০-৩৫হাজার/কিউমিমি, হেমাটোক্রিট ৪৫% প্রায়। ডাক্তার এর সাথে সাথে আপনারও চোখ কপালে ওঠার দশা। তাহলেকি ডাক্তার আপনাকে ভুল টেস্ট আর ভুল চিকিৎসা দিলো? না!
ভুল ডাক্তারের নয় ভুল আপনার নিজের। অবাক হলেন? তাহলে দয়াকরে শুনুনঃ
ডাক্তার দ্বারা নির্ধারিত টেস্ট Dengue NS1 Antigen পরীক্ষা জ্বরের ঠিক প্রথম ৩দিন এর মধ্যে পজেটিভ আসে যা আপনি করিয়েছিলেন ৫ম দিনে। এই সময়ের তারতম্যের কারনে যদি আপনার ডেঙ্গু হয়েও থাকে তা আসবে নেগেটিভ। আমরা অনেকেই ৫ম দিনের পরিক্ষার রিপোর্ট ৮ম/৯ম দিনেও দেখাই যার প্রভাবে আমাদের ডেঙ্গুর সঠিক চিকিৎসায় আসে নানান জটিলতা।
এই ধরনের জটিলতা যাতে না হয় তাতে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের ডাক্তারকে একদম সঠিক একজ্যাক্ট সময় বলতে হবে যে জ্বর কয় দিনের অথবা কত তারিখের। এর ফলে ডাক্তার আমাদের কোন টেস্ট করালে আমরা সঠিক তথ্য পাব তা বলতে পারবেন। সঠিক পরিক্ষার মাধ্যমে আমরা অনায়াসে আমাদের রোগের সঠিক ধারনা পাবো। জ্বরের ৪ থেকে ৬ দিন পর আমাদের Dengue IgG & IgM পরীক্ষা করাতে হয় যা কিছুটা ব্যয়বহুল। তাই আমাদের সকলের উচিত জ্বর হওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ ও সেবা গ্রহণ করা। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গেলে কোন প্রকার আতঙ্কিত না হয়ে রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দিন। ডেংগু রোগীকে ডাক্তারের কথামত নিয়মিত CBC পরীক্ষা করাতে হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় আমদের একটি বিষয় অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে যে রিপোর্ট দেখানোর সময়ে রোগীকে সাথে করে নিয়ে আসতে হবে। অনেক সময় সুধু রিপোর্ট দেখে ডেঙ্গু রোগীর অবস্থা বঝা যায় না।
আমরা আগেই জেনেছি যে বর্তমানে ডেঙ্গু এসেছে নতুন রুপে সুতরাং ডাক্তার আপনাকে CBC পরীক্ষার পাশাপাশি কিডনি ফেইলার টেস্ট, এসিজি টেস্ট আরো নানান টেস্ট করতে দিলে ঘাবড়াবেন না। সম্প্রতি এক্সপ্যান্ডেড ডেংগু সিন্ড্রোম এর ফলে খুব সহজেই অরগান ফেইলার, প্লেটলেট কমে রক্তক্ষরণ, একিউট রেস্পিরেটরি সিন্ড্রোম, প্লুরাল ইফিউশন লিভার ফেইলার, কিডনি ফেইলার, সহ আরো নানান রকমের নিউরোলজিকেল সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
সম্প্রতি আমাদের দেশে ডেঙ্গুর প্রকপ বাড়লেও আমাদের দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার পার্শ্ববর্তি অনেক দেশের তুলনায় কম। সর্বোপরি আমাদের সকলকেই সাবধানে থাকতে হবে। আমাদের বাড়িঘর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে যাতে আমাদের আশেপাশে পানি জমাট বাধতে না পারে। শিশুদের দিকে আমাদের বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। জ্বর হওয়ার সাথে সাথে আমাদের ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।