দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আঠারো শতকে উদ্ভাবিত চলন্ত সিঁড়ি বা এসকেলেটর এর কাজ হচ্ছে এক তলা থেকে অন্য তলায় মানুষকে উঠতে সহায়তা করা। বর্তমানে বড় বড় মার্কেট, শপিংমলগুলোতে এসকেলেটর প্রয়োজনীয় আনুষাঙ্গিক। প্রয়োজনীয় হলেও নিরাপদ নয় এসকেলেটর। সতর্ক না থাকলে এর মাধ্যমে ঘটে যেতে পারে বিস্ফোরণ, অগ্নিকাণ্ড, পা আটকে যাওয়ার মত দুর্ঘটনা।
ভার উত্তোলন তথা এক তলা থেকে অন্য তলায় গমন করার জন্য এই অভিনব যন্ত্রটির পেটেন্ট করা হয় ১৮৯২ সালে। গতিবিদ্যার নিয়ম মেনে ঘূর্ণায়মান রোলার শিকলকে বৈদ্যুতিক মোটরের মাধ্যমে সচল রাখা হয়। যার ফলে সিঁড়ি এক তলা থেকে অন্য তলায় উপরের দিক উঠতে পারে আবার নিচের দিকে নামতে পারে। অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও পুরনো সেই ডিজাইন এবং কার্য পদ্ধতিতে তেমন কোন নতুনত্ব আনা হয় নি। তাই এসকেলেটর যখন সচল অবস্থায় থাকে, তখন উঠতি প্লাটফরমের শেষ ধাপে কাপড়, লাগেজের অংশ বিশেষ কিংবা শরীর পর্যন্ত আটকে যেতে পারে। শরীরের অংশ বিশেষ আটকে যাবার ফলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ফলে ব্যক্তি চরম পর্যায়ে আহত হতে পারে। অঙ্গহানীর ঘটনাও বিরল নয়।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এসকেলেটর সংক্রান্ত দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। পুরনো ঘটনা অনুসন্ধান করলে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে এসকেলেটর এর মাধ্যমে সবচেয়ে ভয়ংকর দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঐ বছর লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনের এসকেলেটর বিস্ফোরিত হয়। ৩১ জন মানুষ নিহত হয়। দুর্ঘটনাটি তদন্তে বের হয়ে আসে, সামান্য কাগজ এবং ক্ষতস্থান ব্যান্ডেজ করার কাপড় এই যজ্ঞের জন্য দায়ী। পরবর্তী সময়ে দুর্ঘটনা এড়াতে ইমার্জেন্সি স্টপ বাটন, টুকরো বর্জ্য সংগ্রহকারক ব্রাশ, পানি ছড়ানো ইত্যাদি নানা ব্যবস্থা সংযুক্ত করা হয়। তারপরও মূল নকশাগত পরিবর্তন আনা হয় নি।
দেখা যায়, কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই সিঁড়ি সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় প্রতি বছর ১২ হাজার এর কাছাকাছি লোক মারা যায়। এতে প্রতীয়মান হয় যে, এসকেলেটর কতটা বিপদজনক হতে পারে।
সিটি ইউনিভার্সিটি লন্ডন এর ডেভিড চ্যান উদ্ধৃতি থেকে জানা যায়, এসকেলেটর এর সনাতনী নকশার আমূল কোন পরিবর্তন হয় নি। নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভালো পরিবর্তন আনা কষ্টকর। এসকেলেটর মার্কেট সারা পৃথিবীতে চারটি কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলত নতুন কিছু করা দুঃসাধ্য।
২০১১ সালে চ্যান এবং মেকানিক্যাল প্রকৌশলী জ্যাক লেভি, লেভিটেটর নামে নতুন এক প্রকার এসকেলেটর পদ্ধতি উন্মোচন করেন। এর প্রধান সুবিধা হচ্ছে. ওঠা এবং নামার জন্য আলাদা করে দুটি এসকেলেটর প্রয়োজন হয় না। প্রচলিত এসকেলেটরগুলোর সঙ্গে এর মূল পার্থক্য হলো, প্রচলিতগুলোতে ধাপগুলো পর্যায়ক্রমে ভেতরে ঢুকে যায়। ফলে শাড়ি, কাপড় ইত্যাদি ভেতরে ঢুকে যেতে পারে। লেভিটেটর এর ধাপ ভেতরে ঢুকে যাবার আগে, উপরের দিকে ঠেলে দেয়। যা কোন কিছু পেঁচিয়ে যাওয়া বা আটকে যাওয়া প্রতিহত করে।
দেখা যাচ্ছে, এসকেলেটর এর চমৎকার নিরাপদ বিকল্প হতে পারে লেবিটেটর। বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান হারে বড় বড় বিল্ডিং, শপিং মল, মার্কেট, আবাসিক ভবন তৈরি হচ্ছে, সেখানে নিরাপদ এসকেলেটর স্থাপন করা উচিত। এসকেলেটর ব্যবহার করে উঠা এবং নামার সময় সবাইকে সচেতন থাকা প্রয়োজন। শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
তথ্যসূত্র: Popsci