দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পুরো বিশ্ব জুড়ে কোটি কোটি মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে কোভিড ১৯ বা করোনা মহামারি; শিশুরাও বাদ যায়নি। এই মুহূর্তে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে অন্তত ৩৩ কোটি ৩০ লাখ শিশু।
অর্থাৎ বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রতিদিন মাত্র ২৩৫ টাকার (২ দশমিক ১৫ ডলার) মধ্যে খাদ্য, বস্ত্র এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হয় এইসব শিশুদের। আনুপাতিক হিসেবে এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রতি ৬ জন শিশুর এক জন শিশু চরম দারিদ্র্যের শিকার।
বুধবার জাতিসংঘের শিশু অধিকার এবং নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মহামারিপূর্ব সময়ের তুলনায় বর্তমানে বিশ্বে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী শিশুদের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩০ লাখ।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল এই প্রতিবেদনের সম্পর্কে এক বিবৃতিতে বলেন, করোনা মহামারি, সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক ধাক্কা সবকিছু মিলে উদ্ভূত যে সংকট, সেটিই কোটি কোটি শিশুকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম ঋণ এবং আর্থিক সহায়তাদানকারী সংস্থা বিশ্বব্যাংক এই পরিস্থিতিকে ‘অসহনীয়’ বলেও উল্লেখ করেছে। বিশ্বব্যাংকের বৈশ্বিক দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সমতা বিধান বিভাগের পরিচালক লুইস ফেলিপ লোপেজ কালভা বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, পুরো বিশ্ব জুড়ে ৩৩ কোটি ৩০ লাখ শিশু চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। তারা কেবল মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না এমনটি নয়, সম্মান ও একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা থেকেও এইসব শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে। এই অবস্থা রীতিমতো অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
ইউনেস্কোর প্রতিবেদন অনুসারে জানা যায়, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী এইসব শিশুদের একটি বড় অংশই আফ্রিকার সাব-সাহারান অঞ্চলের বাসিন্দা। এই অঞ্চলভুক্ত লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়া, বুরুন্ডি, বেনিন, বুরকিনা ফাসো, কেনিয়া, উগান্ডা, সুদানসহ ৮টি দেশের মোট শিশুর ৪০ শতাংশই চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে।
উল্লেখ্য, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সব শিশুকে চরম দারিদ্র্য অবস্থা থেকে মুক্তির লক্ষ্যমাত্রা নেয় জাতিসংঘ। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সেই লক্ষ্য অধরায় থেকে যাবে বলে মনে করছে ইউনিসেফ।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল তার বিবৃতিতে আরও বলেন, আমরা এই শিশুদের এই অবস্থায় কখনও ফেলে রাখতে পারি না। অবশ্য এক্ষেত্রে আমাদের চাওয়ার চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো বিভিন্ন দেশের সরকারের সদিচ্ছা। সরকার যদি তার নীতিতে শিশুদের দারিদ্র্যমুক্তকরণের গুরুত্ব বৃদ্ধি করতেত পারে, একমাত্র সেই ক্ষেত্রেই এই সংকটের সমাধান হওয়া সম্ভব।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org